বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জে কমপক্ষে ৩০০ যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবে গেছে মেঘনা নদীতে৷ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া লঞ্চের ২৭ জন যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে অন্যান্য যাত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি৷
বিজ্ঞাপন
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর কালিপুড়া এলাকায় মেঘনা নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়৷''
লঞ্চটি রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে৷ এমভি মিরাজ-৪ নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চটিতে ৩০০ জনের বেশি যাত্রী ছিল বলে জানান তিনি৷
লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর পরই স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজ শুরু করেন৷ সন্ধ্যার পর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও দুর্বার ঘটনাস্থলে পৌঁছায়৷ জেলা প্রশাসক জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান নির্ণয়ের পর সেটি উদ্ধারের কাজ শুরু হবে৷
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিক টিটো রহমান ডয়চে ভেলকে জানান, ‘‘জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিআইডাব্লিউটিএ-র কর্মকর্তারা লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হন৷ তবে তার আগে স্থানীয় মানুষ নৌকা এবং ইঞ্জিন বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন৷ তাঁরাই মূলত ভেসে যাওয়া লাশ উদ্ধার করেন৷''
তিনি জানান, লঞ্চটির অধিকাংশ যাত্রীই শরীয়তপুর-ফরিদপুর এলাকার বাসিন্দা৷ লঞ্চটি হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় বলে জানান তিনি৷
দক্ষিণ কোরিয়া উপকূলে ফেরি ডুবি
৪৭৫ জন আরোহী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ১৬ এপ্রিল একটি ফেরি ডুবে গেছে৷ এতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এখনো প্রায় ৩০০ জন নিখোঁজ, যাঁদের বেশিরভাগই স্কুল শিক্ষার্থী৷
ছবি: Reuters
প্রায় তিনশ যাত্রী নিখোঁজ
দক্ষিণ কোরীয় উপকূলে ৪৭৫ জন যাত্রী নিয়ে বুধবার ডুবে যায় ফেরিটি৷ ২৮৭ জন নিখোঁজ রয়েছে৷ ১৭৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে
ছবি: Reuters
বেশিরভাগই শিক্ষার্থী
ফেরিটিতে সৌলের কাছের একটি হাইস্কুলের ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী ছিল৷ সাথে ছিল ১৪ জন শিক্ষক৷ তাঁরা ফেরি করে মেইনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের জেজু দ্বীপে শিক্ষা সফরে যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
সতর্ক সংকেত
ফেরিটি যেখানে ডুবেছে সেখানে হেলিকপ্টার দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে এবং এখনও সে কাজ চলছে৷ ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় ফেরিটি বিপদ সংকেত পাঠায়৷ এর দুই ঘণ্টার মধ্যে এটি পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়৷
ছবি: Reuters
বড় ধরনের উদ্ধার কাজ
৫০০ ডুবুরি, ১৬৯ যান এবং ২৯টি বিমান উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে৷ নৌ-বাহিনী এবং কোস্ট গার্ড ফ্লাডলাইট ব্যবহার করে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে৷ তবে নিখোঁজদের স্বজনরা বলছেন, যা করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters
ডোবার কারণ
৬৮২৫ টনের এত বড় ফেরিটি কি কারণে ডুবে গেছে এটা নিশ্চিত নয়৷ তবে ফেরির ক্যাপ্টেন লি জুন সিউককে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ফেরিটি কোনো পাথরে ধাক্কা খায়নি৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে ক্ষোভ
সময় যত পেড়িয়ে যাচ্ছে, ততই স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে৷ এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীও তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন৷
ছবি: Reuters
দুর্ঘটনা বিরল
সৌলে ফেরির দুর্ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না৷ তাই এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি বলা হচ্ছে একে৷ এর আগে ১৯৯৩ সালে পশ্চিম উপকূলে ফেরি ডুবে ৩০০ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা৷
ছবি: Reuters
শিক্ষার্থীদের খুদে বার্তা
ফেরিটি যখন তলিয়ে যাচ্ছিল, তখন শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের খুদে বার্তা পাঠিয়েছিল৷ এক শিক্ষার্থী লিখেছে, ‘‘মা হয়ত এরপর আর কোনোদিন এটা বলতে পারব না, তাই শেষবারের মতো বলছি, তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা৷’’
ছবি: Reuters
এপ্রিলের দুঃস্বপ্ন
ফেরিটি যেখানে ডুবেছে সেখানকার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ফলে এত ঠান্ডায় টিকে থাকাটা অনেক কষ্টকর বলে জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
টিটো জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা এরই মধ্যে মেঘনার তীরে আসতে শুরু করেছেন৷ সেখানে স্বাভাবিকভাবেই এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে৷
গজারিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রাতেই উদ্ধার অভিযান শুরু হবে৷ তবে রাত ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করছে কত সময় লাগবে৷''
বাংলাদেশে এই মৌসুমে প্রতিবছর যাত্রীবহী লঞ্চডুবির ঘটনা বেড়ে যায়৷ গত ৩রা মে পটুয়ায়াখালীতে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ডুবে গিয়েছিল৷ এতে ১২ জনের মৃত্যু হয়৷
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মেঘনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ছিল তিন তলার৷ কিন্তু তিন তলা লঞ্চ আইনত অবৈধ৷ প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত লঞ্চডুবিতে বাংলাদেশে ৫ হাজারেরও বেশি যাত্রী নিহত হয়েছেন৷