মেক্সিকোয় অক্টোপাস প্রজননের উদ্যোগ
১৪ এপ্রিল ২০২২তিনটি হৃৎপিণ্ড ও আটটি হাত থাকায় অক্টোপাস সত্যি অসাধারণ এক প্রাণী৷ সেই হাতের মধ্যেই আবার মস্তিষ্কের সিংহভাগ ছড়িয়ে রয়েছে৷ ৫০ কোটি স্নায়ুর কোষ এই প্রাণীকে বিশাল ক্ষমতা জোগায়৷ অক্টোপাস অত্যন্ত চালাক৷ পরিবেশ অনুযায়ী এই প্রাণী নিজের আকার, রং, এমনকি ত্বকের চরিত্রও বদলাতে পারে৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে কার্লোস রোসাস ভাস্কেস বলেন, ‘‘এই প্রাণী অনায়াসে নিজেকে পাথরে রূপান্তরিত করতে পারে৷ দেখলে মনে হবে গায়ে শেওলা ধরেছে৷ অথবা অতিকায় চেহারা ধারণ করে লাল হয়ে উঠতে পারে৷''
মেক্সিকোর উপকূলবর্তী সিসাল শহরের উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কার্লোস রোসাস অক্টোপাসের জন্য আদর্শ পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করছেন৷
এখনো পর্যন্ত পাওয়া গবেষণার ফল অনুযায়ী পানির তাপমাত্রা বাড়লে অক্টোপাস বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং কম ডিম পাড়ে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চলতে থাকলে সেটা একটা সমস্যা হয়ে উঠতে পারে৷ কার্লোস বলেন, ‘‘আমরা আজ জানি, যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাকি বিশ্বের মতো ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরও আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে৷ আমরা এমন মডেল সৃষ্টি করতে চাই, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অক্টোপাসের সংখ্যা হ্রাসের পূর্বাভাস দেওয়া যায়৷''
এখনো ইয়ুকাটান উপকূলের কাছে যথেষ্ট সংখ্যক অক্টোপাস রয়েছে৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী কম ফ্যাটযুক্ত এই প্রাণীর চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এরই মধ্যে অক্টোপাসের অভাব দেখা যাচ্ছে৷
সিসালের অক্টোপাস শিকারি আন্টোনিও কক গত মরসুমের ব্যবসা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে, এমনকি অক্টোবর পর্যন্ত দারুণ ব্যবসা হয়েছে৷ কত সময় ধরে আমি কাজ করতে প্রস্তুত, তার উপর সাফল্য নির্ভর করে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুপুর একটার মধ্যেই আমার নৌকা ভরে যায়, ৫০০ থেকে ৬০০ পেসো আয় হয়৷ যারা গোটা দুপুর ধরে অক্টোপাস ধরে, তাদের দুই বা তিন হাজার পেসো আয় হয়৷''
অতিরিক্ত মাছ ধরার প্রবণতার কারণে আন্টোনিও ককের মনেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ সে কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে মিলে এক প্রজনন কেন্দ্র থেকে অক্টোপাস বিক্রির পথ বেছে নিয়েছেন৷ সমুদ্র থেকে অক্টোপাস ধরা বন্ধ করে এভাবেই কাজ করতে চান তিনি৷ আন্টোনিও মনে করেন, ‘‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প হলেও অবশ্যই সাফল্য আসবে৷ আমি সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত৷''
অক্টোপাসের কৃত্রিম প্রজনন বিশ্বব্যাপী মৎস শিল্পের অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷ স্যামন বা চিংড়ি মাছের তুলনায় অক্টোপাস বন্দিদশা মোটেই পছন্দ করে না এবং দ্রুত মরে যায়৷ কিন্তু মেক্সিকোর গবেষকদের একটি সুবিধা রয়েছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে মায়া প্রজাতির অক্টোপাস অত্যন্ত শক্তপোক্ত৷ জীববিজ্ঞানী কার্লোস রোসাস ভাস্কেস বলেন, ‘‘এই প্রাণীটির বয়স দুই মাস৷ মায়া অক্টোপাস অত্যন্ত ভালো প্রজাতি৷ প্রথমত, সবাই মিলে এই ট্যাংকের মধ্যে থাকতে এই প্রাণীর কোনো সমস্যা হয় না৷ পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সদ্ভাব রয়েছে৷ তাছাড়া মাদি অক্টোপাসের ডিম থেকে শূককীটের বদলে সরাসরি শাবক বেরিয়ে আসে৷''
অক্টোপাসের অন্যান্য প্রজাতি প্যারালার্ভা হিসেবে শাবকের জন্ম দেয়৷ সেই পর্যায়ে অনেক শূককীট মরে যায়৷ সিসালের অক্টোপাস এক ধাপ এগিয়ে থাকায প্রজননের উদ্যোগ বিস্ময়কর রকম সাফল্য পাচ্ছে৷
কাটিয়া ড্যোনে/এসবি