রাস্তার ধারে পড়ে থাকা শিশুটি না খেয়ে থাকতে থাকতে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছিল৷ কঙ্কালসার দুর্বল শরীরটায় ভন ভন করছিল মাছি৷ এক মানবাধিকার কর্মী স্নেহভরে শিশুটির মুখে তুলে দিয়েছিলেন পানি৷ নাইজেরিয়ার সেই শিশুটি এখন হাসছে, খেলছে৷
ছবি: Facebook/Anja Ringgren Lovén
বিজ্ঞাপন
গত ৩১ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় তোলে নাইজেরিয়ার এক হাড়জিরজিরে শিশুর ছবি৷ ছবিতে দেখা যায়, শিশুটির মুখে পানি তুলে দিচ্ছেন ডেনিশ মানবাধিকার কর্মী আনিয়া রিংরেন লভেন৷ তারপর তানিয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে যান হাসপাতালে ৷ সেদিন হাসপাতালে না নিলে শিশুটি এতদিনে হয়ত মারাই যেত৷
শিশুটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল তার পরিবার৷ নিজেদের সন্তানকে ‘ডাইনি' ভেবে শিশুটির বাবা-মা-ই রাস্তায় ফেলে যায় ওকে৷ বাবা-মা থাকতেও শিশুটি তাই এতিম৷ কেউ খেতে দেয় না৷ ‘ডাইনি' ভেবে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়৷ এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল শিশুটি৷
আবুজা শহরের রাস্তা থেকে তুলে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পানি খাওয়ানোর দৃশ্যের সেই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন আনিয়া রিংরেন লভেন৷ ছবির সঙ্গে লিখেছিলেন, ‘‘গত ৩ বছরে আমি নাইজেরিয়ায় অনেক দেখেছি৷ উদ্ধার অভিযানের সময়ের অনেক অভিজ্ঞতার কথাই আমি আপনাদের জানাইনি৷
এখানে ডাইনি সন্দেহে হাজার হাজার শিশুকে ফেলে দেয়া হয়, নির্যাতন করা হয়৷ অনেক মৃত শিশুর লাশ দেখেছি আমরা৷ অনেক ভীত-সন্ত্রস্ত শিশুও দেখেছি৷'' তারপর আনিয়া লিখেছিলেন, ‘‘এই ছবিটা দেখলে বুঝবেন কেন আমি লড়ছি৷ কেন আমি সর্বস্ব বিক্রি করে এ লড়াইয়ে নেমেছি৷''
আনিয়া আনিয়া রিংরেন লভেনের পোস্ট করা ছবি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকে৷ শিশুটির সুস্থতা কামনা করেছেন সবাই৷ চিকিৎসার জন্য টাকাও পাঠিয়েছেন অনেকে৷ কয়েকদিনের মধ্যেই চিকিৎসার জন্য খোলা তহবিলে জমা হয়ে যায় ১ মিলিয়ন ডলার৷ কয়েক দফা রক্তদান এবং একাধিক অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি এখন বেশ সুস্থ৷ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে শিশুটি এখন হাসছে, খেলছে৷
নাইজেরিয়ার কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ‘ডাইনি', অর্থাৎ অশুভ শক্তি ভেবে অনেক শিশুকেই ফেলে দেয়৷
আনিয়া রিংরেন লভেন সেই শিশুদের রক্ষা করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন৷ দুঃস্থ শিশুদের সহায়তার জন্য নাইজেরিয়াতেই একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সংস্থার নাম আফ্রিকান চিলড্রেন'স এইড এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন৷ ওই সংস্থার শিশুদের সঙ্গেই এখন আনন্দে দিন কাটাচ্ছে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা সেই শিশু৷ আনিয়া রিংরেন লভেন শিশুটির নাম দিয়েছেন, ‘হোপ', অর্থাৎ আশা৷
এসিবি/ডিজি (হাফিংটন পোস্ট)
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷