শুধু পুলিশ নয়, সেনা বাহিনীর অফিসারেরাও ওই ছাত্রদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা জানতেন বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালে ৪৩ জন ছাত্রকে অপহরণ করা হয়েছিল মেক্সিকোয়। তার কিছুদিনের মধ্যেই একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়েছিল বিষয়টি নিয়ে সমান্তরাল তদন্ত চালানোর জন্য। মাঝে মেক্সিকোর সরকার বদলেছে। তদন্তি কমিটিকে নতুন করে কাজ শুরু করতে হয়েছে। অবশেষে মঙ্গলবার তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে।
রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সেনা, জলসেনা এবং পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তারা জানতেন ওই ছাত্রদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা তা জানাননি। ছাত্রদের উদ্ধারের ব্যবস্থাও করেননি। রিপোর্টের আশঙ্কা, ওই কর্মকর্তারা সরাসরি ড্রাগ মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত অথবা তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। সে কারণেই তারা ওই ছাত্রদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি।
গ্রেপ্তার এল চাপোর ছেলে, জ্বলছে মেক্সিকো
ড্রাগ মাফিয়া এল চাপোর ছেলে ওভিদিও গুজম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারপরেই কার্যত দাঙ্গা শুরু হয়েছে মেক্সিকোয়।
ছবি: HO/CEPROPIE/AFP
কার্যত যুদ্ধ
যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারায় উত্তর মেক্সিকোর কুলিয়াকান অঞ্চল। স্থানীয় মানুষদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। লড়াই চলছে সিনালোয়া কার্টেল বা সিনালোয়া ড্রাগ মাফিয়ার গ্যাংয়ের সঙ্গে পুলিশের।
ছবি: REUTERS
বন্ধ বিমানবন্দর
কুলিয়াকান বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গুলির লড়াই বিমানবন্দরের ভিতরেও হয়েছে। একটি যাত্রীবাহী বিমান লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়েছে। তবে ঘটনায় হতাহতের খবর নেই।
ছবি: REUTERS
গ্রেপ্তার মাফিয়া
মেক্সিকোর প্রধান দুই মাদক মাফিয়ার অন্যতম এল চাপো। তার গ্যাং সিনালোয়া গ্যাং বলে পরিচিত। কার্যত সমান্তরাল সরকার চালায় তারা। এল চাপো আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর সরকার তার ছেলে ওভিদিও গুজম্যানকে গ্রেপ্তার করে।
ছবি: CEPROPIE/AP/picture alliance
আগের ঘটনা
এর আগে ২০১৯ সালে ওভিদিওকে আরো একবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তাকে ছেড়ে দিতে হয়। গোটা উত্তর মেক্সিকোয় দাঙ্গা এতটাই শুরু হয়েছিল যে, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এবারও সেই একইভাবে দাঙ্গা শুরু হয়েছে।
ছবি: Fernando Llano/AP Photo/picture alliance
কড়া নিরাপত্তা
দাঙ্গার মধ্যেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ওভিদিও-র জন্য। এই গাড়িতে করেই তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছবি: Luis Barron/eyepix via ZUMA Press Wire/Zumapress/picture alliance
এল চাপো অ্যামেরিকায়
২০১৪ সালে মেক্সিকো সরকার এল চাপোকে প্রথম গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু জেলের ভিতর সুড়ঙ্গ বানিয়ে পালিয়েছিল সে। ২০১৬ সালে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। গোটা মেক্সিকোয় যা নিয়ে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। ২০১৯ সালে তাকে অ্যামেরিকার জেলে পাঠানো হয়। আপাতত সেখানেই বন্দি সে।
ছবি: Jose Mendez/dpa/picture alliance
মেক্সিকোর সরকার
মেক্সিকোর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে মাদক পাচারকারীরা। তাদের ক্ষমতা অপরিসীম। তবে মেক্সিকোর বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছে, মাদক মাফিয়াদের সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়া হবে। এর আগে এল চাপোর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ায় দেশের সরকারের মুখ পুড়েছিল। এবার আর তা ঘটবে না বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
ছবি: AFP
7 ছবি1 | 7
বস্তুত, ওই ছাত্রদের অপহরণের পিছনেও পুলিশ এবং সেনার হাত থাকতে পারে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এর সঙ্গে জড়িত বলে জানানো হয়েছে। ৪৩ জনের মধ্যে ১৭ জন ছাত্র কোথায় আছে, সেই রিপোর্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, ওই ঘটনার পর সেনা এবং জলসেনা বেশ কয়েকটি ভুয়া অপারেশন চালায় বলে অভিযোগ। সেখানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তিদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই ব্যক্তিদের উপর অত্যাচার চালিয়ে ভুল জবানবন্দি আদায় করার চেষ্টা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
মঙ্গলবার এই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গেছে মেক্সিকোয়। এর আগেও সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে ড্রাগ মাফিয়াদের যোগাযোগের অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে। কিন্তু এত স্পষ্ট করে লিখিত আকারে এমন অভিয়োগ বিরল।
২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইগুয়ালা শহর থেকে ৪৩ জন ছাত্র নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে জানা যায়, ড্রাগ মাফিয়ারা তাদের অপহরণ করেছে। বহু তদন্তের পরেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। অনেক পরে তিনজন ছাত্রেদর লপোড়া দেহাংশ মেলে। বাকি ছাত্রদেরও মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা।