কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের ডাক্তারির ছাত্ররা হস্টেলের দাবিতে ১০ জুলাই থেকে অনশন শুরু করেছেন৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড়৷
বিজ্ঞাপন
মেডিকেল কলেজে গত দু'বছর ধরে হস্টেলের জন্য কাউন্সেলিং বন্ধ ছিল৷ এই দু' বছরে ভর্তি হওয়া অনেক ছাত্র এবং তাঁদেরও সিনিয়র বহু ছাত্র হস্টেলে জায়গা পাননি৷ কিন্তু অবশেষে যখন ১১ তলা একটি নতুন হস্টেল তৈরি হলো, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সেখানে একমাত্র প্রথম বছরের, অর্থাৎ সদ্য ভর্তি হওয়া ডাক্তারি পড়ুয়াদেরই জায়গা দিলো৷ এতেই আপত্তি জানান সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা৷ তাঁরা প্রথমত দাবি করেন, ওই নতুন হস্টেলে তাঁদেরও থাকার জায়গা দিতে হবে৷ এবং বলেন, ছাত্রদের সিনিয়রিটি, এবং কে কত দূর থেকে কলকাতায় পড়তে এসেছেন, তার ভিত্তিতে হস্টেলে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ কিন্তু সিনিয়র ছাত্রদের এই দাবি মানেনি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ কারণ, হিসেবে তারা র্যাগিং প্রতিরোধে সর্বভারতীয় বিধির কথা বলছে, যেখানে প্রথম বছরের নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজের সিনিয়রদের থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা আবশ্যিক করা হয়েছে৷ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রকে নাকি এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে যে, তিনি যে কোনো মূল্যে সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের সংস্পর্শ থেকে নতুনদের দূরে রাখবেন৷
কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ যেভাবে জটিল হচ্ছে, এই অনড় অবস্থান নেওয়ার জন্য একটু বেশিই মূল্য দিতে হতে পারে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে৷ ১০ জুলাই ৬ জন ছাত্র অনশন শুরু করেছিলেন৷ পঞ্চম দিনে তাঁদের মধ্যে দু'জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ কিন্তু আরো দু'জন সঙ্গে সঙ্গে এসে তাঁদের জায়গা নিয়ে নেন৷ আর ১৮ জুলাই রাত থেকে আরো ১৫ জন এসে যোগ দিয়েছেন অনশনে৷ এর মধ্যে একদিন সিনিয়র ডাক্তাররা এসে ১২ ঘণ্টার এক প্রতীকী অনশনে বসে তাঁদের সমর্থন জানিয়ে গেছেন৷ মেডিকেল কলেজের ইনটার্ন ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁরা এই আন্দোলনের সঙ্গে আছেন৷ তেমন পরিস্থিতিতে তাঁরাও কাজ বন্ধ করে অনশনে বসবেন৷ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথম ৬ জন অনশনকারীর বাড়ি পুলিশের হাত দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল, যাতে তাঁরা নিজেদের সন্তানদের হঠকারী আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো, ওই ৬ জন তো বটেই, বাকি আন্দোলনকারীদের আত্মীয়-বন্ধুরাও একদিন এসে ওঁদের পাশে বসে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন যে, তাঁরাও সঙ্গে আছেন৷ অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এই শান্তিপূর্ণ অনশন আন্দোলনের খবর এবং অসংখ্য মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানাচ্ছেন৷
ফলে রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, যদিও তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্বেগজনক কিছু ধরা পড়েনি৷ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, তিনি চাপ এড়াতে না পেরে অসুখের ভান করলেন৷ একদিকে কলেজে, তাঁর ঘরের বাইরে অনশনরত ছাত্রদের চাপ, অন্যদিকে অজানা কোনো চাপ৷ সেই চাপ সম্ভবত রাজনৈতিক৷ শাসকদলের মদতপুষ্ট বাহুবলীরা ঘনঘন মেডিকেল কলেজ চত্বরে সদল ঘুরে যাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে৷ আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু এ ব্যাপারে বরং তাঁদের অধ্যক্ষের প্রতিই সহানুভূতিশীল৷ তাঁরা প্রকাশ্যেই জানাচ্ছেন, হয় অনশনরত ছাত্রদের ওপর পালটা চাপ দিতে, অথবা ছাত্রদের হয়ে সরকারের ওপর চাপ দিতেই এই শরীর খারাপের নাটক করছেন অধ্যক্ষ৷ এবং বিষয়টা যেখানে শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রদের স্পষ্ট ঘোষণা যে, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের মুখাপেক্ষী নন৷ কার মাথায় কে বসে আছে, সে নিয়ে ভাবিত নন তাঁরা৷ বরং তাঁদের হস্টেল সমস্যার সমাধানে তাঁরা এখনও তাঁদের প্রিন্সিপালের দিকেই তাকিয়ে৷
আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদেরই একজন, গৈরিক দে'র সঙ্গে এই আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় ডয়চে ভেলের৷ গৈরিক তাঁর সহপাঠী সহযোদ্ধাদের কথারই প্রতিধ্বনি করেন যে, নিজেদের ন্যায়সঙ্গত পাওনার জন্য লড়ছেন তাঁরা৷ তীব্র অভিমানও কাজ করছে ওঁদের মধ্যে৷ গৈরিক বললেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ যেহেতু অনশনরত ছাত্রদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন, ওঁরাও কলেজ কর্তৃপক্ষের বানানো মেডিকেল কাউন্সিলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন৷ নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল ওঁরা নিজেরাই রাখতে পারবেন৷’’
এক চুমুকেই ঠান্ডা
গরমের দাবদাহ শুরু হতে না হতেই কলকাতার রাস্তাঘাটে হরেক পানীয়ের সম্ভার৷ চিনা পরিব্রাজক ই-সিঙ সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় পেয়েছিলেন নানা পানীয়ের সুলুক সন্ধান৷ এ যুগেও সেই ধারা অব্যাহত৷
ছবি: DW/P. Samanta
গেলাসই গন্তব্য
অতীতে বাবুর বাড়ির অতিথি আপ্যায়নে শ্বেতপাথরের গেলাসে কেওড়ার গন্ধ মেশানো জলপানের চল ছিল৷ হাল আমলে অতিথিদের জন্য বরাদ্দ কাঁচের গেলাসে স্কোয়াশ বা রঙিন সরবত৷ তৃষ্ণার্ত পথচারীরা অবশ্য দইয়ের ঘোল, ঠান্ডা জল বা বেলের পানা পেলেই খুশি হন৷ উত্তর কলকাতার একটি সরবতের দোকানে৷
ছবি: DW/P. Samanta
লাল-নীল-সবুজের মেলা
রঙিন পানীয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ তাই বঙ্গজীবনে রঙ-বেরঙের ফ্লেভারের উৎপত্তি৷ এক বিন্দু রঙিন সিরাপ ঢেলে দিলেই মন ভালো হয়ে যায় জ্বালাপোড়া গরমেও৷ রাস্তাঘাটে তীব্র গরমে এমন বন্ধু আর কে আছে?
ছবি: DW/P. Samanta
খেয়ে আরাম খাইয়ে আরাম
যতই কৃত্রিম, রঙিন পানীয় বাজার দখল করুক না কেন, আজও বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে বিশুদ্ধ পাতিলেবুর জল৷ আদি ও অকৃত্রিম, বর্ণহীন লেবু জলের বিকল্প বাঙালি আজও পায়নি৷ দমদম স্টেশন চত্বরে লেবুজলের পসরা৷
ছবি: DW/P. Samanta
এসো শ্যামল সুন্দর
আগে গ্রামবাংলায় উনুনের মরা আগুনে কাঁচা আম পুড়িয়ে তার ফ্যাকাসে তুলতুলে শাঁস চটকে চিনি, বাতাসা বা মিছরি দিয়ে সরবত তৈরি হত৷ বোতলবন্দি ‘কর্পোরেট’ আমপান্নার যুগেও অবশ্য কলকাতার রাস্তার ধারে আম-পুদিনার বিক্রিতে ভাটা পড়েনি৷
ছবি: DW/P. Samanta
ছাতু-জল থইথই
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘‘একসময় ভাল ছাতু-মাখিয়ে বলে আমার নাম ছিল৷’’ কাজেই ছাতুর সরবত কেবল বিহারি-মারোয়াড়িদেরই একচেটিয়া নয়৷ ঠেলাগাড়ি চেপে পথচারীর নাগালেই থাকে ছাতুর সরবত৷ বেলাশেষে কত উপার্জন হলো, মানিকতলায় সেটাই গুনছেন বিক্রেতা৷
ছবি: DW/P. Samanta
হাত বাড়ালেই ঠান্ডা
সেকালে বাঙালির বিশেষ পানীয়কে পানা বলা হতো৷ যেমন চিনির পানা, বেলের পানা ইত্যাদি৷ এ কালেও সেই পানীয়ের দেখা মেলে৷ বিপুল চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে কৃত্রিম পানীয়ের সম্ভার৷ সুইচ টিপলেই শীতল স্রোত৷
ছবি: DW/P. Samanta
তাপহরা তৃষাহরা
কয়েক দশক আগেও পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে ফ্রিজের এত চল ছিল না৷ রাস্তায় রাস্তায় বরফের গোলা বা সামান্য বরফকুচি মেশানো কাঁচা আমপোড়া, পুদিনাপাতার সরবত ছিল বাঙালির গ্রীষ্মের স্বর্গ৷ কলকাতার ভিড়ে ভরা ফুটপাতে এ কালেও এক চুমুকে স্বর্গলাভ হয় বৈকি! যেমন এই কলেজ স্ট্রিটে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরবত যেন কুটিরশিল্প
পশ্চিমবঙ্গে তেলেভাজার পাশাপাশি অন্যতম জনপ্রিয় লগ্নি সরবতেই৷ অল্প খরচে, কম মজুরিতে, ন্যূনতম স্থানে অনায়াসে খুলে ফেলা যায় সরবত তৈরির ব্যবসা৷ উপমহাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চোখ বুঁজে কমপক্ষে তিন মাস দেদার আয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
কু ঝিক ঝিক পানীয়
গরম পড়তেই রেলের প্ল্যাটফর্মের দৃশ্যও বদলে গেছে৷ কেক-বিস্কুট-প্যাটিসের দোকানে রাতারাতি হাজির সারি সারি পানীয়ের বোতল৷ কুঁজো, জালা বা ঘটির যুগ আর নেই৷ প্যাকেজিংয়ে মোড়া যুগে বোতলই আমাদের সভ্যতার ধারক ও বাহক৷ পথচারী, ট্রেনযাত্রী বা অফিসকর্মী সকলেই বোতলের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
বাণিজ্যে বসতে সরবত
‘প্যারামাউন্ট’ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় প্রাচীন সরবতের দোকান৷ ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বহু নায়ক-গায়ক-খেলোয়াড়ের স্মৃতিধন্য এই খানদানি সরবতী বিপণী কলেজ স্কোয়্যারের অলঙ্কার৷
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
কাজের ফাঁকে দু’চুমুকে যদি গরম থেকে নিস্তার পাওয়া যায়, তবে তাই সই! কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ঘোলের দোকান ‘কপিলা আশ্রম’-এ সরবত প্রেমীদের ভিড়৷ বিধান সরণীতে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সকল রসের ধারা
চিনা পরিব্রাজক ই-সিঙের ডায়েরি থেকে জানা যায়, সেকালে বাঙালিদের মধ্যে তালের রস, খেজুরের রস জনপ্রিয় ছিল৷ আমবাঙালির হাতে এখন সেগুলি সবসময় না পৌঁছালেও অনায়াসে জুটে যায় রসরাজ ইক্ষুশর্করা৷ হেদুয়ার ফুটপাতে সে-ই রাজা৷
ছবি: DW/P. Samanta
এলাম-দেখলাম-জয় করলাম
ঠান্ডা পানীয়ের বিজ্ঞাপনী ভাষা রপ্ত করেছে নব্য বঙ্গ৷ তর্ক-বিতর্ক-আড্ডা-স্লোগানে নিজেদের প্রমাণ করতে তারা বেছে নিয়েছে বোতলবন্দি ঠান্ডা পানীয়ের ‘জোশ’৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরবতী সঙ্গ সুধা
দহনজ্বালা জুড়াতে চাইলে করুণাধারায় এসো৷ তাই কি প্রখর গ্রীষ্মে সম্পর্কের ভাঙ্গাগড়ার খেলায় বান্ধবীর সঙ্গে দু’দণ্ড শান্তির খোঁজ?
ছবি: DW/P. Samanta
শীতল জমায়েতে উষ্ণতা
কলেজ ক্যান্টিন হোক বা ‘প্যারামাউন্ট’– বন্ধুবান্ধবদের হইচই আর ঠান্ডা আমোদ জমে ওঠে গেলাসে রাখা সরবত ঘিরেই৷
ছবি: DW/P. Samanta
আমার সন্তান যেন থাকে পানীয়তে
কোনও কোনও সম্পর্ক অনিবার্য৷ মা ও সন্তানের মধ্যে জীবন যেন মরুদ্যানের মতো৷ সব প্রতিকূলতা, রুক্ষতার বিপরীতে শাশ্বত বিজ্ঞাপন৷ তৃষ্ণা মেটায়, আশ্রয় জোগায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
মেঘ দে, পানি দে
জাতীয় পানীয় বলতে যদি কিছু থাকে, তাহলে সেটা জল বা পানি৷ পানি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত পানীয় থেকে৷ গরমে রঙিন বা কৃত্রিম পানীয়ের থেকে স্রেফ সাদা পানির আবেদন সততই তীব্র৷ তাই করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা, ‘পানি দে’৷ নগরজীবনের ভিড়,কোলাহল,ব্যস্ততা থেকে ছুটি চায় মন৷ গতির সঙ্গে পাল্লা না দিয়ে মানুষ চায় ক্ষণিকের বিশ্রাম৷ সদা ব্যস্ত নাগরিকের সেই তৃষ্ণা মেটে কি?