1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া

২ আগস্ট ২০১১

নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং ফতুল্লা অঞ্চলে নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া সুলতানা৷ রাত-ভোর সাঁতরে প্রাণ রক্ষা করেছেন৷ যুদ্ধের সময় পাক সেনাদের চোখে ধুলো দিয়ে অস্ত্র পরিবহন করেছেন তিনি৷

Titel 2: Rokeya Shahabuddin, Narayangonj, Bangladesch Bildunterschrift: Rokeya Shahabuddin, Narayangonj, Bangladesch Text: Rokeya Shahabuddin, Freiheitskämpferin in 1971, Narayangonj, Bangladesch, Datum: 13.08.1994 Eigentumsrecht: Sayed Hassan, Narayangonj Bangladesch Stichwort: Rokeya, Shahabuddin, Narayangonj, Bangladesch, Freiheitskämpferin, 1971, Freedom, Fighter, War, Liberation, Bangladesh, 1971,
বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া শাহাবুদ্দীনছবি: Sayed Hassan

‘‘আমি বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় বেশ আদরের ছিলাম৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘদিন বাবা-মার সাথে দেখা না হওয়ায় একদিন চুপ করে বাসায় যাই৷ কিন্তু তারপরও খবর পেয়ে যায় রাজাকাররা৷ পাকিস্তান সেনারা আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে৷ মা চুপ করে আমাকে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন৷ পুকুর সাঁতরে অপরপাড়ে এক বাসায় উঠে দেখি সেখানেও পাক সেনা৷ সেখান থেকে আবার তড়িৎ গতিতে বুদ্ধি বের করে এদিক সেদিক দিয়ে আবারো পালিয়ে যেতে সক্ষম হই৷ আবার দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে অনেক দূরে গিয়ে উঠি৷ এমনকি দেখি যে, রাত পেরিয়ে প্রায় ভোর হয়ে গেছে৷ সেখানে একটি স্কুলের আয়া আমাকে ঠাঁই দিলেন৷ বললেন, আপা, আমার বাসায় আজকের দিন কাটান৷ তার বাড়িতে একদিন থেকে পরের দিন আবার সহযোদ্ধাদের সাথে যোগ দিই৷'' এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে নিজের প্রাণ বাজি রেখে লড়াইয়ের ঘটনা তুলে ধরলেন বীর সাহসী নারী নেত্রী রোকেয়া সুলতানা৷

বৈবাহিক সূত্রে তিনি রোকেয়া শাহাবুদ্দীন হিসেবে পরিচিত৷ ১৯৫৪ সালের ১৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে জন্ম রোকেয়ার৷ বাবা সিরাজুদ্দীন মিয়া এবং মা গুলবদন বেগম৷ ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রোকেয়া সুলতানা৷ সেই থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে রয়েছেন৷ ১৯৭১ সালে নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি৷ ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের সময় হাজির ছিলেন রোকেয়া এবং তাঁর সহকর্মীরা৷

রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সময় হাজির ছিলেন রোকেয়া এবং তাঁর সহকর্মীরাছবি: bdnews24

রেসকোর্স ময়দান থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জে যুদ্ধের দাবানল জ্বালতে থাকেন তাঁরা৷ ২৩ মার্চ এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা৷ ২৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়৷ এর পরদিন ধানমন্ডীর বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিয়ে আসেন রোকেয়া এবং তাঁর দল৷ পাক সেনারা ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জে হামলা চালালে মাজদাইর কবরস্থানের কাছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ৷ তবে পাক সেনাদের আধুনিক অস্ত্রের মুখে হার মানতে হয়েছিল মুক্তিসেনাদের৷

তবুও দমে যাওয়ার পাত্র নন তাঁরা৷ ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর নিজ নিজ অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের কাজ শুরু করেন৷ রোকেয়া সুলতানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ফতুল্লা থানার আলীর টেকে৷ সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন বীর প্রতীক গিয়াসউদ্দীন৷ ভারত গিয়ে অধিকতর প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রোকেয়াকে নারায়ণগঞ্জে থেকেই কাজ করার নির্দেশ দেন৷ তাই তিনি সোনারগাঁ, কাইটারটেক, ফতুল্লার বক্তবলী, নারায়ণগঞ্জের তল্লা, দেওভোগ, গোদনগর, মধ্যনগর এসব অঞ্চলে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে অবস্থান করে কাজ করতেন৷ গুপ্তচর হিসেবে খবর সংগ্রহ, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য সরবরাহ, ওষুধ, কাপড়, অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন রোকেয়া৷ এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন তিনি৷

স্বামী শাহাবুদ্দীনের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া সুলতানাছবি: Sayed Hassan

মুক্তিযুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি তুলে ধরলেন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘গোদনগর থেকে তল্লা ক্যাম্পে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয় আমাকে৷ একইসাথে অস্ত্র-শস্ত্রও বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলাম৷ আমাদেরকে প্রথমে নৌকা করে পার হতে হয়েছে৷ এরপর আমরা দু'টি রিক্সা করে যাচ্ছিলাম৷ আমি সামনের রিক্সায় ছিলাম৷ আর পরের রিক্সায় ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ সেই রিক্সার চালকও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন৷ রিক্সার নিচে বেঁধে রাখা ছিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷ আমাদের কথা ছিল, কোথাও কেউ ধরা পড়লে একটু দূরে গিয়ে অবস্থান নিয়ে সঙ্গীর খবর নিয়ে তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে চেষ্টা করবো৷ নারায়ণগঞ্জের মেট্রো হলের কাছে পাক সেনাদের ঘাঁটি ছিল৷ সেখানে আমার রিক্সা আটকে দিল পাক সেনারা৷ তবে সৌভাগ্যক্রমে দ্বিতীয়টাকে তারা আটকায়নি৷ সেটা কুমুদিনির কাছে এগিয়ে গিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিল৷ পাক সেনারা আমার পরিচয়পত্র দেখতে চাইল৷ আমার রেশনের কার্ড দেখালে তারা জিজ্ঞেস করল, আমি মুসলমান কি না৷ আমি নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিলে তারা আমার দেহ এবং রিক্সা তল্লাশি করার পর আমাকে ছেড়ে দিল৷ আমি সেই যাত্রা বেঁচে গেলাম৷ ছাড়া পেয়ে কুমুদিনির কাছে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তল্লা ক্যাম্পে পৌঁছলাম৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ