‘বিচার দেখে যেতে চাই'
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩গত বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি রাতের কোনো এক সময় রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি৷ পরদিন সকালে ওই বাসা থেকে পুলিশ তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে৷ সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও মেহেরুন রুনি এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন৷ বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে ব়্যাব৷ আসল খুনি তো দূরের কথা, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি ব়্যাব৷
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ভিআইপি মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন করে ‘ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তন' নামে নামকরণ করা হয়৷ ডিআরইউ'তে দুপুরে ফিতা কেটে মিলনায়তনের উদ্বোধন করেন সালেহা মনির ও নুরুন নাহার মির্জা৷ এই উপলক্ষ্যে এক আলোচনাসভায় তারা বক্তব্য রাখেন৷ এতে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি শাহেদ চৌধুরী৷
আলোচনাসভায় সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের জীবন যে এত ঠুনকো, তা আগে বুঝিনি৷ বুঝলে সাগর-রুনিকে আমরা এই পেশায় থাকতে দিতাম না৷ তাদের কী অপরাধ? এখনো তাদের হত্যার বিচার হচ্ছে না কেন? এ বিচার হতে বাধা কোথায়?'' কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘‘সাগর-রুনি বিচারের আন্দোলন বেগবান হচ্ছে না৷ এই হত্যার বিচার দাবিতে আমি সব সাংবাদিককে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷ তাই মৃত্যুর আগে এই খুনের বিচার দেখে যেতে চাই৷ যেভাবেই হোক আসল খুনি গ্রেফতার হোক আমরা চাই৷ আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে সন্দিহান৷ আদৌ এই বিচার হবে কি না জানি না৷ তবে খুব খুশি হতাম, যদি সাংবাদিকদের আন্দোলন আরো বেগবান হতো৷'' সালেহা মনির বলেন, ‘‘একমাত্র মা-ই জানেন, সন্তান হারানো কতো কষ্টকর৷''
মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা বলেন, ‘‘আপনারা মেঘের দিকে তাকান৷ সে বাবা-মা'র জন্য মাঝে মাঝে কাঁদে৷ তার দিকে তাকিয়ে হলেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার করা হোক৷ এই ছোট্ট ছেলেটা কত কষ্ট নিয়েই না বড় হচ্ছে৷'' একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি৷
ডিআরইউ সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাগর-রুনির খুনের রহস্য উন্মোচন এবং খুনিদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন৷ পরে ‘জজমিয়া' নাটক সাজানোর চেষ্টা হয়েছে৷ খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করুন৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে৷ নয়তো এরপর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাংবাদিকরা এই হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যাবেন৷ আমরা এই অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবো৷''
ডিআরইউ'র সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘‘অব্যাহত আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে৷ সাংবাদিক ইউনিয়নের বিভক্তির কারণে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না হলেও ডিআরইউ'র উদ্যোগে এই আন্দোলন বেগবান করা হবে৷ ডিআরইউ সদস্যরা বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যাবেন৷ আন্দোলন বন্ধ হবে না৷''