1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুদণ্ডই কি ধর্ষণের ‘সমাধান’?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ অক্টোবর ২০২০

দাবির মুখে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদণ্ড করতে যাচ্ছে৷ এজন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু শুধু মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে কি ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে?

ছবি: Samir Kumar Dey/DW

সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার দৃশ্যত বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবি ওঠে৷ কেউ কেউ ধর্ষকদের নপুংশক করার দাবিও তোলেন৷ আর সেই প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এজন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি সংশোনের প্রস্তাব আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে৷ আইনটি সংশোধন করে শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা হচ্ছে৷ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে৷ দেশে এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷

সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে৷ কিন্তু  শুধু মৃত্যুদণ্ডের বিধান করলেই ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন৷

ধারা ৯(২)-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দণ্ডনীয় হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন৷

ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:
যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যাতীত ১ [ষোল বছরের] অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যাতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করে, অথবা ২ [ষোল বছরের] কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হবেন৷

আরো অনেক অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে, তাই বলে কি সেইসব অপরাধ কমেছে?: মনজিল মোরসেদ

This browser does not support the audio element.

আইনে তাই শুধু ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার উদ্যোগ ইতিবাচক৷ কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে৷ আইনের ন্যায় প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি৷’’ তার মতে, এখনো তো যাবজ্জীবনের বিধান আছে৷ তাহলে শাস্তি হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের সমাধান করতে হবে৷ ধর্ষণ মামলার যে প্রচলিত তদন্ত এবং বিচার পদ্ধতি, তাতে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন৷ আবার এখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান হলে বিচারকরা তো আরো সতর্ক হবেন৷ কারণ, এটা জীবনের প্রশ্ন হয়ে উঠবে৷ তাই সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি চালু করতে হবে৷ অপরাধ প্রমাণ না করতে পারলে কঠোর আইন তো প্রয়োগ করা যাবে না৷

তার মতে, প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বা প্রতারণার কারণে যে ধর্ষণ মামলার উদ্ভব হয় তা সরাসরি ধর্ষণ আইনে না রেখে আলাদাভাবে প্রতারণার আইন করা যায়৷ আর আইন সংশোধন করে শুধু মৃত্যুদণ্ড নয়, আরো বিভিন্ন ধাপের শাস্তির বিধান করা দরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘কারণ ধর্ষকের সাথে ধর্ষণে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারীর একই শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না৷’’

যারা মৃত্যুদণ্ডের বিধানের জন্য আন্দোলন করছেন, তাদের কেউ কেউ আবার এই মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন৷ তারা মনে করেন, বিষয়টি শুধু আইনের মধ্যে রাখলে হবে না৷ মৃত্যুদণ্ড তারা চান, কিন্তু এর সঙ্গে শিক্ষা, সামাজিক ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন চান৷ পরিবর্তন চান দণ্ডবিধি ও সাক্ষ্য আইনে৷ তারা বলেন, আইনে ধর্ষণের শিকার নারীকে ‘পতিতা’ প্রমাণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ আর চাপমুক্তভাবে আইনের প্রয়োগ দরকার৷ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনীক রায় বলেন, ‘‘ধর্ষণ প্রতিরোধে সার্বিক বিষয়ে সংস্কার না এলে নতুন আরেকটি খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ তখন ধর্ষণের সাথে ধর্ষণের শিকার নারীকে হত্যা করার প্রবণতা বাড়তে পারে৷ ধর্ষকরা তখন মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে ভিকটিম যিনি, মূল সাক্ষী তাকে হত্যা করে প্রমাণ নষ্ট করার অপচেষ্টা করতে পারে৷’’

বাংলাদেশে ধর্ষণ দৃশ্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার পেছনে কঠোর আইনের চেয়ে আইন প্রয়োগ না হওয়াকে দায়ী করছেন কোনো কোনো আইনজীবী৷ তারা মনে করেন, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী যারা ধর্ষণে জড়িত তাদের অনেক ক্ষেত্রেই বিচারের আওতায় আনা যায় না৷ তারা বলেন, সিলেটের এমসি কলেজ হোস্টেলে ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী৷ এই দুইটি ঘটনা নিয়ে মানুষ কথা বলায় আসামিদের আটক করা হয়েছে৷ কিন্তু এরকম আরো বহু ঘটনা আছে যেগুলো পুলিশ পর্যন্ত যায় না৷ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘আরো অনেক অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে৷ তাই বলে কি সেই সব অপরাধ কমেছে? অপরাধ করে যদি পার পাওয়া যায়, তাহলে কোনো কঠোর শাস্তিই কাজে আসে না৷ সরকারকে আসলে সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ মন্ত্রী-এমপি বা দল-লীগের প্রভাবে যদি অপরাধী রেহাই পায়, তাহলে কঠোর আইন শুধু আইন হয়েই থাকবে৷’’

বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান সাধারণ মানুষের দাবি: এলিনা খান

This browser does not support the audio element.

মৃত্যুদণ্ডের বিধানের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের ওপর জোর দিয়েছেন নারীনেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান৷ তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান সাধারণ মানুষের দাবি৷ ফলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা ঠিক আছে বলে মনে হয়৷ কিন্তু  তার মতে, ‘‘আইনের সঠিক প্রয়োগের সাথে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে শাস্তি না পায় তা-ও নিশ্চিত করতে হবে৷’’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলায় শাস্তিরও বিধান আছে৷ এই বিধানটিও যথাযথভাবে প্রয়োগ দরকার বলে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন৷

এদিকে কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও ধর্ষকদের আরো বিকল্প শাস্তির প্রস্তাব করেছেন৷ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ধর্ষকদের নপুংশক করে দেয়ার প্রস্তাব করেছেন তার এক ফেসবুক পোস্টে৷ এ নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ফেসবুক পোস্টে যা বলেছি তাই৷ এর বাইরে আমার কোনো কথা নাই৷’’

গতবছর ৬ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ