মেঘের রহস্য আজও বিজ্ঞানীদের নাগালের বাইরে৷ তার মধ্যে জলীয় বাস্পের ক্রিয়া থেকে শুরু করে সূর্যের আলো ঢেকে দেবার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করছেন গবেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়? বৃষ্টি কখন হয়? বিজ্ঞানীদের কাছে আকাশ এখনো রহস্যে ভরা৷ আবহাওয়াবিদ প্রো. মানফ্রেড ভেনডিশ বলেন, ‘‘জলবায়ু গবেষণার ক্ষেত্রে মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট বিকিরণের প্রক্রিয়া সবচেয়ে অস্পষ্ট৷ ঠিক সে কারণেই এই প্রক্রিয়াগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷’’
যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের হিসাব রাখছে নাসা
প্রথমে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের হিসাব রেখেছে নাসা৷ পরে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে এখন আকাশ থেকে সেই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে তারা৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
অপারেশন আইসব্রিজ
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ক্রিয়োস্ফিয়ার কর্মসূচির অন্তর্গত ‘অপারেশন আইসব্রিজ’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে আকাশ থেকে মেরু অঞ্চলের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ ১৯৬৬ সালের লকহিড পি-৩ বিমান থেকে রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যেমে ঐ অঞ্চলের বরফের পুরুত্ব ও স্থান পরিবর্তনের হিসাব রাখছে নাসা৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
প্রস্তুতি চলছে
অপারেশন আইসব্রিজের মেয়াদ ছয় বছর৷ এর আওতায় মার্চ থেকে মে-তে গ্রিনল্যান্ডে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরে অ্যান্টার্কটিকায় আট ঘণ্টা করে কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে বরফের পাত ও খণ্ডের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
বিমানে আছে উচ্চ প্রযুক্তি
উপর থেকে কুয়াশার ভেতর দিয়ে ক্যানাডার এলেসমেয়ার দ্বীপের গ্লেসিয়ার দেখতে পাচ্ছেন৷ অপারেশন আইসব্রিজে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ ‘আইস-পেনিট্রেটিং রাডার’ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ বিমান নীচু দিয়ে উড়ে গেলে রাডারটি ভালো কাজ করে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
প্রভাব এখনই দেখা যাচ্ছে
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনই দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ উপরের ছবিতেও সেটি বোঝা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
বিকল্প ব্যবস্থা
অপারেশন আইসব্রিজ আসলে নাসার একটি বিকল্প ব্যবস্থা৷ কারণ ২০০৩ সালে একই কাজের জন্য ‘আইসস্যাট’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ চালু করেছিল তারা৷ কিন্তু ২০০৯ সালে সেটি হঠাৎ করে তথ্য সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দেয়৷ ফলে ‘আইসস্যাট-দুই’ নামে আরেকটি উপগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করেছে নাসা, যেটি আগামী বছর চালু হওয়ার কথা৷ ২০০৯ থেকে ২০১৮ – এই নয় বছরের তথ্যও যেন সংগ্রহে থাকে সেজন্য অপারেশন আইসব্রিজ শুরু করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
সীমাবদ্ধতা
আইসস্যাট-এর মাধ্যমে সারা বছর ধরে অনেক বিস্তৃত এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল৷ কিন্তু অপারেশন আইসব্রিজের সাহায্যে শুধু মেরু অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে এবং সেটিও মাত্র কয়েক মাসের জন্য৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
‘আইসস্যাট-দুই’ নিয়ে অনিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাসার আর্থ সায়েন্স প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ায় আগামী বছর এই কৃত্রিম উপগ্রহের কাজ শুরুর বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
7 ছবি1 | 7
কখনোগবেষণাকেন্দ্রটি সরাসরি মেঘে ঢেকে যায়৷ তখন বিজ্ঞানীরা মেঘের সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকরণও শুষে নেন৷ এই গবেষণাগারে সেই পদার্থ বিশ্লেষণ করা হয়৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে জানার চেষ্টা হয়, কীভাবে ও কখন বৃষ্টিভরা মেঘের উৎপত্তি ঘটে এবং মেঘ কীভাবে সূর্যের আলো আটকে দেয় অথবা বদলে দেয়৷ বায়ুমণ্ডল রসায়নবিদ স্টেফান ম্যার্টেস বলেন, ‘‘বায়ুমণ্ডলে বিকিরণের ক্ষমতার উপর মেঘের বড় প্রভাব রয়েছে৷ ফলে জলবায়ুর উপরও তাদের প্রভাব রয়েছে, যদিও তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি৷’’
পরিমাপের বেশিরভাগ যন্ত্র গোটা বছর ২৪ ঘণ্টা ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে, আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন৷ তাই সশরীরে উপস্থিত না থেকেও বিজ্ঞানীরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন৷
গোটা পাহাড় নিয়েওগবেষণা চলছে৷ সুগস্পিৎসে শৃঙ্গের চুনা পাথর সারা বছরই শীতে জমে থাকে৷ সেই স্থায়ী বরফ পাহাড়টিকে অটুট রাখে৷ অন্তত এখনো পর্যন্ত রেখেছে৷ সেই বরফ গলে গেলে পাহাড় ভঙ্গুর হয়ে ভেঙে পড়তে পারে৷
বিজ্ঞানীরা গোটা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের একটা সার্বিক চিত্র তৈরি করতে চান৷ সর্বাধুনিক পরিমাপ যন্ত্রের সাহায্যে তাঁরা আবহাওয়ার বিবর্তন থেকে শুরু করে জলবায়ুর উপর মানুষের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারছেন৷ অত্যন্ত উন্নত এক লেজারের সাহায্যে মেঘের কণা প্রায় নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা হচ্ছে৷ কারণ, মেঘ তার শীতল করার ক্ষমতার সাহায্যে জলবায়ুর উষ্ণায়নের মোকাবিলা করতে পারে৷
ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কতটা বৃষ্টি হবে, সেটা জানা গবেষকদের একটা বড় লক্ষ্য৷
বিশ্বের প্রথম স্থানান্তরযোগ্য গবেষণাগার
অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ‘হ্যালি সিক্স’ নামের এই গবেষণাগারটি এমনভাবে তৈরি যেন প্রয়োজন হলে খুব সহজেই তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যায়৷ ‘ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে’-এর গবেষণাগার এটি৷
ছবি: British Antarctic Survey
বিশ্বে প্রথম
২০১৩ সালে অ্যান্টার্কটিকায় যখন ‘হ্যালি সিক্স’-এর উদ্বোধন হয় তখন সেটe বিশ্বের প্রথম ‘রিলোকেটেবল’ বা স্থানান্তরযোগ্য গবেষণাগার হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ প্রায় ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত গবেষণাগারটি অ্যান্টার্কটিকার যে কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব৷
ছবি: British Antarctic Survey
আছে স্কি লাগানো পা
খেয়াল করে দেখুন গবেষণাগারটিতে আটটি আলাদা অংশ একটি আরেকটির সঙ্গে জোড়া লেগে আছে৷ প্রতিটি অংশের চারটি করে হাইড্রোলিক পা আছে৷ এসব পায়ের নীচে আছে বিশেষ স্কি, যার সাহায্যে প্রতিটি অংশকে সহজে ঠেলে এদিক-সেদিক নেয়া যায়৷
ছবি: British Antarctic Survey
ইতিমধ্যে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে
যে বিশাল ফাটলটি দেখতে পাচ্ছেন সে কারণে হ্যালি সিক্সকে একবার তার আগের জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে হয়েছে৷ ‘ব্রান্ট আইস সেলফ’ নামে অ্যান্টার্কটিকার যে অংশে গবেষণাগারটি আছে সেখানে এই ফাটল দেখা দিয়েছে৷
ছবি: British Antarctic Survey
আরও একটি কারণে প্রথম
হ্যালি সিক্সই প্রথম গবেষণাগার যেটি ওজন স্তরে বিভিন্ন ছিদ্র থাকার খবর দিয়েছে৷ এছাড়া মহাকাশের আবহাওয়া, ওজন ডিপ্লেশন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন সেখানকার বিশেষজ্ঞরা৷
দুই নম্বর ছবিতে হ্যালি সিক্সের মাঝখানে বড় লাল রঙের যে অংশটি দেখেছেন এই ছবিতে সেটিই আলাদাভাবে দেখতে পাচ্ছেন৷ এখানে গবেষক সহ অন্যরা আড্ডার জন্য জমায়েত হন৷ গ্রীষ্মকালে ৭০ আর শীতের সময় ১৬ জন থাকেন গবেষণাগারে৷
ছবি: British Antarctic Survey
আলোর নাচন
হ্যালি সিক্স এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে বছরের ১০৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই আঁধার থাকে৷ চরম আবহাওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই বাকি বিশ্বের সঙ্গে সেখানকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ তবে সেখানে শুধু যে খারাপ সময়ই যায় তা নয়৷ প্রায়ই সেখানকার বাসিন্দারা রাতের বেলায় আকাশে আলোর নাচন ‘অরোরা অস্ট্রালিস’ দেখতে পান৷