রাজধানীর চিরচেনা যানজট এড়াতে সাড়ে ছয় বছর আগে উত্তরায় দেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল, ২০২২ সালের শেষে এসে আজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তা পরিণতি পেল৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দেশের প্রথম এ বৈদ্যুতিক গণপরিবহনের উদ্বোধন করেন, যার মধ্যে দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ৷
বেলা ১১টায় দিয়াবাড়ি খেলার মাঠে তৈরি উদ্বোধনী মঞ্চে মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান৷ এরপর বায়তুর মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মোনাজাত করেন৷
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম রওশন আরা মান্নান, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবীব আহসান, সচিব এ বিএম আমিনুল্লা নূরী, প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন এবং ডিএমসিটিএল এর এমডি এম এ এন ছিদ্দিক৷
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁওপর্যন্ত ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার৷ বুধবার উদ্বোধন হলেও সাধারণ মানুষ স্বপ্নের এই রেলে চড়তে পারবেন পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে৷ যাত্রীদের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে মেট্রোরেলে সুশৃঙ্খলভাবে চড়তে হবে৷
মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার৷ সেই হিসাবে দিয়াবাড়ির উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হবে ৬০ টাকা করে৷
বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ইতোমধ্যে মানুষকে মেট্রোরেলে সেবা দেওয়া হচ্ছে৷ কেবল চীনেই ৪৬টি মেট্রো সিস্টেম রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে রয়েছে ১৫টি করে৷ অবশেষে বাংলাদেশও সেই ক্লাবে যোগ দিয়েছে৷
২০১৬ সালে ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দীর্ঘ পথ পরিক্রমা পেরিয়ে সাড়ে ছয় বছর পর তিনিই এ নতুন বাহন উদ্বোধন করলেন৷
৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়৷ উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইনের নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি-৬৷
সূচি ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা যানজটের যন্ত্রণা অনেকটাই লাঘব হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
যেমন দেখা গেল বাংলাদেশের উড়াল মেট্রোরেল
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে দেখা হয়েছে৷ ২০২২ সালে মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন ঢাকাবাসী৷ ছবিঘরে থাকছে এই প্রকল্পের তথ্য ও পরীক্ষামূলক যাত্রার চিত্র৷
ছবি: Habibur Rahman/ABACA/picture alliance
ঢাকাবাসীর স্বপ্ন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যাতায়াতের অন্যতম অনুষঙ্গ মেট্রোরেল৷ অবশেষে বাংলাদেশের রাজধানীর বাসিন্দারাও পাচ্ছেন এই যানে চড়ার সুযোগ৷ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন নগরবাসী৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
পরীক্ষামূলক যাত্রা
২৯ আগস্ট ছয়টি বগি নিয়ে দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে মিরপুর ১২ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার ডিপোতে ফেরে ট্রেনটি৷ সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে মেট্রোরেলের এই পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
২৫ কিলোমিটার গতি
ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরা উত্তর, উত্তর সেন্টার ও উত্তর দক্ষিণ স্টেশন পাড়ি দিয়ে মিরপুরের পল্লবী স্টেশনে গিয়ে থামে ট্রেনটি৷ এরপর ফিরে আসে ডিপো এলাকায়৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
ট্রেনের ভিতরে
ট্রেনের ভিতরে দুইপাশে থাকছে বসার আসন৷ মাঝখানে দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা৷ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ ভিতরে থাকবে যাত্রা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শনের ডিসপ্লে-প্যানেল৷ হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি ট্রেনের কোচগুলোতে থাকবে নির্ধারিত স্থান৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
১৬ টি স্টেশন
পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করবে মেট্রোরেল৷ ১৬ টি স্টেশন থেকে যাত্রীরা উঠানামা করতে পারবেন৷ স্টেশনগুলো হলো: উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
স্টেশন যেমন হবে
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, ‘‘টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দোতলায় এবং ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম থাকবে তিনতলায়৷ প্রত্যেকটি মেট্রোরেল স্টেশনে লিফট, চলন্তসিঁড়ি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকেট সংগ্রহের মেশিনসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক ব্যবস্থা থাকবে৷’’ ট্রেনে চলার জন্য র্যাপিড পাস ব্যবহার করতে হবে৷
২৪ সেট মেট্রোরেল ট্রেন নিয়ে শুরু হবে এমআরটি লাইন-৬ নামের এই মেট্রোরেলের যাত্রা৷ প্রতি সেট ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কোচ থাকবে৷ পরবর্তীতে আরো দুইটি কোচ যোগ করা যাবে৷ প্রথম সেটের ছয়টি ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সেটের আরো ছয়টি কোচ ১ জুন ঢাকায় পৌঁছায়৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
অগ্রগতি
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ৷ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের ১২ কিলোমিটার লাইনে পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ৷ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হয়েছে ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ৷ এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা৷
মেট্রোরেল লাইন-৬-এর জন্য গত ২০১৭ সালে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দুই পাশে দুইটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে৷
ছবি: Habibur Rahman/ABACA/picture alliance
২০২২ সালে চালু
২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা সরকারের৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষের সময়সীমা ছিল৷ করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়৷ পরীক্ষামূলক যাত্রার আয়োজনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর মেট্রোরেল লাইন-ছয়সহ দেশের তিনটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে৷ বাকি দুটি প্রকল্প পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী ট্যানেল৷