মূল্যস্ফীতির উচ্চমূল্যে সংকটে জার্মানির নিম্ন মধ্যবিত্ত
১৬ অক্টোবর ২০২২
জার্মানিতে জ্বালানির দাম অনেক বেড়েছে৷ মূল্যস্ফীতিও মানুষের বেতন খেয়ে ফেলছে৷ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সংকটে পড়ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত৷
বিজ্ঞাপন
ইনস্টিটিউট অফ জার্মান ইকোনমির হিসেবে ২০১৯ সালে একজন ব্যক্তির আয় কর ও চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়াম দেয়ার পর মাসে ১,৭০০ থেকে ৩,১০০ ইউরো (এক লাখ ৭০ হাজার থেকে তিন লাখ ছয় হাজার বাংলাদেশি টাকা) হলে তাকে মধ্যবিত্ত বলা হতো৷ আর দুই সন্তানসহ চারজনের পরিবারের মাসিক আয় ৩,৫৪০ থেকে ৬,৬৪০ ইউরো (সাড়ে তিন লাখ থেকে সাড়ে ছয় লাখ বাংলাদেশি টাকা) হলে তারা মধ্যবিত্ত বলে গণ্য হতেন৷
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমতা ও সামাজিক নীতি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানের প্যাট্রিক জাখভেহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ওইসিডির হিসেবে জার্মানির প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত (যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির একেবারে শুরুর দিকে আছেন) শ্রেণিতে পড়েন৷ মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট তাদের উপর অনেক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
ঋণদাতা ও দেউলিয়াত্ব নিয়ে পরামর্শ দেয়া কোম্পানি ‘ডিয়াকোনিশেস ভ্যার্ক' ও ‘জার্মান প্যারিটি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন অফ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া'ও সেরকম আভাস দিয়েছে৷ তারা দেখেছে যে, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আর পেরে ওঠা যাবে না বলে মনে করছে অনেক মানুষ৷
ঐ দুই সংস্থা জানাচ্ছে, সরকারি বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ব্যক্তিরা সামাজিক সংকটের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে তারা হতাশাগ্রস্ত ও আতঙ্কিত মানুষকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে চান৷
এই অর্থ দিয়ে স্বল্প খরচে গণরিবহণে ভ্রমণ এবং জ্বালানি সরবরাহ কোম্পানিগুলো যেন ক্রেতাদের কম খরচে তেল, গ্যাস ও কয়লা সরবরাহ করতে পারে সেজন্য কর ছাড় দেয়া হবে৷
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর আরো দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার৷ এর একটি ছিল পেট্রোলের উপর করছাড় এবং অন্যটি নয় ইউরোর টিকেটে গোটা জার্মানি ভ্রমণের সুযোগ৷ এই দুই প্যাকেজেরই মেয়াদ শেষ হয়েছে আগস্টে৷
লিসা হ্যানেল/জেডএইচ
জার্মানি : ধনী দেশের গরিবেরা যেমন
করোনা মহামারির সময় ধনী আর গরিবের ব্যবধান বাড়তে না দেয়ার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও জার্মানিতে এ ব্যবধান বেড়েছে৷ এ দেশের মানদণ্ডে গরিবদের আরো গরিব হওয়ার নমুনা দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
ধনী দেশে পথের পাশে দরিদ্র মানুষ
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানি৷ এ দেশেও আছে গৃহহীন মানুষ৷ করোনা মহামারির সময় গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
ব্যয় কমিয়ে বাঁচার চেষ্টা
করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জ্বালানি এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে৷ সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে জার্মানির অনেক মা এখন নিজে একবেলা না খেয়ে থাকেন বা খেলেও কম খান৷ অবসর ভাতায় চলতে পারেন না বলে অনেক প্রবীণ বোতল কুড়ান৷ তা বিক্রি করে সামান্য কিছু অর্থ আসে, তাতেই তারা খুশি!
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
দারিদ্র্য বাড়ছে জার্মানিতে
জার্মানিতে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে- এ শুধু বিশ্লেষকদের অনুমান নয়, পারিট্যাটিশে ভলফারট্সফারবান্ড নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও বলছে এ কথা৷ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ মুহূর্তে জার্মানির এক কোটি ৩৮ লাখের মতো মানুষ হয় দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছেন, নয়তো দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন৷
ছবি: imago images/epd
২০তম ধনী দেশ জার্মানি
২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে বিশ্বের ২০ তম ধনী দেশ হয়েছিল জার্মানি৷সে বছর জার্মানির মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ছিল ৫২ হাজার ২০০ ইউরো (৫০ হাজার ৭০০ ডলার)৷ এক লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ ইউরো মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি নিয়ে সবচেয়ে ধনী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল লুক্সেমবুর্গ৷ সবচেয়ে কম মাত্র ২৭০ ইউরো বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি ছিল বুরুন্ডির৷ সে কারণে ২০২১ সালে আফ্রিকার এই দেশটিই ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম৷
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
জার্মানিতে দরিদ্র কারা
কোনো ব্যক্তির মাসিক আয় এক হাজার ১৪৮ ইউরোর চেয়ে কম হলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নীচে আছেন বলে ধরে নেয়া হয়৷তবে এক সন্তান আছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে এক হাজার ৪৯২ ইউরো হতে হয়, না হলে তাকেও দারিদ্র্যসীমাধীন বলে ধরে নেয়া হয়৷ দুই সন্তানের বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে আয়সীমাটা দু হাজার ৪১০ ইউরো, অর্থাৎ আয় তার চেয়ে কম হলে জার্মানির মানদণ্ডে তারাও দারিদ্র্যসীমার নীচে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট মানুষ
জার্মানিতে কেউ চাকরি না পেলে বা কাজ করতে না পারলে সরকার তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়৷ সেই প্রণোদনার অংশ হিসেবে ৪৪৯ ইউরো দেয়া হয় সারা মাসের খাদ্য, বস্ত্র, গৃহস্থালী নানা পণ্য কেনা এবং ঘরের যাবতীয় বিল পরিশোধের জন্য৷এছাড়া প্রতিটি শিশুর জন্য দেয়া হয় (বয়সভেদে) ২৮৫ থেকে ৩৭৬ ইউরো৷ কিন্তু দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে, ওলাফ শলৎস সরকার এ ভাতা ৪৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০৩ ইউরো করার কথা ভাবছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
অপ্রতুল সরকারি উদ্যোগ
সমাজ বিজ্ঞানী এবং দারিদ্র্য গবেষক ক্রিস্টোফ বুটারভেগে মনে করেন, মাসিক সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা কমপক্ষে ৬৫০ ইউরো না করলে দুর্মূল্যের এ বাজারে অনেক মানুষের জন্য তিনবেলা পর্যাপ্ত খাওয়া কঠিন হবে৷প্রসঙ্গত, জার্মানিতে রুটি, দুধ, ফল এবং শাকসবজির দাম ২০২০ সালের তুলনায় এ বছর শতকরা ১২ ভাগেরও বেশি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER
বার্ধক্যে দারিদ্র্যের জ্বালা
বের্টেলসমান ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে প্রবীণদের মধ্যেও দারিদ্র্য বাড়ছে৷ কয়েক দশক কাজ করে যারা মাসিক অবসর ভাতায় আয়েশে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের কেউ কেউ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে খণ্ডকালীন কাজে যোগ দিচ্ছেন৷ কাজ করেও নারীরা কুলাতে পারছেন না৷ পুরুষদের চেয়ে পারিশ্রমিক কম বলে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে তাদের৷
ফুলটাইম জব, অর্থাৎ দিনে আট ঘণ্টা কাজ করেও সেই আয়ে সংসার চালাতে পারছেন না- এমন মানুষের সংখ্যাও জার্মানিতে বাড়ছে৷এতদিন সন্তানহীন কোনো মানুষ ঘণ্টায় ১২ ইউরো হিসেবে দিনে আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে মোট ৪০ ঘণ্টা কাজ করতেন৷ বিনিময়ে প্রতি মাসে পেতেন এক হাজার ৪৮০ ইউরোর মতো৷ দিব্যি চলে যেতো তাতে৷এখন তাতে চলছে না বলে অনেকেই আরেকটা খণ্ডকালীন কাজ করছেন৷