মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই অস্ট্রেলীয়র আপিলের শুনানি মুলতুবি
১২ মার্চ ২০১৫
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক আদালত মিউরান সুকুমারন এবং অ্যান্ড্রু চান-এর আপিলের শুনানি সাত দিন পিছিয়ে দিয়েছে৷ অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দৃশ্যত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের খরচ বহন করতে রাজি৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট জকো উইডোডো বা ‘জকোউই' এর আগেই উভয়ের মৃত্যুদণ্ড মকুব করতে অস্বীকার করেছেন৷ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক আদালত শুনানি পিছিয়েছেন এই কারণে যে, প্রেসিডেন্টের পক্ষের আইনজীবীদের কোনো পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ছিল না৷ প্রসঙ্গত, এই আদালতই গতমাসে দুই ফাঁসির আসামির রাজক্ষমার আবেদন বাতিল করে৷
৩৩ বছর বয়সি সুকুমারন এবং ৩১ বছর বয়সি চান ও আরো ন'জন অস্ট্রেলীয় ২০০৬ সালে আট কিলোগ্রাম হেরোইন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে৷ বিচারে সুকুমারন ও চানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, অন্যান্যরা ২০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পায়৷
সুকুমারন এবং চান ছাড়াও আপাতত ইন্দোনেশিয়ায় মাদক পাচার সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আরো আটজন বিদেশি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত: তাদের মধ্যে তিনজন নাইজেরীয়, দু'জন অস্ট্রেলীয়, একজন ফরাসি, একজন ইন্দোনেশীয় এবং একজন ঘানার নাগরিক৷ এদের উকিলরা শেষ মুহূর্তে নানা ধরনের আইনি ফ্যাকড়া দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থগিত রাখার চেষ্টা করেছেন৷ সুকুমারন ও চান-এর আপিলের শুনানি ঠিক সেভাবেই পিছাল, কেননা তাদের উকিলরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ‘জকোউই' কারাবাসের সময় দুই বন্দির মনোভাব ও আচরণের পরিবর্তনকে পর্যাপ্তভাবে বিবেচনা করেননি৷ অপরদিকে ফরাসি আসামির আপিলের রায় ঘোষণার তারিখ হলো ১৯শে মার্চ৷ কাজেই সেই অবধি কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা৷ তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়৷ বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
ছবি: N.Asfouri/AFP/Getty Images
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
ছবি: Getty Images/Paula Bronstein
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Donev
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/ F.Dana
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Shenglian
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷
ছবি: picture alliance/JOKER
10 ছবি1 | 10
অস্ট্রেলিয়া সরকার সিডনির দুই অভিবাসী সুকুমারন ও চান-এর মৃত্যুদণ্ড মকুব করার জন্য কূটনীতি এবং প্রচারণা পর্যায়ে প্রায় সব পন্থা পরখ করে দেখেছেন এবং দেখছেন৷ ২০০৪ সালের সুনামির পর অস্ট্রেলিয়া যে ইন্দোনেশিয়াকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার পরিমাণ সাহায্য দিয়েছিল, সে'কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রচেষ্টা: ৫ই মার্চ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ নাকি জাকার্তাকে পাঠানো একটি পত্রে এই প্রস্তাব দিয়েছেন যে, ক্যানবেরা সরকার সুকুমারন ও চান-এর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সব খরচ বহন করতে রাজি৷ এ খবর দিয়েছে সিডনি হেরাল্ড পত্রিকা আজ বৃহস্পতিবার৷ চিঠি পাওয়ার তিনদিন পরে ওই পক্ষের জবাব: ইন্দোনেশীয় আইনে এমন কোনো সূত্র নেই, যার ভিত্তিতে এ ধরনের বিনিময় করা যেতে পারে৷
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ৪৮ বছর বয়সি এক জার্মানকে গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকক থেকে বালিতে কোকেইন পাচারের দায়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে৷ আদালত নাকি বলেছেন, একদিকে অভিযুক্তের ব্যবহার ও সহযোগিতার দরুণ, অন্যদিকে এটা তার প্রথম অপরাধ বলে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়নি৷