মেক্সিকোর দক্ষিণপূর্ব রাজ্য ভেরাক্রুজ থেকে প্রায় ৬০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ৷ এদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি৷
বিজ্ঞাপন
১২টি দেশের প্রায় ৬০০ অভিবাসীকে দুইটি ট্রাকটর-ট্রেইলারের পেছনে গাদাগাদি অবস্থায় পাওয়া যায়৷ মেক্সিকোর ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউট-আইএনএম জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই প্রতিবেশি গুয়াতেমালার৷
উদ্ধারকৃতদের ১৪৫ জন নারী ও ৪৫৫ জন পুরুষ৷ এর মধ্যে ৪১০ জন গুয়াতেমালার৷ অন্য দেশগুলোর মধ্যে ৫৩ জন হন্ডুরাসের, ৪০ জন ডমিনিকান রিপাবলিকের, ২৭ জন নিকারাগুয়ার, ১৮ জন এল সালভাদরের, ভেনেজুয়েলা ও ইকুয়েডরের চারজন রয়েছেন৷ কিউবা থেকে এসেছেন আটজন৷
এছাড়া বাংলাদেশের ৩৭ জন, ভারতের একজন, ঘানার ছয়জন ও ক্যামেরুন থেকে আসা একজনকেও উদ্ধার করা হয়৷
বার্তা সংস্থা এএফপির এক ভিডিওতে কয়কশো অভিবাসীকে আইএনএম এর কার্যালয়ের সামনে জনাকীর্ণভাবে আটকে রাখতে দেখা যায়৷ এ সময় দাঙ্গা পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে৷ একে একে নাম ধরে ডাকার পর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তাদেরকে একটি বাসে তোলা হচ্ছিল৷ এসময় অভিবাসীদের বিষন্ন ও ক্লান্ত দেখাচ্ছিল৷
আছেন গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ মানুষ
দুইটি ট্রাকের ট্রেইলারে তাদেরকে গাদাগাদি অবস্থায় পাওয়া যায় বলে জানান স্থানীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান টোনাটিউহ হার্নান্দেজ৷ তিনি বলেন, ‘‘এদের মধ্যে শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্করা আছেন, গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ মানুষও আমি দেখেছি৷’’
আইএনএম তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, আটককৃতদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে নয়তো মেক্সিকোতে বৈধভাবে থাকার সুযোগ দেয়া হতে পারে৷
মেক্সিকো দীর্ঘদিন ধরে মধ্য অ্যামেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের করিডোর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে৷ তাদেরকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল নির্মাণসহ অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছিল৷ তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই বিষয়ে মানবিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অনুমতিবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্রোত বেড়েছে৷
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭ লাখ মানুষ অবৈধ উপায়ে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, যা এই সময়ের হিসাবে সর্বকালের সর্বোচ্চ৷
এফএস/এডিকে (এএফপি, রয়টার্স)
অবৈধ উপায়ে ইউরোপে প্রবেশে বাধার দেয়াল
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্তে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ প্রাচীর নির্মাণ শেষ করেছে গ্রিস৷ বেলারুশ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ডও সীমান্তে দেয়াল তোলার উদ্যোগ নিয়েছে৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
ইরান সীমান্তে তুরস্কের প্রাচীর
পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে ইরান হয়ে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করেন এশিয়া থেকে আসা ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ তাদেরকে বাধা দিতে ইরানের সঙ্গে ৫৩৪ কিলোমিটার সীমান্তে তিন মিটার উঁচু দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে ১৫৬ কিলোমিটারের নির্মাণ৷ আরো ৬৪ কিলোমিটার যোগ হবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
আফগান শরণার্থী ঠেকাতে তোড়জোড়
এই পথে পায়ে হেঁটে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের নাগরিক৷ সরকারি হিসাবে এক লাখ ৮২ হাজার আফগান রয়েছেন তুরস্কে৷ অনিবন্ধিতের সংখ্যা আরো প্রায় এক লাখ ২০ হাজার৷ তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অনিয়মিত এই অভিবাসন আরো বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দেয়াল তুলেই তাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা তুরস্কের।
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
দুর্ভেদ্য সীমান্ত!
তুরস্কের ইরান সীমান্তবর্তী ভ্যান প্রদেশের গভর্নর রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা গোটা পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করা অসম্ভব৷’’ তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর দেয়ালের কাজ পরিদর্শনে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা থার্মাল ইমেজিংসহ অন্ধকারে কাজ করতে সক্ষম এমন যন্ত্রপাতি সজ্জিত এক হাজার নজরদারি যান দিয়ে কাজ করছি৷’’
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
৮০ দিনের পদযাত্রা
এরপরও কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে এই পথে তুরস্কে প্রবেশ করছেন৷ গত ২১ আগস্ট ভ্যান শহরে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী৷ তাদের বেশিরভাগই আফগান নাগরিক। গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ২০ বছর বয়সি জায়নুল্লাহ জানান, ৮০ দিন পায়ে হেঁটে তিনি তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান৷
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
গ্রিসের সীমান্ত প্রাচীর
তুরস্কের বাধা পেরিয়ে কেউ গ্রিস সীমান্তে এলে তাকে আরেক দেয়ালের মুখোমুখি হতে হবে৷ ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই প্রাচীরের নির্মাণ কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে গ্রিস সরকার৷ একে হাইটেক ওয়াল হিসেবে অভিহিত করে কর্তৃপক্ষ বলছে দেয়ালটিতে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
গ্রিসের নিরাপদ সীমান্ত!
দেয়াল নির্মাণে গ্রিসের তোড়জোড়েরও বড় কারণ আফগান শরণার্থী স্রোতের আশঙ্কা৷ ছয় বছর আগে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী ঢলকে ইঙ্গিত করে দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিটারাখি বলেছের, গ্রিসকে তারা ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবেশ দুয়ার হিসেবে আর ব্যবহার করতে দেবেন না৷ দেশটির নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী মিখালিস ক্রিসকোডিস আশা করছেন, দেয়াল নির্মাণের ফলে গ্রিস এখন ‘নিরাপদ ও অনতিক্রম্য৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
দেয়াল তুলছে পোল্যান্ডও
পূর্ব ইউরোপ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে পোল্যান্ড৷ ২৩ আগস্ট দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলারুশ সীমান্ত জুড়ে দেয়াল তোলার ঘোষণা দেন, যার উচ্চতা হবে আড়াই মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট। নজরদারি বাড়াতে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে বলেও জানান তিনি৷ ছবিতে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে এখনকার কাঁটাতারের বেষ্টনী দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
লিথুয়ানিয়ার ৫০০ কিলোমিটার প্রাচীর
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তারাও বেলারুশ সীমান্তে ৫০৮ কিলোমিটার বিস্তৃত দেয়াল তুলবে৷ তিন মিটার বা দশ ফুট উচ্চতার এই বাধা নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ইউরোর বেশি৷ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিতে লিথুয়ানিয়ার একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mindaugas Kulbis/AP/picture alliance
লুকাশেঙ্কোর প্রতিশোধ!
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, চলতি বছর ৪১৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী বেলারুশ অতিক্রম করে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪৷ একই পরিস্থিতি লাটভিয়া ও পোল্যান্ডেরও৷ তাদের অভিযোগ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ৷ ইইউর অবরোধের জেরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিজেও জানিয়েছেন তার দেশ আর ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমে বাধা দেবে না।