করোনায় আক্রান্ত ও মৃত মানুষের অনুপাত মারাত্মক হওয়া সত্ত্বেও স্পেনের পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে কর্তৃপক্ষ৷ তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে অস্বাভাবিক মাত্রায় সংক্রমণের হার এখনো দুশ্চিন্তার কারণ৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপে ইটালির পর স্পেনই করোনা সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ শুক্রবারও সংক্রমণের গতি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায় নি৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪,০০০ ছাড়িয়ে গেছে, মৃতের সংখ্যা ৪,৮০০-রও বেশি৷
এমন মারাত্মক পরিস্থিতি সত্ত্বেও স্পেনের প্রশাসনের স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফার্নান্দো সিমন কিছুটা আশার আলো দেখছেন৷ তিনি বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির ১৪ শতাংশ হার সাম্প্রতিক দিনগুলির তুলনায় সবচেয়ে কম৷ স্পেন মহামারির উচ্চতম মাত্রা ছুঁতে চলেছে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তারপর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে৷ করোনায় আক্রান্ত যে সব মানুষ চিকিৎসার শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের সংখ্যাও বাড়ছে৷ বৃহস্পতিবার ৪,০০০ এমন মানুষের আরোগ্যের খবর পাওয়া গিয়েছিল৷ শুক্রবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০,০০০৷
সার্বিকভাবে কিছুটা উন্নতি সত্ত্বেও রাজধানী মাদ্রিদ ও আশেপাশের এলাকার পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছে না৷ সেখানকার হাসপাতালগুলি রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না৷ প্রায় ১,৩০০ মানুষ গুরুতর অবস্থায় আইসিইউ-তে রয়েছেন৷ এক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গনে ৫,০০০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তুলেও চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না৷
স্পেনে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণও বর্তমান সংকটকে আরও কঠিন করে তুলছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানালের হিসেব অনুযায়ী মোট ৯,৪৪৪ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন৷ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমন অবস্থা দেখা যায় নি৷ ফলে স্পেনে রোগীদের সেবার কাজ কঠিন হয়ে উঠেছে৷ অনেক স্বাস্থ্যকর্মী বার বার জানিয়েছেন, যে তাঁদের হাতে সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে মাস্ক, গ্লাভস বা গাউনের মতো ন্যূনতম সরঞ্জাম নেই৷ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অ্যামনেস্টি কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বাড়াচ্ছে৷
শুক্রবার স্পেনের সংসদ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ উল্লেখ্য, গত ১৫ই মার্চ থেকে গোটা দেশে কড়া হাতে লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে৷ স্পেনের মন্ত্রিসভা শুক্রবার কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে৷ শ্রমমন্ত্রী ইয়োলান্দা দিয়াস বলেন, এমন স্বাস্থ্য সংকটের ফায়দা তুলে কেউ এ দেশে কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে না৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স, এপি)
করোনা সংকটে পপুলিস্ট নেতারা কোণঠাসা
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷