1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তির সাজা নিয়ে প্রশ্ন

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ নভেম্বর ২০২৩

গত প্রায় দেড় মাসে ৩০টি মামলায় বিএনপির ৫৪৬ জন নেতা-কর্মীর সাজা হয়েছে৷ এর মধ্যে মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তিও আছেন৷ মৃত ব্যক্তিদের কীভাবে সাজা হয় তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনজ্ঞরা৷

সুমনসহ গুমের শিকার হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তির স্বজনেরা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালতছবি: Arafatul Islam/DW

এমন ক্ষেত্রে রায় সংশোধনের কথা বলছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা৷ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমন হয়েছে, নাকি এটি স্বাভাবিক বিচারের প্রক্রিয়ায়ও হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৭শ' বিচারক দিয়ে সুচারুভাবে বিচার কাজ পরিচালনা অসম্ভব৷ এটা সত্যি যে, বেশ কিছু মামলা দ্রুত গতিতে নিষ্পত্তি করে সাজা দেওয়া হচ্ছে৷ অল্প সময়ে দ্রুতগতিতে অনেকগুলো মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠছে৷ হঠাৎ করে এই মামলাগুলো বিচার করে দ্রুত সাজা দেওয়ায় জনমনে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার বিষয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে৷ বিচার বিভাগের উপর মানুষের যে আস্থা, এটা তার সহায়ক না৷ এটা সত্যি যে, এতগুলো মামলা দ্রুত বিচার করার ফলে জনমনে কিছুটা সন্দেহ বা আশঙ্কার তৈরি হয়েছে এটা স্বীকার করতে হবে৷”

গত সোমবার নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় মৃত বিএনপি নেতা মো. আবু তাহের দাইয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত৷ তিনি চার বছর আগে নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন মারা গেছেন৷ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনার মামলায় নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়৷ সেই মামলায় এজাহারনামীয় সাত নম্বর আসামি ছিলেন আবু তাহের৷ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ৷ এ মামলার বিচার শেষে আবু তাহের, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন৷

১০ বছর যার খবরই পাই না তাকে কীভাবে সাজা দেয়?: সানজিদা ইসলাম

This browser does not support the audio element.

মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ায় তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ মৃত তাহেরের ছেলে মো. এহসান বলেন, ‘‘আমার বাবা রাজনীতি করতেন৷ তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন৷ মৃত বাবাকে আদালত সাজা দিয়েছেন- এটা শুনে খারাপ লাগলো৷ একজন মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে আদালত সাজা দেয় আমার জানা নেই৷ এটা আমাদের মর্মাহত করেছে৷”

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ শাহীনবাগের বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন৷ তাকে গাড়িতে আগুন দেওয়ার মামলায় আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ গত সোমবার ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম)-এর ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এই রায় দেন৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷

সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আমার ভাইকে তুলে নেওয়া হয়৷ তিনি মামলার আসামি হলে তদন্ত করে তাকে খুঁজে বের করুক৷ ১০ বছর ধরে যার খবরই পাচ্ছি না তাকে কীভাবে সাজা দেয়? আমার ভাইকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে তুলে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি কোনো মামলায় আসামি হলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হোক৷ আমার ভাইয়ের সন্ধানের জন্য আমি উচ্চ আদালতে গেছি৷ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাকে নিয়ে একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছে৷ দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন সুমনকে গুম করা হয়েছে৷ এরপরও তাকে সাজা দেওয়া হলো! এই মামলার বিষয়ে পুলিশ আমাদের কিছুই বলেনি৷ এমনকি আদালত থেকেও আমরা কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি৷”

ভাই নিখোঁজের পর থেকে সানজিদা ইসলাম তুলি ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন৷ গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি৷

যেটা গুম বলা হচ্ছে, কাগজ-পত্রে কোথাও তা নেই: আব্দুল্লাহ আবু

This browser does not support the audio element.

গত ২০ নভেম্বর ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ পুরান ঢাকার চকবাজারের একটি মামলারও রায় দেন৷ সেখানে তিনি ১৬ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে দুই বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেন৷ এই মামলায়ও মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে৷ এই মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী নাহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আজিজুল্লাহকে এক নম্বর আসামি করে পুলিশ মামলাটির চার্জশিট দাখিল করে ২০১৮ সালে৷ অথচ আজিজুল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালে৷ শুনানিকালে আমরা বিষয়টি সামনে এনেছি৷ এদিকে মামলা চলাকালে ১৩ নম্বর আসামি মাকসুদুল আলম মারা যান৷ তার ডেথ সার্টিফিকেট আমরা জমা দিয়েছি৷ ১৬ জন আসামির মধ্যে একজন তো ঘটনার দুই বছর আগেই মারা গেছেন, আরেকজন মামলা চলাকালে মারা গেছেন৷ অর্থাৎ, আসামি ১৪ জন হওয়ার কথা৷ কিন্তু রায়ে ১৫ জন আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ, মৃত একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন৷ আমরা এখনও রায়ের কপি পাইনি৷ পেলে বুঝতে পারবো সেই মৃত ব্যক্তি আজিজুল্লাহ না মাকসুদুল আলম৷”

নাশকতাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাজা দেওয়ার ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি৷ তারা বলছে, আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই সাজার রায় দেওয়া হচ্ছে৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে রায় এসেছে তা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় যে, মামলাগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা হয়েছে এবং এর বিচারও হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য৷ এখানে মূল উদ্দেশ্যই রাজনৈতিক, যাতে করে বিএনপির বিভিন্ন পদের দায়িত্বশীল যারা নেতা-কর্মী আছেন, তারা যেন রাজনৈতিক হয়রানি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হন৷” মৃত বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সাজার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এতদিন আমরা গায়েবি মামলা দেখেছি, এখন গায়েবি রায় দেখছি৷”

মৃত ব্যক্তির কীভাবে সাজা হয়- জানতে চাইলে পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলা চলাকালে কেউ যদি মারা যান তাহলে সেই বিষয়টি আদালতের নজরে আনার দায়িত্ব আসামিপক্ষের আইনজীবীর৷ তারা যদি আদালতের নজরে না আনেন তাহলে আদালত কীভাবে জানবেন তিনি মারা গেছেন? আর গুম বলে যেটা বলা হচ্ছে, কাগজ-পত্রে তো কোথাও এই শব্দ নেই৷ ফলে ওই আসামিকে পলাতক বলে ধরে নিয়েই মামলার কাজ পরিচালনা করা হয়৷ ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যত্যয় হয়নি৷ কোনো মৃত ব্যক্তির নামে সাজা হয়ে থাকলে আদালত সেটা সংশোধন করে দেবেন৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ