মেঘফাটা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড, কেন হয় ক্লাউডবার্স্ট?
২৯ আগস্ট ২০২৫
উত্তরাখণ্ডে মেঘফাটা বৃষ্টির পর চকিত বন্যা হয়, ধস নামে। অনেক বাড়ি ভেঙে পড়ে, ভেসে যায়। গাড়িও ভেসে গেছে। রাস্তা ধুয়ে গেছে। সেতু ভেঙেছে। একাধিক গ্রাম বাইরের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খারাপ আবহাওয়া ও টেলি যোগাোযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সেখানকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের আশংকা, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে আটকে পড়েছেন।
দেয়ালের মোপাটা এলাকায় তারা সিং ও তার স্ত্রী নিখোঁজ। বিক্রম সিং ও তার স্ত্রী আহত। তাদের গোশালা ভেঙে পড়ে ১৫টি থেকে ২০টি পশু মারা গেছে।
রুদ্রপ্রয়াগের অনেক জায়গায় মেঘফাটা বৃষ্টির ফলে ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে। অলকনন্দা ও মন্দিকিনীতে জল বেড়েই চলেছে। দুই নদী যেখানে মিশেছে, সেখানে জল বাড়ছে। কেদারনাথ উপত্যকার লওরা গ্রামের কাছে জলের স্রোতে রাস্তা ও সেতু ভেসে গেছে।
চিনাগড়ের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেখানে নদীর জল আবাসিক এলাকায় ঢুকে গেছে। প্রশাসন দুর্গত মানুষদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গেছে। রুদ্রপ্রয়াগে হনুমান মন্দির পুরোপুরি ডুবে গেছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং ধামি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, রুদ্রপ্রয়াগের বাদেথ দুঙ্গার টক এবং চামোলির দিয়াল এলাকায় মেঘফাটা বৃষ্টি হয়েছে, বেশ কিছু পরিবার আটকে পড়েছেন।
মেঘফাটা বৃষ্টি কী?
যখন কোনো একটি ছোট এলাকায় অল্প সময়ের মধ্যে ভয়ংকর বৃষ্টিপাত হয়, তখন তাকে মেঘফাটা বৃষ্টি বলে। ক্লাউডবার্স্ট কথাটার মধ্যে বার্স্ট থাকলেও মেঘ বার্স্ট করে না। যখন ঘন মেঘ খুব অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি করে, তখন তাকে ক্লাউড বার্স্ট বলা হয়। অনেকসময় একটা গোটা মাস ধরে যা বৃষ্টি হওয়ার কথা, তা একঘণ্টায় হয়ে যায়। এরফলে বন্যা হয়, ধস নামে, ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কী করে মেঘফাটা বৃষ্টি হয়?
যখন গরম হাওয়া পাহাড়ের উপরে ওঠে এবং হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন বৃষ্টি হয়। এর কেতাবি নাম ওরোগ্রাফিক লিফট। খুব কম সময়ে বিপুল বৃষ্টি হয়। অনেকসময় ঠান্ডা ও গরম হাওয়া যখন হঠাৎ একসঙ্গে মিশে যায় তখন উঁচু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা জমা হয়। এর ফলে মেঘ থেকে দ্রুত ও বিপুল পরিমাণে বৃষ্টি হয়।
পাহাড়ে কেন হয়?
পাহাড়ে আর্দ্র হাওয়া দ্রুত উপরে ওঠে। হাওয়া যখন উপরে উঠছে, তখন তা দ্রুত ঠান্ডা হয়। আর্দ্রতা বৃষ্টিতে পরিণত হয়। পাহাড়, আদ্রতা, হঠাৎ হাওয়া ঠান্ডা হওয়ার ফলে সমতলের তুলনায় পাহাড়ে মেঘফাটা বৃষ্টি বেশি হয়।
মেঘফাটা বৃষ্টি কতটা ভয়ংকর?
মেঘফাটা বৃষ্টি খুবই ভয়ংকর। কারণ, এর ফলে চকিত বন্যা হয়, তা বাড়িঘর, রাস্তা, সেতু ধ্বংসের কারণ হয়। ২০১৩ সালে ক্লাউডবার্স্টের ফলে কেদারনাথে চার হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। মেঘফাটা বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়, ফোন লাইন বিকল হয়। মানুষ বাড়িঘর হারান। বনভূমির বিপুল ক্ষতি হয়। চাষের খেত কাদায় ঢেকে যায়। রাস্তাঘাট, সেতু ধ্বংস হয়।
কীভাবে নিরাপদে থাকা যাবে?
নিরাপদে থাকার জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরো উন্নত করতে হবে। যেখানে মেঘফাটা বৃষ্টি হয়, সেখানে আগে থেকে সতর্ক করে দেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মানুষকে শেখাতে হবে, প্রবল বৃষ্টি হলে তারা কী করবেন, জরুরি অবস্থা কীভাবে সামাল দেবেন। মানুষকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আগাম পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্লাউডবার্স্ট
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এত বেশি সংখ্যায় মেঘফাটা বৃষ্টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়নের ফলে মেঘফাটা বৃষ্টির সংখ্যা বাড়ছে। হাওয়া যত গরম হবে, তত তা জলকনা ধরে রাখবে। তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়ে গেলে পরিবেশ সাত শতাংশ বেশি আদ্রতা ধরে রাখে। এই অতিরিক্ত আদ্রতা যখন অনুকূল পরিবেশ পায় তখন তা প্রবল বৃষ্টিতে পরিণত হয়। তাছাড়া জয়বায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে হাওয়ার গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতও চরম ও বিচিত্র রূপ নিচ্ছে। গত পাঁচ দশকে প্রবল বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে। তারই একটা রূপ হলো ক্লাউডবার্স্ট।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই, ইকনমিক টাইমস)