1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা কারা পায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ নভেম্বর ২০২৪

নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও মূল্যস্ফীতির চাপ কমছে না, বরং বাড়ছে৷ অক্টোবরে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)৷

বাংলাদেশের কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা চলছে
বেশকিছু পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক তুলে নিয়েও দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে নাছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমছে না৷ এদিকে, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা৷ চাপে পড়ছে নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষ৷

এমন পরিস্থিতিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে৷ ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না৷ মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক৷''

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে আরো আট মাস লাগবে৷''

মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি

বিবিএস এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশ হয়েছে৷ খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল ও সবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অক্টোবরের মূল্যস্ফীতি গত তিন মাসের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ৷ এর আগে সেপ্টেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯.৯২ শতাংশ ও আগস্টে ছিল ১০.৪৯ শতাংশ৷ বিবিএস বলছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে, যা জুলাইয়ে ছিল ১০.৪০ শতাংশ৷ অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯.৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে ছিল ৯.৫ শতাংশ৷

শুল্ক প্রত্যাহারসহ আরো যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সুবিধা নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা: মো. নুরুল আমীন

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ প্রায় দুই বছর ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে৷ ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের ওপরে আছে৷ আর গত বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯.৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯.৯২ শতাংশ৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন তারা দায়িত্ব নেয়ার আগে মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ন্ত্রিত ছিল৷ কৃত্রিমভাবে দেওয়া হতো হিসাব৷ বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দিচ্ছে৷

সরকারের উদ্যোগ

মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এরইমধ্যে পেঁয়াজ ও ডিমসহ আরো কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে৷ কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই৷ দুই অংকে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে সরকার আমদানি পর্যায়ে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু আর ভোজ্যতেলের শুল্ক কমিয়েছে৷ গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে৷

আর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন তুলে দিয়েছে৷ তুলে দেয়া হয়েছে সিঙ্গেল বরোয়ার (ব্যক্তির একক ঋণ) লিমিট৷ বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদ (রেপো) হার৷ অক্টোবরে রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ৷ বেড়েছে প্রবাসী আয়৷ ফলে ডলার সরবরাহ বেড়েছে৷ কিন্তু তারপরও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে৷

কেন এই পরিস্থিতি?

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘‘এলসি মার্জিন তুলে দেয়ায় আমদানি বাড়বে এবং সহজ হবে৷ কারণ এলসি খুলতে এখন আর আগের মতো এককালীন অর্থ লাগবে না৷ কয়েক পর্যায়ে শোধ করা যাবে৷ আর ব্যক্তি ঋণ সীমা তুলে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি ঋণ পাবেন৷ অন্যদিকে নীতি সুদ হার বাড়ানোয় ব্যাংক কম টাকা ঋণ করবে৷ এগুলো মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যাকিং টুলস৷ কিন্তু এগুলো বাংলাদেশে কাজ করে না৷ কারণ এখানে বাজারের হিসাব আলাদা৷''

তার কথা, ‘‘আসলে বাজারে এখনো সিন্ডিকেট আছে৷ পণ্য থাকার পরও সরবরাহ চেইনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়৷ নয়তো আলুর এত দাম বাড়ে কীভাবে? ৮০ টাকা কেজিতে আলু খেতে হবে এটা তো পাগল আর অন্ধও বিশ্বাস করে না৷''

‘‘বাজারে তো পণ্যের কোনো সংকট দেখি না৷ তারপরও তো পণ্যের দাম কমে না৷ বাজার মনিটরিং শক্তভাবে না করে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা কাজে আসছে না৷ শুল্ক প্রত্যাহারসহ আরো যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সুবিধা নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা৷ ক্রেতাদের কোনো লাভ হচ্ছে না,'' বলেন তিনি৷

কনজ্যুমারস অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘‘বাজার মনিটরিং-এর কোনো উন্নতি হয়নি৷ আগে যেমন ছিলো তেমনই আছে৷ মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি টিম কাজ করছে৷ তার প্রভাব বাজারে নাই৷ যা করা হচ্ছে তা লোক দেখানো৷ টিসিবির লাইন দেখলেই বোঝা যায় বাজারের অবস্থা৷ খবরেই তো দেখলাম কেউ কেউ গয়না বিক্রি করে খাদ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন৷''

তিনি প্রশ্ন করেন, সরকার যে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে তার প্রভাব বাজারে নেই কেন, কারা এর ফায়দা লুটছে? এনবিআর এর এটা দেখা উচিত বলে মনে করেন এস এম নাজের হোসাইন৷ ‘‘আমদানি করা পণ্যের দাম বেশি থাকায় অভ্যন্তরীণ পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে,'' বলেন তিনি৷

বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই বললেই চলে: অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে৷ বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে৷ তাদের আয়ের অধিকাংশই খাবার কিনতে ব্যয় হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি খাদ্যপণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলু, ব্রয়লার মুরগি, ডিম চাল এগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে৷ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে তার শিকার হয় নিম্ন এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ৷''

তার কথা, ‘‘সরকার যে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক তুলে নিয়েছে সেই টাকা আমদানিকারকদের পকেটে যাচ্ছে৷ বাজার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়৷ পুরো ব্যবস্থা আগের মতোই৷ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে৷ বাজারে চাঁদাবাজি আছে৷ ফলে সরকারের কোনো চেষ্টাই সফল হচ্ছে না৷ বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই বললেই চলে৷''

সরকার যা বলছে

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনকে৷ তবে নিয়োগ দেয়ার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তিনিসহ দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে আসছে৷ তবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের কষ্ট বুঝি, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে কাজ করব৷ এটাকে দায়িত্ব হিসেবে দেখছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় ক্রময়ক্ষমতা বাড়েনি৷ কোনো মন্ত্রের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না৷ এজন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷''

আর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বুধবার পিকেএসএফ এর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ট্যাক্স কমিয়ে দিলাম, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না৷ মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক৷ প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না৷''

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দাম না কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্ট আছে৷ সেগুলো দেখতে হবে৷ মানুষের বাজারে কষ্ট হচ্ছে, ৫০০ টাকা নিয়ে গেল, দুমুঠো শাক, অন্যান্য ... কিন্তু টাকা শেষ হলো৷ আমি চেষ্টা করছি বাজারে দাম কমানোর জন্য৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ