বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের মুখে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে মরক্কোর একটি টেলিভিশন চ্যানেল৷ ২৩ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীরা কীভাবে তাদের নির্যাতনের চিহ্ন মেকআপের সাহায্যে ঢাকবেন সেই টিপস দেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
২৩ নভেম্বর বুধবার নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিরসনের আন্তর্জাতিক দিবসে এই অনুষ্ঠানটি প্রচার করে মরক্কোর সরকারি চ্যানেল টুএম৷ সাবাহায়ৎ বা সুপ্রভাত নামের অনুষ্ঠানটিতে এটি প্রচার করা হয়৷ অনুষ্ঠানটিতে দেখানো হচ্ছিল এক মেক আপ আর্টিস্ট এমন একজন নারীর মেকআপ করছেন, যার মুখে নকল কালসিটে দাগ দেয়া রয়েছে৷
মেকআপ শিল্পী বলছেন, ‘‘রাতে আপনার স্বামী, বাবা বা ভাই আপনাকে মেরেছেন আপনার চোখে মুখে এমন কালসিটে পড়েছে৷ এ অবস্থায় আপনি অফিস যাবেন কীভাবে? আপনাদের জন্য তাই আজকের টিপস, নির্যাতনের চিহ্ন ঢাকার মেকআপ৷'' এরপর কীভাবে মেকআপের সাহায্যে নির্যাতনের চিহ্ন আড়াল করা যায় তার টিপস দেন তিনি ৷
প্রথমে বুধবার চ্যানেলের ওয়েবসাইটে এটি পোস্ট করার পর শুক্রবারের মধ্যে এটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ তখন কর্তৃপক্ষ তা ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলতে বাধ্য হয়৷ বেশিরভাগ মানুষ ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘আপনি আপনার বাবা-মা ও ভাইয়ের হাতে মার খেয়েছেন? আপনার জন্য সমাধান দেকে টুএম চ্যানেল৷' চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেও ২৮ তারিখ ফেসবুকে আবারও ভিডিওটি পোস্ট করা হয়৷ এরপর এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে জানায় কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু এবার রোষের আগুনে ঘি ঢালে তা৷ চ্যানেলটি দাবি করেছে নারীদের সম্মান জানাতেই তাদের এই অনুষ্ঠান৷ তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার তারা৷
তবে বিক্ষুব্ধ দর্শকদের অভিযোগ, এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নারী নির্যাতনকে আরো উসকে দেয়া হয়েছে৷ এটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করার পর থেকে সমালোচনার ঝড় উঠে, যা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়৷ নারী নির্যাতনের শিকার হলে বিচারের জন্য আদালতের দারস্থ না হয়ে মেকআপের সাহায্যে নির্যাতনের চিহ্ন ঢেকে কেন অফিস বা চাকরি ক্ষেত্রে যাবে এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই৷ নারী বিষয়ক এই অনুষ্ঠানটি ঐ চ্যানেলে প্রতিদিন সকালে প্রচারিত হয়৷
এদিকে, মরক্কোর অডিও ভিজুয়াল মন্ত্রণালয়ে অন্তত দুই হাজার ব্যক্তি চ্যানেলের বিরুদ্ধে একটি আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন৷ এরপর মন্ত্রণালয় একটি জরুরি বৈঠক ডাকে৷ সরকারি ‘টুএম' চ্যানেল এ সাবাহায়ৎ ছ'বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে৷ যার বক্তব্য ‘‘প্রতিটি নারীর প্রতিটি বিষয় মূল্যবান''৷ অনুষ্ঠানটির প্রধান প্রযোজক এক বিবৃতিতে জানান, ‘‘‘টুএম'-এর পুরো টিমের পক্ষ থেকে আমি এই অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি৷ আমরা আপনাদের অনুভূতিকে সম্মান জানাই৷ আশা করছি ভবিষ্যতে এমন আর কোনো ঘটনা ঘটবে না৷''
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
অ্যাসিড সন্ত্রাস!
একটা সময় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আসতো নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের খবর৷ এমন বর্বরোচিত হামলা এখনও হয় কিছু দেশে৷ কয়েকটি দেশ ঘুরে জার্মান ফটোগ্রাফার অ্যান-ক্রিস্টিন ভোর্ল-এর তোলা ছবি নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Griebeler
বাংলাদেশের ফরিদা
ফরিদার স্বামী ছিলেন ড্রাগ এবং জুয়ায় আসক্ত৷ ঋণের দায়ে একসময় বাড়িটাও বিক্রি করে দেয় নেশাগ্রস্ত লোকটি৷ রেগেমেগে ফরিদা বলেছিলেন, এমন স্বামীর সঙ্গে আর ঘর করবেন না৷ সেই রাতেই হলো সর্বনাশ৷ ঘুমন্ত ফরিদার ওপর অ্যাসিড ঢেলে দরজা বন্ধ করে দিল পাষণ্ড স্বামী৷ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন ফরিদা৷ প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তাঁকে৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
মায়ের স্নেহে, বোনের আদরে...
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়ার সময় ফরিদা ছিলেন ২৪ বছরের তরুণী৷ ১৭টি অস্ত্রোপচারের পর এখন কিছুটা সুস্থ৷ তবে সারা গায়ে রয়েছে দগদগে ঘায়ের চিহ্ন৷ পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলোর ত্বক মসৃণ রাখতে প্রতিদিন মালিশ করে দেন মা৷ নিজের কোনো বাড়ি নেই বলে মায়ের সাথেই বোনের বাড়িতে থাকেন ফরিদা৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
উগান্ডার ফ্লাভিয়া
ফ্লাভিয়ার ওপর এক আগন্তুক অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল ৫ বছর আগে৷ আজও ফ্লাভিয়া জানেন না, কে, কেন তাঁর ওপর হামলা চালালো৷ বিকৃত চেহারা নিয়ে অনেকদিন ঘরেই ছিলেন৷ বাইরে যেতেন না৷ এক সময় ফ্লাভিয়ার মনে হলো, ‘‘এভাবে ঘরের কোণে পড়ে থাকার মানে হয় না৷ জীবন এগিয়ে চলে৷ আমাকেও বেরোতে হবে৷’’
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আনন্দময় নতুন জীবন
এখন প্রতি সপ্তাহে একবার সালসা নাচতে যায় ফ্লাভিয়া৷ আগের সেই রূপ নেই, তাতে কী, বন্ধুদের কাছে তো রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি! ফ্লাভিয়া খুব ভালো নাচ জানেন৷ তাই একবার শুরু করলে বিশ্রামের সুযোগই পান না৷ এভাবে পরিবার আর বন্ধুদের সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ফ্লাভিয়া৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
ভারতের নীহারি
নীহারির বয়স তখন ১৯৷ একরাতে আত্মহত্যা করার জন্য আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের শরীরে৷ স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি মনে হয়েছিল তখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
নতুন রূপ
যে ঘরটিতে বসে নীহারি তাঁর চুল ঠিক করছেন এটা ছিল বাবা-মায়ের শোবার ঘর৷ এখানেই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন৷ দেয়াশলাইয়ের বাক্সে একটা কাঠিই ছিল৷ তা দিয়েই আগুন জ্বালিয়েছিলেন শরীরে৷ তবে এখন আর দুর্বল মনের মেয়েটি নেই নীহারি৷ নিজেকে সামলে নিয়ে একটা সংস্থা গড়েছেন৷ সংস্থাটির নাম, ‘পোড়া মেয়েদের রূপ’৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
পাকিস্তানের নুসরাত
দু-দুবার অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে নুসরাতের ওপর৷ প্রথমে স্বামী আর তারপর দেবর৷ ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন নুসরাত৷ ভালোই আছেন এখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আশার আলো
দু-দুবার অ্যাসিড হামলার শিকার হওয়ায় মাথার অনেকটা চুলও হারিয়েছেন নুসরাত৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাথার ক্ষতস্থান পুরোপুরি সারিয়ে চুল এবং আগের হেয়ারস্টাইল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
বন্ধুদের মাঝে...
নিজের ভাবনা, যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে কিংবা গল্প করতে প্রায়ই অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এ যান নুসরাত৷ সেখানে এমন অনেকেই আসেন যাঁদের জীবনও অ্যাসিডে ঝলসে যেতে বসেছিল৷ এখন সকলেই জানেন, তাঁরা আর একা নন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
9 ছবি1 | 9
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নারী নির্যাতনকে আরো উসকে দেয়া হয়েছে – এ কথাটা কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷