মেক্সিকোর সংবিধানে বিনোদনের উদ্দেশ্যে গাঁজা মানে মারিজুয়ানা সেবনের উপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা বাতিল করছে দেশটির উচ্চ আদালত।
ছবি: Reuters/L. Cortes
বিজ্ঞাপন
উচ্চ আদালতের ১১ সদস্যের বিচারক প্যানেলের আটজনই এ সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন।
এ রায়ের ফলে দেশটিতে যারা বিনোদনের জন্য গাঁজা খেতে বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাঁজা চাষ করতে চাইবেন তারা সরকারের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে এমন অনুমতির পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত।
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, গাঁজা সেবনকারী প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং সেবনকারী ব্যক্তির শরীরের উপর গাঁজার প্রভাব থাকা অবস্থায় তিনি বিপজ্জনক কাজ যেমন গাড়ি চালাতে পারবেন না। তাছাড়া শিশুদের বেলায় এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। আরোপিত শর্তের মধ্যে আরো রয়েছে, কোনো ব্যক্তি পাঁচ গ্রামের বেশি গাঁজাবহন করতে পারবেন না।
গাঁজা চাষে ভবিষ্যৎ দেখছে পাকিস্তান
২০২১ সালে শিল্পের জন্য বৃহদাকারে গাঁজা চাষের অনুমতি দেয়ার পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান সরকার৷
ছবি: NDR
গাঁজার বাজার
অনেকের কাছে মাদক হিসেবে পরিচিত হলেও চিকিৎসায় গাঁজা ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে৷ ঔষধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা৷ বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল মার্কেট ইনসাইটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে গাঁজার বৈধ বাজারের আকার ৫৯ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Medina
জাতিসংঘে ভোটাভুটি
সম্প্রতি সদস্য দেশগুলোর এক ভোটাভুটির মাধ্যম গাঁজাকে কঠিন মাদকের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় গাঁজার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত৷ এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এই বিষয়ে জাতিসংঘকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল৷
ছবি: Nature Picture Library/imago images
পাকিস্তানের পরিকল্পনা
গত কয়েক বছর ধরেই ভালো যাচ্ছে না পাকিস্তানের অর্থনীতি৷ দেশটির কৃষি শিল্প পড়তির দিকে৷ রপ্তানির ৬৪ ভাগ যেই তুলা থেকে আসে ২০১৯ সালে তার উৎপাদন ২০ ভাগ কমেছে৷ এ কারণে লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা৷ সেই জায়গায় গাঁজা চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে দেশটির সরকার৷
ছবি: Imago Images/All Canada Photos
শতকোটি ডলারের হাতছানি
শিল্পে ব্যবহারের জন্য গাঁজা চাষের অনুমতি দেবে পাকিস্তান৷ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এমন ঘোষণা এসেছে সরকারের তরফ থেকে৷ দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের একটি অংশ ধরতে পারলে তিন বছরে এই খাত থেকে পাকিস্তানের আয় দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার৷ যেখানে গোটা আন্তর্জাতিক বাজারের আকার এখন ২৫ হাজার কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/J. Marshall Mantel
পরিবেশ-বান্ধব ও সহজ চাষ
পাকিস্তানে বসবাসরত জার্মান পরিবেশবিদ হেলগা আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, গাঁজা এমনকি খারাপ আবহাওয়াতেও সহজে চাষ করা সম্ভব৷ ‘‘এর উৎপাদনে কোনো কীটনাশকের প্রয়োজন নেই, যার কারণে এটি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ৷ এমনকি অল্প জমিতেও এটি যথেষ্ট জন্মে এবং তুলার চাষের চেয়ে কম পানির প্রয়োজন হয়৷
ছবি: Richard Vogel/AP/picture alliance
গাঁজা-সংস্কৃতি
অ্যালকোহলের বিষয়ে রক্ষণশীল হলেও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যানাবিস বা গাঁজা উন্মুক্তভাবেই চাষ এবং বেঁচাকেনা হয়ে আসছে৷ বিশেষ করে আফগানিস্তানের কাছে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী অনেক আগে থেকেই গাঁজা চাষ করছে৷ সেসব ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও কার্যকর৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
6 ছবি1 | 6
মেক্সিকোতে ২০১৭ সাল থেকে চিকিৎসার কাজে গাঁজা ব্যবহারের অনুমতি আছে।
এদিকে গাঁজা সেবনের বৈধতা দিয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনো দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেস অব দ্যা ইউনিয়নে আটকে আছে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত গাঁজা সেবনের বৈধতা দিয়ে বিল পাস করতে কংগ্রেসকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল। গত মার্চ মাসে আইনটি মেক্সিকোর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাশ হয়। তবে এটি এখনো সিনেটে অনুমোদন পায়নি।
গত সোমবারের রায়ে আদালত দেশটির সংসদকে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের কথাও বলেছে। আইন পাশ হলে শুধু গাঁজা কেনাবেচাই নয় বরং গাঁজা চাষ পরিবহণ ও রপ্তানির প্রক্রিয়াও উন্মুক্ত হতে পারে।
গাঁজা সেবনের উপর নিষেধাজ্ঞা বাতিলের বিষয়ে দেশটিতে বিতর্ক রয়েছে। গাঁজা সেবনের সমর্থকগোষ্ঠীর দাবি, এর ফলে দেশে মাদক বিষয়ক অপরাধ কমে আসবে। আর বিরোধীরা বলছেন, এমন আইন শুধুমাত্র বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই লাভজনক। তাছাড়া, দেশটির ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোও এমন আইনের বিরোধীতা করছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ‘গাঁজা কফি’
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে গাঁজা মেশানো কফি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: AFP/C. Mahyuddin
আচেহতে শরিয়া আইন
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করা হয়৷ এরপর সেখানে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ অ্যালকোহল পান কিংবা প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার শাস্তি হিসেবে সেখানে বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি মাথার চুলও কেটে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
আচেহতে গাঁজার চাষ
আচেহতে একসময় গাঁজার চাষ বৈধ ছিল৷ সে সময় বাড়ির পেছনে অনেকে গাঁজা চাষ করতেন৷ তবে গত শতকের সত্তরের দশক থেকে গাঁজা চাষ অবৈধ করা হয়৷
ছবি: Fotolia/Opra
যেভাবে এসেছে
একদল বলেন, ডাচ ঔপনিবেশিকরা ঐ এলাকার সুলতানকে উপহার হিসেবে গাঁজা দিয়েছিলেন৷ তবে তারমিজি আব্দুল হামিদ নামের স্থানীয় এক ইতিহাসবিদ বলছেন, ডাচরা আসার আগে থেকেই আচেহতে গাঁজা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ ‘‘রান্না ও ওষুধ তৈরিতে গাঁজার ব্যবহার ছিল৷ অবশ্য গাঁজা সেবনের বিষয়টির উল্লেখ প্রাচীন কাগজপত্রে নেই,’’ বলে জানান তিনি৷
ছবি: Fotolia/Unclesam
বর্তমান অবস্থা
ছবিতে ইন্দোনেশিয়ার এক পুলিশ সদস্যকে গাঁজার গাছ পোড়াতে দেখা যাচ্ছে৷ গতবছর এভাবে ১০০ টনের বেশি গাঁজা গাছ পোড়ানো হয়৷ এছাড়া গাঁজা চাষী ও ব্যবহারকারীদের প্রায়ই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে৷ ইন্দোনেশিয়ায় এখন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে৷ মাদকপাচারে জড়িত থাকার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto/F. Reza
গাঁজা মেশানো কফি
পুরো দেশে যেখানে গাঁজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে শরিয়া আইন চালু থাকা একমাত্র রাজ্য আচেহতে গাঁজা মেশানো কফি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ বার্তা সংস্থা এএফপি আগুস (ছদ্মনাম) নামে এক কফি ব্যবসায়ীর তথ্য তুলে ধরেছে, যাঁর এক কেজি গাঁজা মেশানো কফি প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ আচেহ ছাড়াও অন্য রাজ্যের মানুষরাও তা কিনছেন৷
ছবি: AFP/C. Mahyuddin
আগুস ভয় পান না
আগুস এএফপিকে জানান, তিনি পুলিশকে ভয় পান না৷ ‘‘যে জিনিস সব জায়গায় পাওয়া যায় সেটা আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করবেন? এটা (গাঁজা) পুরো আচেহতেই আছে৷ অভিযানের কারণে শুধু মানুষের চোখের আড়ালে এর চাষ হচ্ছে,’’ বলেন তিনি৷ আগুস বলেন, তাঁর প্রতিদিনের ভয় হচ্ছে, কফি ও গাঁজার মিশ্রনটা ঠিকভাবে করা৷ ৭০ ভাগ কফির সঙ্গে ৩০ ভাগ গাঁজা মিশিয়ে কফি বানান তিনি৷ গাঁজার পরিমাণ একটু বেশি হলে কফির স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান আগুস৷