1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফাঁসির বিকল্প কী হতে পারে?

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২১ এপ্রিল ২০১৮

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির ফাঁসি খুব যন্ত্রণাদায়ক৷ তাই আসামি যাতে অপেক্ষাকৃত শান্তিতে মরতে পারে, তার জন্য বিকল্প উপায় খতিয়ে দেখতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ সরকার জানিয়েছে ফাঁসিই সবথেকে বাস্তবসম্মত পদ্ধতি৷

Aktion gegen Folter und Todesstrafe
ছবি: Picture-alliance/dpa/W. Steinberg

ফাঁসিতে মৃত্যু শুধু যন্ত্রণাদায়ক নয়, অমানবিকও বটে৷ তাই ফাঁসির বিকল্প কোনো উপায় সরকারকে ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷ উদ্দেশ্য – অপরাধী যাতে অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রণায় ও শান্তিতে মরতে পারে৷ এই যেমন মারণ ইঞ্জেকশন দেওয়া অথবা আসামির চোখ বেঁধে গুলি করে মারা কিংবা ইলেকট্রিক শক দিয়ে বা বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মারা৷ সুপ্রিম কোর্ট মনে করে, ভারতীয় সংবিধান খুবই সংবেদনশীল এবং মৃত্যুকালে জীবনের মর্যাদা রক্ষার স্বপক্ষে৷

বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে৷ তার মধ্যে থেকেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অন্য উপায় খতিয়ে দেখা উচিত৷ ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৫৪ (৫) ধারা অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীর গলায় দড়ি পরিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা অসাংবিধানিক এবং অবৈধ৷ এই মর্মেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ নোটিস জারি করেছে এবং সরকার ও আইনসভাকে এর বিকল্প উপায় ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে৷

উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতে এক হলফনামা পেশ করে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসিটাই সবথেকে প্রচলিত পদ্ধতি৷ প্রায় ১০০ বছর ধরে এ পদ্ধতি চলে আসছে ভারতে৷ স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৪১৫ জন অপরাধীর ফাঁসি হয়েছে৷ সর্বশেষ ফাঁসি হয় ৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম অপরাধী ইয়াকুব মেমনের, নাগপুর জেলে ২০১৫ সালে৷ সে সময় মেমনের নিকটজনদের জেলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ উপস্থিত ছিলেন শুধুমাত্র জল্লাদ, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন ডাক্তার এবং জেলের দু-একজন কর্মী৷

ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৫৮টি দেশে ফাঁসি দেবার প্রথা আছে৷ তবে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ সাতটি দেশে ফাঁসির জায়গায় মারণ ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রচলন রয়েছে৷ এছাড়া সৌদি আরবে আছে সরাসরি মুণ্ডচ্ছেদের প্রথা৷ তবে বিশ্বে এমন বহু দেশও আছে যেখানে মৃত্যুদণ্ডই নেই৷

‘সমাজের মূলস্রোতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনার জন্য সমাজকেই সুযোগ দিতে হবে৷’

This browser does not support the audio element.

সুশীল সমাজ এ ব্যাপারে কী বলছে? অধ্যাপক দীপঙ্কর দাসগুপ্তের ব্যক্তিগত মত ফাঁসির বিপক্ষে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘ফাঁসিটাকে আমি আলাদাভাবে দেখি না৷ পুরো মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারটারই বিরোধী আমি৷ তা সে ফাঁসি হোক বা ইলেকট্রিক শক হোক৷ আমি মনে করি না যে সমাজের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে৷ অপরাধী হয়ত অন্যের প্রাণ নিয়েছে৷ আর সেজন্য বলা হচ্ছে তোমারও প্রাণ নেওয়া হবে৷ ফাঁসির পর যদি কোনো কারণে মনে হয় ফাঁসি দেওয়াটা ঠিক হয়নি, তাহলে প্রাণটা তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না৷ সেই লোকটির যেমন অন্যের প্রাণ নেওয়ার অধিকার নেই, তেমনি সমাজেরও কারোর প্রাণ নেওয়ার অধিকার নেই৷ তা সে মারণ ইঞ্জেকশন দিয়ে হোক বা অন্য পদ্ধতিতে হোক৷ মোটকথা, ক্যাপিটাল পানিশমেন্টেরই পক্ষপাতী নই আমি৷''

অধ্যাপক দীপঙ্কর দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে আরও বলেন যে তিনি মনে করেন না, এক ব্যক্তি যত ঘৃণ্য অপরাধই করে থাকুক না কেন, সমাজের মূলস্রোতে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সমাজকেই সুযোগ দিতে হবে৷ এমন ঘটনা বিরল নয়, যেখানে এক সময়ের খুনি নিজেকে শুধরে নিয়েছে৷

আইনজীবী ঋষি মালহোত্রার এক জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আর্জি নিয়েই শুরু হয় এই বিতর্ক৷ শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়, বর্তমানে ফাঁসির মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুধু বর্বরোচিতই নয়, অমানবিক এবং নিষ্ঠুরও৷ সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদে (জীবনের অধিকার) আছে৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদেরও মর্যাদার সঙ্গে মরার অধিকার স্বীকৃত সেখানে৷ ফাঁসি দেওয়াজাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের প্রস্তাবের পরিপন্থি৷ ঐ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড অবশ্যই কার্যকর করা হবে৷ তবে যতটা সম্ভব কম যন্ত্রণাদায়কভাবে৷ আইন কমিশনের বিভিন্ন রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়েছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অন্য যেসব পদ্ধতি আছে, ভারতের তা গ্রহণ করা উচিত৷ অনেক দেশে ফাঁসির বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক শক, মারণ ইঞ্জেকশন কিংবা গুলি করার পদ্ধতি চালু আছে৷ অবশ্য গুলি করে মারার প্রথা সাধারণত সামরিক বাহিনীতেই বেশি চালু৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু উন্নত ও বিকাশশীল দেশে ফাঁসি দেওয়ার প্রথা তুলে দিয়ে মারণ ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে৷ এতে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই অপরাধী মারা যায়৷ এটাকেই সবথেকে সভ্য পদ্ধতি বলে ক্রমশই গ্রহণ করা হচ্ছে৷ এছাড়া বৈদ্যুতিক শক বা গুলি করেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে কিছু দেশে৷

ফাঁসির নিষ্ঠুরতার এক নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে বিচারপতি ভাগবতী বলেন, ফাঁসির মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয় ফাঁসি দেবার একদিন আগে থেকে, যখন অপরাধীর দেহের ওজন নিয়ে দেখা হয় ফাঁসির কূপের কতটা নীচে দেহটা পড়লে দড়ির বাঁধনের ঝটকায় গলাটা ভেঙে যাবে৷ এ জন্য ঘাড়ের মাপও নেওয়া হয়৷ দড়িটা এমন শক্ত ও মসৃণভাবে তৈরি করা হয় যাতে ফাঁসটা ঝট করে গলায় আটকে যায়৷ ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঝুলন্ত থাকার পর ডাক্তার গিয়ে পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷

পাঠক, ফাঁসির বিকল্প কি সত্যিই হতে পারে? আপনার মতামত জানান নীচের বক্সে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ