করোনা ছড়াচ্ছে বলে গত মাসে দেড় কোটি মিংক মারা হয়েছিল ডেনমার্কে। এখন সেই মৃত মিংক থেকে দেখা দিয়েছে পরিবেশ-সমস্যা।
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ বাঁচাতে মৃত মিংকের দেহ বের করে আগামী বছর পোড়ানো হবে। ডেনমার্ক সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করোনা ছড়াচ্ছে বলে তড়িঘড়ি করে দেড় কোটি মিংক মেরে দিয়েছে ডেনমার্ক সরকার। প্রথম দফায় মারা হয়েছিল ৪০ লাখ মিংক। সেগুলি দ্রুত দেশের পশ্চিমে সামরিক এলাকায় বালি ভর্তি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি পচে যাওয়ার পর কিছু মিংকের দেহ আবার নীচ থেকে ওপরে চলে এসেছে। ছড়িছে পরিবেশ দূষণের আতঙ্ক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মৃত মিংকগুলি গলেপচে কাছের একটি লেকের জলকে দূষিত করে দিতে পারে। ভূগর্ভস্থ জলও দূষিত হয়ে যেতে পারে। তার প্রভাব তখন পানীয় জলে পড়বে। এই নিয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ ক্রমেই বাড়ছে।
করোনা সংক্রমণ রুখতে ডেনমার্কে কোটি মিংক হত্যা
ডেনমার্কে মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এ কারণে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ মিংককে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত৷
ড্যানিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় মৃত মিংকদের সামরিক এলাকায় দাফন করছে৷ মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সন্দেহে দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ মিংক ধ্বংস করা হচ্ছে৷ তবে এ ধরনের পদক্ষেপের কোন বৈধতা না থাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ড্যানিশ সরকার৷
মিংকের পশম বিশ্বের অন্যতম দামী ফ্যাশন-পণ্য৷ বিশ্বের ফ্যাশন দরবারে মিংকের পশমের চাহিদা সবসময়ই বেশি৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনমার্কে করোনা সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ এই প্রাণীটি৷ দেশের সরকার তাই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷
সাম্প্রতিককালে এই প্রাণীর মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ ধরনের জিনগত পরিবর্তন, যার ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মিংক থেকে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ৷ মিংকের শরীর থেকে পরিবর্তিত রূপের করোনা ভাইরাস যখন মানব শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা মোকাবিলা করা অনেক ওষুধের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: John Randeris/Ritzau Scanpix/REUTERS
খামারগুলোকে নির্দেশ
ডেনমার্কের সব খামারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিংক বাছাই করতে৷ ডেনমার্কের পুলিশ, হোমগার্ডসহ প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যরা মিংক বাছাইয়ের কাজে সহায়তা করছে৷ ডেনমার্কে এই মুহূর্তে অন্তত ২০৭টি খামারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ৷ ছবিতে ডেনমার্কের নেস্তভেদের কাছে হেনরিক নর্ডগার্ড হানসেন অ্যান্ড আন-মোনা কুলসো লারসেন খামারটিতে মৃত মিংকদের জড়ো করছেন খামারিরা৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম
ডেনমার্কে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মিংক আছে৷ দেড় হাজার মিংকপালকের সমবায় সংস্থা ‘কোপেনহাগেন ফার’ থেকেই বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম আসে, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয় চীন ও হংকঙে৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
মিংক নির্মূলে খরচ
মিংকগুলোকে মেরে ফেলতে সরকারের খরচ হবে মোট পাঁচ বিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোনার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭০০ কোটি)৷ এছাড়া, কর্তৃপক্ষ মিংক পালকদের ক্ষতিপূরণও দেবে বলে জানিয়েছে৷
এই অবস্থায় খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সরকার পার্লামেন্টের সম্মতিতে মিংকগুলির দেহ খুঁড়ে বের করবে। আগামী বছর মে মাস নাগাদ এই কাজ করা হবে। সরকারের ধারণা, ততদিনে করোনার প্রকোপ একেবারে কমে যাবে। তখন মিংকগুলিকে যেখানে বর্জ্য জ্বালানো হয়, সেখানে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হবে।
তা হলে আর পরিবেশের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। জলদূষণের ভয়ও যাবে।