জীবিত দাতাদের প্রতিস্থাপন করা জরায়ু থেকে এরই মধ্যে ১১ শিশুর জন্ম হয়েছে৷ কিন্তু এবারই প্রথম মৃত এক নারীর শরীর থেকে জরায়ু প্রতিস্থাপন করে শিশু জন্মদানের ঘটনা ঘটলো৷ জরায়ু প্রতিস্থাপনের সাত মাস পর গর্ভধারণ করেন সে নারী৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাজিলের ৩২ বছর বয়সি এক নারীর জরায়ু থেকে জন্ম নেয়া সেই সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা৷ দ্য ল্যানসেট নামের এক মেডিকেল জার্নালে এই ঘটনার কথা প্রকাশ করা হয়েছে৷
জার্নালে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে এই প্রতিস্থাপন করা হয়৷ জরায়ুর সমস্যার কারণে গর্ভধারণে অক্ষম হাজারো নারীর জন্য আশার আলো হয়ে আসতে পারে এই সংবাদ৷ এখন পর্যন্ত মৃতদেহ থেকে জরায়ু প্রতিস্থাপনের ১০টি ঘটনার কথা জানা গেলেও সাফল্যের সাথে সন্তান জন্মদানের ঘটনা এটিই প্রথম৷
প্রতিস্থাপন করা নারী কোনো জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মায়ার-রোকিটানস্কি-ক্যুস্টার-হাউসার সিন্ড্রোম বলা হয়ে থাকে৷ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার সময় দাতার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর এবং তিনি তিন সন্তান জন্ম দিয়েছেন৷
জটিলতাহীন অপারেশন
দশ ঘণ্টা চলে এই জটিল এই অপারেশনে দাতার শরীর থেকে নেয়া জরায়ুকে গ্রহীতার শিরা, ধমনি, বিভিন্ন লিগামেন্ট এবং যোনিপথের সাথে সংযুক্ত করতে হয়েছে৷
শরীর যাতে নতুন অঙ্গ প্রত্যাখ্যান না করে সেজন্য অ্যান্টিমাক্রোবিয়াল, অ্যাসপিরিনসহ পাঁচটি ভিন্ন ধরনের ড্রাগ দেয়া হয় গ্রহীতাকে৷ তবে অপারেশনের পাঁচ মাস পর পর্যন্ত প্রত্যাখ্যানের কোনো লক্ষণ দেখতে পাননি চিকিৎসকরা৷
সন্তান জন্ম দেয়ার সাত উপায়
সন্তানের মা হওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু অনেকেই খুঁজে পাবেন না৷ এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি৷ তবে সেই সন্তান জন্ম দেয়ার বা মা হওয়ার রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়৷ চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেজাইনাল বা যোনি ডেলিভারি
প্রাকৃতির নিয়মে সবচেয়ে আদিম উপায় হচ্ছে ‘ভেজাইনাল ডেলিভারি’৷ এই উপায়ে সন্তান ‘বার্থ ক্যানেলের’ মাধ্যমে, মানে যোনিনালী দিয়ে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে৷ অবশ্য ঠিক কখন প্রসব হবে, তা আগেভাবে সঠিকভাবে জানা যায় না৷ অধিকাংশ নারী এই প্রক্রিয়াতেই গর্ভধারণের ৩৮-৪১ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেন৷ এভাবে জন্ম নেয়া শিশুর রোগবালাই সংক্রমণের মাত্রা কম৷ তবে সন্তান প্রসবের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Yongrit
সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন
বাস্তবতা হচ্ছে, সব শিশুর জন্ম ভেজাইনাল বার্থের মাধ্যমে হয় না৷ বিশেষ করে জন্মদানের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে ‘সি-সেকশন’, অর্থাৎ নারীর তলপেট এবং জরায়ুর চামড়া কেটে বাচ্চা বের করে আনতে হয়৷ কেউ কেউ প্রসববেদনা এড়াতে এবং যোনির প্রসারতা ঠেকাতেও সিজারিয়ান অপশন বেছে নেন৷ কারো কারো বিশ্বাস যে, যোনিপথে সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তীতে যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/D. Karmann
সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ
অতীতে মনে করা হতো, একবার সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে সেই নারী পরবর্তীতে আর প্রাকৃতিক উপায়ে, অর্থাৎ যোনিনালীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ অবশ্যই সম্ভব৷ আর সিজারিয়ানে বাচ্চা জন্মদানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নারীর নানারকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির নজিরও রয়েছে৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেক্যুয়াম এক্সট্রাকশন
ভেজাইনাল ডেলিভারির সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভেক্যুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়৷ এই পদ্ধিততে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেয়া হয়৷ এরপর ভেক্যুয়ামের মাধ্যমে সেটি টেনে বের করে আনা হয়৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
ফোরক্যাপস ডেলিভারি
এটাও ভেজাইনাল বা নর্মাল ডেলিভারির সময় জটিলতা তৈরি হলে ব্যবহার করা হয়৷ এই পন্থায় বড় দু’টো চামচের মতো দেখতে ফোরক্যাপস শিশুর মাথা আটকে বার্থ ক্যানেল থেকে তাকে সহজে বের করে আনা হয়৷ সাধারণত গর্ভধারিণী প্রসবের সময় পর্যাপ্ত চাপ দিতে না পারলে এই পন্থা কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/J. Meyer
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)
অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণই জটিল৷ এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার একটি আধুনিক পন্থা হচ্ছে আইভিএফ৷ এ পন্থায় চিকিৎসক নারীর ডিম্বাণু সূচের মাধ্যমে বের করে আনেন এবং ল্যাবরেটরিতে তা শুক্রাণুর সঙ্গে মেলান৷ পরে ভ্রুণ সৃষ্টির পর সেটা ক্যাথিটার ব্যবহার করে নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরপর ভ্রুণটি নিজে থেকেই মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়৷ দাতার ডিম্বাণু ও শুত্রাণুর মাধ্যমেও এভাবে মা হওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সারোগেসি
যেসব নারী একেবারেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বা সন্তান জন্ম দেয়া যাঁদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার, তাঁদের ক্ষেত্রে মা হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেয়া৷ এক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীর জরায়ুতে ভ্রুণ বা শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়৷ দ্রষ্টব্য: জনসন ম্যামোরিয়াল হেল্থ ব্লগ এবং উইম্যান’স হেল্থ ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্যালারিটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
সাত মাস পর আগে থেকে ফ্রিজ করে রাখা ডিম্বাণুর প্রবেশ করিয়ে গর্ভধারণ করেন গ্রহীতা৷
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিস্থাপনের ৩৫ সপ্তাহ তিন দিন পর প্রায় আড়াই কেজি ওজনের সুস্থ-সবল মেয়ে শিশুর জন্ম দেন সে নারী৷
জার্নাল প্রকাশের জন্য গবেষণাপত্র জমা দেয়ার সময় সন্তানের বয়স ছিল সাত মাস ২০ দিন, ওজন ৭ দশমিক ২ কেজি৷
আশার আলো
এই ঘটনাকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ‘মাইলফলক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন সাও পাওলো স্কুল অব মেডিসিন ইউনিভার্সিটির প্রতিস্থাপন দলের প্রধান চিকিৎসক দানি এইজেনবার্গ৷
তিনি বলেন, ‘‘জরায়ুর বন্ধ্যাত্বের শিকার নারীদের জন্য এই সাফল্য এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে৷''
বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত জীবিত দাতাদের শরীর থেকে জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ৩৯টি৷ এর মধ্য থেকে ১১টি জন্মদান সফল হয়েছে৷ সুইডিশ ডাক্তার ম্যাটস ব্রানস্ট্রমের এক পরীক্ষামূলক অপারেশনে ২০১৩ সালে এই প্রক্রিয়ায় প্রথম শিশু জন্মদানের ঘটনা ঘটে৷
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারী-পুরুষ বন্ধ্যাত্বের শিকার৷ এর পেছনে নানা কারণ থাকলেও প্রতি ৫০০ জনে একজন নারীর বন্ধ্যাত্বের কারণ জরায়ুর সমস্যা৷
গর্ভবতী হতে ব্যর্থ হলে যা করণীয়
আপনি মা হতে চাচ্ছেন কিন্তু ‘অ্যান্টি বেবি পিল’ সেবন না করেও গর্ভবতী হচ্ছেন না? তাহলে ছবিঘর থেকে জেনে নিন এমন কিছু টিপস, যা আপনাকে গর্ভবতী হতে সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/luna
‘গুড টাইমিং’ খুবই জরুরি
সবার ক্ষেত্রে এ কথা সত্য না হলেও, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের মাসিকের গড় চক্রকাল ২৮ দিন৷ অনেকের অবশ্য মাসিক অনিয়মিতও হয়ে থাকে৷ তাই ‘ওভুলেশন’ বা ডিম্বোস্ফোটনের সাতদিন পর্যন্ত স্বামী বা পার্টনারের সঙ্গে সহবাস করলে একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
‘গুড টাইমিং’ কখন?
যদিও ডিম্বোস্ফোটনের একেবারে সঠিক সময় বোঝা কঠিন, তারপরেও বেশিরভাগ মেয়েরই ঋতুস্রাব শুরুর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ডিম্বোস্ফোটন হয়৷ অর্থাৎ এটাই সবথেকে উর্বর সময়৷ কাজেই হিসেব করে সেভাবে যৌনমিলন হলে নারী গর্ভবতী হতে পারে৷ তবে শরীরে অন্য কোনো সমস্যা থাকলে অন্য কথা৷
ছবি: Imago
হতাশ হবার কিছু নেই
কিছুদিন চেষ্টার পর সফল না হলে মন খারাপ বা নিজেকে দায়ী করার কিন্তু কোনো কারণ নেই৷ অনেকের ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে৷ আসলে গর্ভধারণ নির্ভর করে নারী, তাঁর জননক্ষমতা, ওভুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটনের তারিখ, নারীর সাধারণ স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর৷
ছবি: lassedesignen - Fotolia.com
ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন ট্যাবলেট
গর্ভধারণ কহজ করার জন্য, অর্থাৎ জননক্ষমতা বাড়াতে ও জরায়ু সুস্থ রাখতে কিছু নিয়ম মানা যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন৷ তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে৷
ছবি: Colourbox
খাওয়া-দাওয়া
গর্ভধারণ করতে চাইলে খাওয়া-দাওয়ার ব্যপারেও কিছুটা সচেতন হতে হবে৷ যেমন আপনার খাবারের তালিকায় ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার থাকা জরুরি৷ তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও দুধ বা জাতীয় খাবারও গর্ভধারণে সহায়তা করে৷
ছবি: Mischko/Fotolia
মানসিক চাপকে দূরে রাখুন
সন্তান না হওয়ার কারণে অনেক নারী মানসিক চাপে ভোগেন৷ আবার আমাদের সমাজে পরিবার থেকেও চাপ আসে৷ এক্ষেত্রে কোনো ধরনের চাপকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো করে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিডো৷ কারণ জোর করে সন্তান ধারণ করা বা সন্তানের মা হওয়া যায় না৷ এছাড়া মানসিক চাপ থাকলে তা শেষ পর্যন্ত সন্তানের জন্যও মঙ্গলজনক হয় না৷