করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি বেশি পরীক্ষার উপর জোর দিলেও এ কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস যেখানে উন্নত দেশেগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷ সেখানে বাংলাদেশের মত নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে৷
এই সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদাপত্র পেয়ে এরই মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি৷ কিন্তু সেই চাহিদাপত্রে নেই মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কথা৷
অথচ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের শনাক্তের কাজটিই করা যাবে না৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এভাবেই নিজের মত প্রকাশ করেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন৷
তিনি বলেন, ‘‘সরকার চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভালো কথা৷ কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নিয়োগ দিতে হবে৷ আমরা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছি, কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া স্যাম্পল কালেকশন কে করবে? এটা তো অপেশাদার লোকদের কাজ না৷’’
করোনায় রোজা, করণীয় কী?
মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান এসেছে৷ কিন্তু করোনা মহামারি এবারের রমজানকে দিয়েছে অন্য এক রূপ৷ নিজে ও প্রিয়জনকে নিরাপদে রেখে কিভাবে পালন করা যাবে এ মাস?
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
করোনাকালে রমজান, কিছু পরামর্শ
রমজান মাসকে বিশ্বজুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দেখে থাকেন দানশীলতা, সংযম, আত্মশুদ্ধি ও প্রার্থনার মাস হিসেবে৷ একসঙ্গে নামাজ পড়া ও সারাদিনের রোজা শেষে ইফতার ভাগাভাগি করে নেয়াকেও দেয়া হয় গুরুত্ব৷ কিন্তু চলমান করোনা মহামারি এবারের রমজানকে সবার সামনে হাজির করেছে একটু অন্যভাবে৷ সব দেশের জন্যই এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
রোজা রাখতে ঝুঁকি নেই
রোজা রাখলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, এমন কোনো তথ্য এখনও কোনো গবেষণায় পাওয়া যায়নি৷ ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতোই রোজা রাখতে সুস্থ মানুষের কোনো বাধা নেই৷ কিন্তু ধর্মীয় বিধি অনুযায়ীও নানা রোগের ক্ষেত্রে রোজা রাখায় ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি
কোভিড-১৯ এর কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি৷ ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরই এখন পর্যন্ত ভরসা৷ তাই সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার ও সেহরিতে নানা ধরনের সুষম খাবারের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া গরমের ফলে পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতার ও সেহরির মধ্যে পর্যাপ্ত পানিও পান করা খুব জরুরি৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
শারীরিক কার্যক্রমে জোর
অন্যসময় রোজা রেখেও কাজকর্ম করার ফলে শরীরে রক্ত চলাচল ও অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকতো৷ কিন্তু করোনার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় কমেছে শারীরিক কার্যক্রমও৷ এজন্য বিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন বাসার মধ্য়েই নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করার জন্য৷ তা না হলে রোজায় শরীরে পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব৷
ছবি: Colourbox
শুভেচ্ছা ও সম্ভাষণ
কারো সঙ্গে দেখা হলে হাত মেলানোর রীতি থাকলেও, এবার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সম্ভাষণ জানানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ অনেক দেশে ধর্মীয় আচার ও সংস্কৃতি অনুযায়ী সালাম দেয়া, মাথা নাড়া বা বুকে হাত দিয়ে সম্ভাষণ জানানো হয়৷ এ বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এমন সম্ভাষণকেই স্বাগত জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরাও৷
ছবি: DW/A. Ansari
ঝুঁকিতে থাকাদের বিশেষ ব্যবস্থা
নভেল করোনা ভাইরাস সব বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করলেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা৷ এছাড়া যারা ডায়বেটিস, রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের রোগ, শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন, তারাও রয়েছেন কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে ঝুঁকিতে৷ ফলে রমজানের সময়টাতে এই ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সামাজিক দূরত্ব
বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও তারাবিসহ অন্যান্য নামাজ মসজিদের বদলে বাসায় পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনসহ যাদের মসজিদে যেতেই হবে, তাদেরও নিজেদের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ এছাড়া ইফতার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার জন্য যারা দোকানে বা বাজারে যাবেন, তাদেরও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
প্রতিবার নামাজের আগে ওজুর ফলে এমনিতেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হয়৷ কিন্তু এবার একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলছেন চিকিৎসকেরা৷ শুধু পানির বদলে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সাবান ব্যবহারের৷ মসজিদেও পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা সরঞ্জাম, টিস্যু, ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি প্রতিবার নামাজের আগে-পরে কার্পেটসহ মসজিদ ভবনের অন্যান্য ব্যবহার্য বস্তু পরিষ্কার করারও আহ্বান জানানো হচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/allover-mev
যাকাত ও সদকা
রমজান মাসে মুসলিমদের দানশীলতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়৷ তবে যাকাত বা সদকা দেয়ার সময়ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ যাতে একসঙ্গে বেশি মানুষ জড়ো না হন, সেজন্য এলাকার সবাই মিলে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ উপায়ে পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: DW/H.U.R. Swapan
মানসিক স্বাস্থ্য
লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি মানতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য পড়ছে হুমকির মুখে৷ রমজানে ধর্মপ্রাণ মানুষ মসজিদে যেতে ও সামাজিক যোগাযোগ বেশি পছন্দ করেন৷ কিন্তু এ বছর তাদেরকে থাকতে হচ্ছে কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও যে আত্মশুদ্ধি, প্রার্থনা, দান, সেবা, সবই করা সম্ভব তা প্রচার করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারে পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: picture alliance/empics/D. Lipinski
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশ এখনও কোভিড-১৯ রোগের নমুনা পরীক্ষায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে পিছিয়ে আছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স এবং পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা৷ কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটি পুরো উল্টো৷ গত ২১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে ২৫ হাজার ৬১৫ জন চিকিৎসক কাজ করছেন৷ ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী, এক্ষেত্রে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৭৫টি৷ কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদই আছে সাত হাজার ৯২০টি৷ এর বিপরীতে কর্মরত আছেন আরও কম, পাঁচ হাজার ১৮৪ জন৷ প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য শূন্য দশমিক ৩২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কাজ করছেন৷
আর ল্যাব টেকনোলজিস্টের দুই হাজার ১৮২টি পদের মধ্যে এক হাজার ৪১৭ জন কর্মরত আছেন৷ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি করেন ল্যাব টেকনোলজিস্টরাই৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রেষণে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়৷ ফলে জেলাগুলোয় নমুনা সংগ্রহ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে৷
বিভিন্ন জেলা এমনকি নারায়ণগঞ্জেও অনেকে অভিযোগ করেছেন, নমুনা সংগ্রহের জন্য হটলাইনে ফোনের পর ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায় না৷ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে আক্রান্তের এলাকা গাজীপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছেন ১৭ জন৷ এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে চারজন এবং হাসপাতালে সাতজন৷ প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে এবং টঙ্গীতে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট৷
সব থেকে ঝামেলায় আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন টেকনোলজিস্ট বলেন, তাঁকে দৈনিক ২৫ থেকে ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করতে হয়৷ এজন্য দুজন সহযোগী নিয়েছেন তিনি৷ তারা রোগীর নাম ঠিকানা লিখে দেওয়া থেকে প্রাথমিক কিছু কাজ করে দেয়৷
করোনা নজরে রাখার কয়েকটি অ্যাপ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার, কিউআর কোড ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
অস্ট্রেলিয়া
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ এর মাধ্যমে একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীর দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে আসার তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা৷ ব্লুটুথ ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে এই তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে৷ একজন ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত কারো সঙ্গে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকলে, সেই তথ্য বার্তা দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
চীন
নাগরিকদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহ করছে দেশটি৷ ‘আলিপে’ ও ‘উইচ্যাট’ অ্য়াপ ব্য়বহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে একটি কিউআর কোড পেয়ে থাকেন৷ বাসে, ট্রেনে, অফিসে, এমনকি নিজের বাড়িতে ঢুকতে এই কোড স্ক্যান করতে হয়৷ এভাবে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে সরকার৷ কোডের রং সবুজ হলে চলাফেরায় বাধা নেই, হলুদ হলে সাতদিন আর লাল হলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হয় নাগরিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/D. Qing
ইটালি
কেউ করোনা আক্রান্তের স্পর্শে এসেছেন কিনা, সেই তথ্য় জানতে অ্যাপ চালু করতে চায় ইটালি৷ সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ শত শত প্রস্তাব জমা পড়েছে৷ শিগগিরই তা চালু হবে৷ তবে এই অ্যাপ ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L. Bruno
দক্ষিণ কোরিয়া
‘কোভিড-১৯ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে করোনা রোগী ও যারা কোয়ারান্টিনে আছেন তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এছাড়া যারা হোম-কোয়ারান্টিন মানছে না ভবিষ্যতে তাদের হাতে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড পরানোর চিন্তা করছে দেশটি৷ কেউ এটি না পরলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং তার খরচ ঐ ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
ভারত
করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি জানতে ‘আরোগ্যসেতু’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন বলে সরকার জানিয়েছে৷ এগারোটি ভাষায় অ্যাপটি চালু হয়েছে৷ এই অ্যাপে করোনা নিয়ে সচেতনতা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের উপায়ও বলা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
জার্মানি
আপনি করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে অ্যাপল ও গুগল যৌথভাবে একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করছে৷ মে মাসে এটি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷ যদিও জার্মানি একই কাজের জন্য নিজ উদ্য়োগে ‘পিইপিপি-পিটি’ নামে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচনার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
6 ছবি1 | 6
‘‘নমুনা সংগ্রহের কাজটা আমিই করি৷ কিন্তু প্রতিদিন এতগুলো নমুনা সংগ্রহ করতে জান বাইর হয়ে যায়৷ গাজীপুর জেলায় তো অনেক রোগী, সবার স্যাম্পল নেওয়া সম্ভব হয় না৷’’
নরসিংদীর পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিলীপ কুমার দাস জানান, উপজলায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ ফলে কন্টাক্ট ট্রেসিংসহ নানা কাজে তাকে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়৷ এখানে দুজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের একজনকে ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
‘‘আমিই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করি৷ আবার আমাকেই দৌড়াতে হয় হাসপাতালে৷ বিষয়টি নিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷’’
একই অবস্থা নরসিংদীর বাকী উপজেলাগুলোতেও৷
ঢাকার একটি গবেষণাগারে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নিয়োজিত একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগকে স্বাগত জানালেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা উপেক্ষিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন অনুযায়ী ২ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে ১০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পাওয়ার কথা৷ কিন্তু দুঃখজনক হল তারা আলোচনাতেই নেই৷’’
বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে দেশে ৩০ হাজার ৬৭ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছেন৷
সংগঠনের সভাপতি আলমাস আলী খান জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ঝুঁকি নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করছেন৷ কয়েকটি হাসপাতালে সংক্রমণের পর চিকিৎসক-নার্সরা কোয়ারান্টিনে গেলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পাঠানো হচ্ছে না৷
‘‘কারণ টেকনোলজিস্টরা কোয়ারেন্টিনে গেলে সেখানে কাজ করার কেউ থাকে না৷’’
তিনি বলেন, সাময়িকভাবে কিছু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিলেও এই পরিস্থিতিতে কাজ করা কিছুটা সহজ হবে৷
পরিস্থিতি বিবেচনায় ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেলাল হোসেন৷
কিন্তু অচিরেই এই নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান৷
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পে-রোলে কাউকে আনতে হলে সিস্টেমের মধ্যে আনতে হয়৷ টাকা পয়সারও ব্যাপার আছে৷ ওটা (টেকনোলজিস্ট নিয়োগ) এখনও চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে৷ এখনও প্রসেস শুরু হয়নি৷’’
বর্তমানে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় চিকিৎসকেরাও নমুনা সংগ্রহ করছেন৷ স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে শুধু নমুনা সংগ্রহ করছেন৷ নমুনা সংগ্রহ কাজে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না৷’’