মার্সিডিজ, আডিডাস, ডিএইচএল – জার্মানির এই সব ব্র্যান্ড গোটা বিশ্বে পরিচিত৷ কিন্তু এমন আরও কিছু জনপ্রিয় ডিজাইনের উৎস যে জার্মানি, অনেকেই সে কথা জানেন না৷ এমন পাঁচটি ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা যাক৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
পঞ্চমস্থানেভাল্টারগ্রোপিয়ুস
অনেক ক্লাসিক ডিজাইন যে জার্মানি থেকে এসেছে, অনেকেই সে বিষয়ে সচেতন নন৷ যেমন ভাল্টার গ্রোপিয়ুস-এর নাম বাউহাউস স্থাপত্যশৈলির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে৷ ১৯১৯ সালে ভাইমার শহরে তিনি এই শৈলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার মূলমন্ত্রই হলো কার্যকারিতা৷ স্থপতি হিসেবে গ্রোপিয়ুস বিশ্ববিখ্যাত৷ কিন্তু তাঁর শেষ সৃষ্টিকর্ম কোনো ভবন ছিল না৷ তিনি রোজেনটাল নামের চীনামাটির বাসন কোম্পানির জন্য চায়ের কাপ-প্লেটের একটি সেট ডিজাইন করেছিলেন৷ ১৯৬৯ সাল থেকে সেই সেটের ‘টিএসি ওয়ান' কেটলি বড় আকারে উৎপাদন করা হচ্ছে৷ আজও গোটা বিশ্বে তা বিক্রি করা হয়৷
চতুর্থ স্থানে আক্সেলকুফুস
এই ক্লাসিক ডিজাইন তার অসাধারণ, অথচ সহজ গঠনের জন্য পরিচিত৷ এমন এক বইয়ের তাক, যার কোনো স্ক্রু নেই৷ বইয়ের সংখ্যা বাড়লে সেটি অনায়াসে আরও বড় করা যায়৷ এফএনপি নামের এই শেল্ফ সিস্টেমের উৎস যে জার্মানি, অনেকেই তা জানেন না৷ কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে এই তাক গড়ে তোলা যায়৷ ১৯৮৯ সালে আক্সেল কুফুস নামের ছুতার মিস্ত্রী প্রথম শেল্ফ ডিজাইন করেন৷ তারপর থেকে তিনি ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ শেল্ফ উৎপাদন করেছেন৷
তৃতীয় স্থানে মার্সেলব্রয়ার
ক্লাব চেয়ার বা আরামকেদারা সাধারণত চামড়া দিয়ে ভালো করে মোড়া থাকে৷ কিন্তু ডিজাইনার হিসেবে মার্সেল ব্রয়ার প্রথাগত শৈলি ভেঙে আসবাব তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ ইস্পাতের পাইপসহ তাঁর তৈরি ক্লাব চেয়ার আজ শৈল্পিক নন্দনতত্বের ক্ষেত্রে এক আইকন বা প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়৷ ‘বি থ্রি' নামের এই কেদারা ‘ওয়াসিলি চেয়ার' নামেও পরিচিত৷ সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করেই এটি ডিজাইন করা হয়েছে৷ তবে শুরু থেকেই এই চেয়ারের দাম কিন্তু অনেকেরই ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
সেরা জার্মান রপ্তানি পণ্য?
জার্মানি থেকে প্রতিবছর এক লক্ষ কোটি ইউরোর বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়৷ কিন্তু তার মধ্যে কোন পণ্যগুলি থেকে ‘আমদানি’ সবচেয়ে ভালো?
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
দেখতে বিরাট, কিন্তু তালিকায় দশ নম্বর
আগে বলা হতো, ওসেনলাইনার, আজ তারা হলো ক্রুজ শিপ৷ এ ধরনের একটি সুবিশাল ক্রুজ জাহাজকে যখন পাপেনবুর্গ থেকে এম্স নদী হয়ে উত্তর সাগরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন দেখলে মনে হয় যেন একটা পাহাড়প্রমাণ কচ্ছপ একটি ছোট নালা ধরে হেঁটে চলেছে৷ নিম্ন স্যাকসনি রাজ্যে এ ধরনের ক্রুজ জাহাজ তৈরি হয় বটে, কিন্তু জার্মানির এক্সপোর্ট চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শুধু ক্রুজ যাত্রীদের খুশি করে চলে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
বিদেশে চাহিদা, দেশে অপ্রিয়
‘মেড ইন জার্মানি’ অস্ত্রশস্ত্র – তা বন্দুক, ডুবোজাহাজ বা লিওপার্ড ট্যাংক, যাই হোক না কেন – বিদেশে এ সব পণ্যের চাহিদা অনেক৷ কিন্তু শান্তিপ্রিয় জার্মানরা এ বিষয়ে কিছুটা কুণ্ঠা বোধ করে থাকেন৷ আবার অতোটা কুণ্ঠারও কোনো কারণ নেই, কেননা সেরা রপ্তানি পণ্যের তালিকায় অস্ত্রশস্ত্র নবম স্থানের বেশি এগোতে পারেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Steffen
‘ধাতব’
ইংরেজিতে বা জার্মানে যাকে বলে ‘মেটাল’, যা কিনা সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের নথিপত্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের একটি বিশেষ বিভাগ – যার মধ্যে পড়ে অ্যালুনিমিয়াম৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে কীভাবে চকোলেট টাটকা রাখা হয়৷ ২০১৫ সালে জার্মানি মোট ৫,০০০ কোটি ইউরো মূল্যের ‘মেটাল’ রপ্তানি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Junos
‘অন্যান্য যান’
বলতে বোঝায় ধরুন আবর্জনা তুলে নিয়ে যাওয়ার ‘ট্র্যাশ ট্রাক’ – আবার অন্য যে কোনো ধরনের লরি, বাস বা ট্রাক ইত্যাদি – এক কথায় প্রাইভেট গাড়ি ছাড়া বাকি সব ধরনের চার বা বেশি চাকার যান৷ ২০১৫ সালে জার্মানির মোট রপ্তানি ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি ইউরো৷ তার মধ্যে ‘অন্যান্য যান’ শীর্ষকে রপ্তানি হয় প্রায় ৫,৭০০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
ফার্মাসিউটিক্যালস
জার্মান ওষুধ তৈরি শিল্পের সুনাম দুনিয়া জুড়ে৷ এই সুনামের ভিত্তি স্থাপিত হয় মোট ১০০ বছর আগে, যখন জার্মানিতে নানা ধরনের ওষুধ আবিষ্কৃত হয়৷ তার মধ্যে বহু ওষুধের পেটেন্ট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, তবুও ২০১৫ সালে জার্মানির ওষুধ তৈরির কোম্পানিগুলির রপ্তানি ছিল মোট ৭,০০০ কোটি ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Endig
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম
বিদ্যুৎ এমন একটি বস্তু, যা উপকারী হলেও বিপজ্জনক, এমনকি ওভারহেড তারের ক্ষেত্রে মারাত্মকও হতে পারে৷ কাজেই বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে নো-হাউ খুবই প্রয়োজনীয়৷ দৃশ্যত জার্মান কোম্পানিগুলির সে নো-হাউ আছে বলে গ্রাহকদের ধারণা, তাই ২০১৫ সালে জার্মানির রপ্তানিকৃত পণ্যের ছয় শতাংশ ছিল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম৷
ছবি: picture alliance/J.W.Alker
ডাটা প্রসেসিং ও অপটিক্যাল ইকুইপমেন্ট
এই বিভাগের রপ্তানিকারকরা প্রায় ১০,০০০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছেন, যা কিনা জার্মানির মোট রপ্তানির আট শতাংশের বেশি৷ জার্মানির বহু কোম্পানি একাধিক প্রজন্মের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিকতম পর্যায়ের পণ্য উৎপাদন করে থাকে – যেমন ইয়েনঅপটিক কোম্পানির এই ডায়োড লেজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kasper
রাসায়নিক পণ্য
বায়ার বা বিএএসএফ-এর মতো জার্মান রাসায়নিক কোম্পানিগুলি শুধু ফার্মাসিউটিক্যালস নয়, সেই সঙ্গে নানান বহুল ব্যবহৃত গ্যাস বা তরল রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুত ও রপ্তানি করে থাকে৷ রাসায়নিকের রপ্তানি থেকে ১০,০০০ কোটি ইউরোর বেশি রোজগার হয় জার্মানির – যা কিনা সেরা রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রাসায়নিককে তৃতীয় স্থান এনে দিয়েছে৷
ছবি: Bayer AG
মেশিন
জার্মানি হলো প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদদের দেশ, এ কথা নিশ্চয় শুনেছেন৷ কথাটা যে খুব মিথ্যে নয়, তা প্রমাণ হয় জার্মানির রপ্তানি তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ‘মাশিনেনবাউ’ বা ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর পণ্যগুলিকে দেখে৷ ২০১৫ সালে জার্মানি মেশিন সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানি করেছে মোট ১৬,৯০০ কোটি ইউরোর৷ তবে মেশিন সংক্রান্ত রপ্তানি বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DMG Moro Seiki/Thissen
চলতি কা নাম গাড়ি!
জার্মানির রপ্তানি তালিকার শীর্ষে স্বভাবতই মোটরগাড়ি৷ ফল্কসভাগেন, বিএমডাব্লিউ, পোর্শে আর ডাইমলার মিলে যা রপ্তানি করে থাকে, তার মূল্য হলো ২২,৬০০ কোটি ইউরো৷ বৈদ্যুতিক গাড়ির জয়যাত্রা বা ‘ডিজেলগেট’ কেলেঙ্কারি, কোনো কিছুই জার্মান মোটরগাড়ি শিল্পের এই জয়যাত্রা থামাতে পারেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
10 ছবি1 | 10
দ্বিতীয় স্থানে ভিলহেল্মভাগেনফেল্ড
এই বাতি নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টেও শোভা পাচ্ছে৷ বোদ্ধারা বলেন, এর বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এর আদৌ কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই! জার্মানির রৌপ্যশিল্পী ভিলহেল্ম ভাগেনফেল্ড ‘ডাব্লিউজি টোয়েন্টিফোর' নামের এই টেবিল ল্যাম্প ডিজাইন করেছিলেন৷ প্রথমে মাত্র ৫০টি ল্যাম্প তৈরি হয়েছিল৷ বাজারেও তেমন সাড়া পড়ে নি৷ তারপর ১৯৮০ সালে মূল ডিজাইনে কিছু রদবদল ঘটানোর পর গোটা বিশ্বে এই বাতির বিপুল চাহিদা দেখা যায়৷
প্রথম স্থানে টোনেট চেয়ার
ভিয়েনার কফিহাউসের এই ক্লাসিক চেয়ার সবচেয়ে বেশি নকল করা হয়৷ জার্মানির হেসে রাজ্যের ফ্রাংকেনব্যার্গ শহরে এই নিয়ে পঞ্চম প্রজন্মের মিস্ত্রীরা এটি তৈরি করছেন৷ এই ডিজাইন যে জার্মানিতে তৈরি, তা কি সবাই জানে? ‘টোনেট চেয়ার নম্বর ১৪' সেই ১৮৫৯ সালেই ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল৷ কারণ চেয়ার তৈরি করতে তখন প্রথমবার কাঠ বাঁকানো হয়েছিল৷ বিচ গাছের কাঠ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বাষ্পের সংস্পর্শে এনে নরম করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত কোম্পানি সেই প্রক্রিয়ায় কোনো রদবদল করেনি৷