জাপানের টোকিও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নারী প্রার্থীরা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ৷ পরীক্ষায় কৌশলে মেয়েদের নম্বর কমিয়ে দিয়ে ছেলেদের ভর্তির জন্য বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, নারী ডাক্তাররা তাঁদের পরিবারিক জীবন শুরু করার পর আর কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন না, যা পরবর্তিতে হাসপাতালগুলোকে সংকটে ফেলে৷ অভাব দেখা যায় ডাক্তারদের৷ এ আশঙ্কা থেকেই নাকি কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মেয়ে প্রার্থীদের চেয়ে ছেলে প্রার্থীদের বেশি যোগ্য বলে বিবেচনা করছে৷
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়ে প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১০ ভাগ কেটে নিয়ে ছেলে প্রার্থীদের ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে৷ জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএইচকে, কিউডো নিউজ'সহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এ খবর উঠে এসেছে৷ এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷
সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, টোকিও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মেয়ে প্রার্থীদের সাফল্যের হার ছেলে প্রার্থীদের চেয়ে বেশি৷ ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল শতকরা ৩৮ ভাগ৷ তবে আবার, সেই সংখ্যা ৩০ ভাগে নামিয়ে আনতে চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ সংবাদমাধ্যমগুলোর৷
জাপানে চাকরি ও ব্যাক্তি জীবনে নারীদের লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও নারীদের নিয়োগ বৈষম্য, পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে তুলনামূলক কম বেতন সহ নানা ধরনের বৈষম্যে শিকার হতে হয়৷ তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নারীদের জন্য একটি বৈষম্যহীন ও সহেযাগীতামূলক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন৷
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Tivony
7 ছবি1 | 7
কর্তৃপক্ষের অস্বীকার
মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এ আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন৷
বৈষম্যের এ বিষয়টিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ইয়শিমাসা হায়াশি৷ এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছন তিনি৷ এদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় পাঠকদের মধ্যে৷
‘নারীরা যেন শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের মেশিন৷ আর কোনো নারী সন্তানের জন্ম দিতে না চাইলে, তাদের বন্ধ্যা বলে উপহাস করা হয়৷' – এভাবেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মন্তব্য করেন এক জাপানি নারী৷