মঙ্গলবার মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ২১৭ জন মারা গেছেন৷ ধসে পড়েছে রাজধানী মেক্সিকো সিটির অসংখ্য ভবন৷ ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোরেলোস ও পুয়েবলা রাজ্যে৷
বিজ্ঞাপন
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, কোয়াপা এলাকায় একটি স্কুল ধসে ২০ শিশুসহ অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩০ শিশুসহ ৪২ জন আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো৷ তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত স্কুল, ভবন ও বাড়ির মধ্যে শিশুসহ অনেক মানুষ জীবন হারিয়েছে৷’’
বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ কয়েকটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ এমন এক সময় এই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলো যখন দেশটি ১৯৮৫ সালের আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের বার্ষিকী পালন করছিল৷
ভূমিকম্পের পরপরই উদ্ধার কাজ শুরু করেন উদ্ধারকর্মীরা৷ মেক্সিকো নৌবাহিনীর মেজর জোসে লুইস ভেরগারা জানিয়েছেন, শত শত সৈন্য, পুলিশ, বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবক এবং উদ্ধারকারী কুকুর দিয়ে এই উদ্ধার অভিযান সমন্বয়ের কাজ চলছে৷ তবে যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ায় তাতে বিঘ্ন ঘটছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো৷
প্রকৃতি ‘রাগ’ প্রকাশ করলে যা হয়
প্রতি বছর গড়ে দশ হাজারের মতো মানুষ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায়৷ ভূ-কম্পনের ফলে সুনামিসহ আরো বিস্তৃত দুর্যোগ সৃষ্টি হয়৷ ভয়াবহ কয়েকটি ভূমিকম্প সম্পর্কে জেনে নিই চলুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barret
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প
রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছে চিলির সমুদ্র উপকূলে, ১৯৬০ সালে৷ নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রায় দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল৷ তাতে অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেই সময় চিলিতে পাঁচ হাজার সতশ’র মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামিতে জাপানে ১৩০ ব্যক্তি এবং হাওয়াইতে মারা যায় ৬১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘গুড ফ্রাইডে’ ভূমিকম্প
এখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি ‘গুড ফ্রাইডে’ বা ‘গ্রেট আলাস্কান’ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত৷ ১৯৬৪ সালের ২৭ মার্চের সেই ভূমিকম্পে ১৩৯ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: Getty Images/Central Press
জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প
জাপানের রেসকিউ ডগ অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য এবং তাঁর কুকুর ভুক্তভোগীদের খুঁজছেন৷ জাপানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির আঘাতে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ এতে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Chiba
২০০৪-এর ভারত মহাসাগর ভূমিকম্প
সমুদ্রের তলদেশে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ১৪টি দেশের ২৮০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ এতে সমুদ্র উপকূলে একশ’ ফুট উঁচু অবধি ঢেউ আছড়ে পড়ে৷ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল এটি৷
ছবি: Getty Images/P.M. Bonafede/U.S. Navy
চিলি ভূমিকম্প, ২০১০
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিলির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উপকূলে আট দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ ভূমিকম্প এবং কম্পন পরবর্তী সুনামিতে প্রাণ হারায় ৪৫০ ব্যক্তি৷ এতে স্থানীয় মৎস শিল্পের প্রায় ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
চীনে ভূমিকম্প, ১৯৭৬
চীনের তাংজিশিয়ানের একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে কোচ৷ ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাইয়ের ভূমিকম্পে শিল্পঅঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২৪২,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর বেসরকারি হিসেব বলছে, প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচলাখের মতো৷
ছবি: Getty Images/Keystone/Hulton Archive
২০১০ হাইতি ভূমিকম্প
হাইতির পোর্ট অফ প্রিন্সে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারিতে সাত মাত্রার সেই ভূমিকম্পে কমপক্ষে দু’লাখ মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barret
7 ছবি1 | 7
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে পুয়েবলা রাজ্যের আতেনসিঙ্গো এলাকায়৷ কেন্দ্র ছিল ভূ-পৃষ্ঠের ৫১ কিলোমিটার গভীরে৷ বিবিসির খবেরে বলা হয়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বেলা ১টার পরপরই ভূমিকম্পে সব কিছু কাঁপতে শুরু করলে মানুষ আতঙ্কে রাস্তার বেরিয়ে আসে৷
মোক্সিকো সিটিতে ধসে পড়া একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন জোয়ান জেসাস গার্সিয়া নামে এক ব্যক্তি৷ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সেখানে আটকা পড়েছে৷ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না৷’
প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো দুর্গত এলাকায় জরুরি সেবা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন৷ মেক্সিকো রাজ্যের গভর্নর আলফ্রেড ডেল মাজো মাজা বুধবার সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছেন৷ সেই সঙ্গে গণপরিবহনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন জনসাধারণকে বিনা খরচে বাড়ি পৌঁছে দেয়৷
মেক্সিকোর জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এরই মধ্যে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্বনেতারা৷ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার পরিকল্পনার কথা জানালেও এই ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘মেক্সিকো সিটির বাসিন্দাদের ওপর সৃষ্টিকর্তা সদয় হোন৷ আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকব৷’’ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও শোক জানিয়ে টুইট করেছেন৷
ভূমিকম্পনপ্রবণ মেক্সিকোর দক্ষিণে চলতি মাসের শুরুতেই ৮ দশমিক ১ মাত্রার এক ভূমিকম্পে অন্তত ৯০ জন প্রাণ হারায়৷
এএম/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি)
মেক্সিকোতে চলতি মাসের শুরুতে আঘাত হানা ভূমিকম্প নিয়ে ছবিঘর...
মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্প
বৃহস্পতিবার রাত্রে একটি ৮ দশমিক ৪ শক্তির ভূমিকম্পে মেক্সিকোয় অন্তত পাঁচজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ বহু শহরে দেয়াল ধসে পড়েছে৷ মার্কিন সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র প্রথমে সুনামির সম্ভাবনার কথা বলেছিল৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/Xinhua
ক্ষয়ক্ষতি
গত ১০০ বছরে মেক্সিকোয় এত বড় ভূমিকম্প ঘটেনি৷ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো৷ এখনও প্রায় দু’লাখ মানুষ নিষ্প্রদীপ অবস্থায়৷ ছবিতে ওক্সাকা শহরে ভূমিকম্পে ধসে পড়া দেয়াল দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L.A. Cruz
ভীতি
রাতের অন্ধকারে ভূকম্পনে মানুষজন ত্রস্ত ও সচকিত হন৷ ভূমিকম্প এতোই তীব্র ছিল যে, ১,০০০ কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো সিটিতেও বাসিন্দারা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন – যদিও এই ভূকম্পন ১৯৮৫ সালের ভূমিকম্পের মতো বিধ্বংসী ছিল না৷ মেক্সিকো সিটিতে ১৯৮৫ সালের ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Estrella
কেন্দ্রবিন্দু
ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল চিয়াপাস রাজ্য থেকে ১২৩ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রবক্ষের ৩৩ কিলোমিটার গভীরে৷
ছবি: 2017 Google
ধ্বংস সর্বত্র
ভেরাক্রুজ বন্দরে সেনাসদস্যরা ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখছেন৷ ইতিমধ্যেই ভূমিকম্প পরবর্তী একাধিক ছোটখাট ভূকম্পন ঘটেছে, যাদের মধ্যে কয়েকটি রিশটার মানদণ্ডে ৫ শক্তির ছিল বলে প্রকাশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/V. Razo
লুটতরাজের আশঙ্কা
ভূমিকম্পের পর পুলিশ মেক্সিকো সিটির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাহারা দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/Xinhua
বিধ্বস্ত বিপণী
ওক্সাকা শহরের এই সুপারমার্কেটটির মতো বহু দোকানে তাক থেকে মালপত্র মাটিতে পড়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/El Universal
‘শপিং মল’ রেহাই পায়নি
চিয়াপাস রাজ্যের এই শপিং মলটির ক্ষয়ক্ষতি ৭ই সেপ্টেম্বরের রাত্রেই স্পষ্ট হয়ে যায়৷ বাড়িঘর, স্কুল ও হাসপাতালের অনুরূপ ক্ষতির কথা জানিয়েছেন রাজ্যের গভর্নর মানুয়েল ভেলাস্কো৷