1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ – পোশাকশিল্প আর মঞ্চশিল্পীদের সংকট

দেবারতি গুহ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

‘ধা ধিন ধিন ধা, নাধিন ধিন ধিন ধা, না তিন তিন তা, তেটে ধিন ধিন ধা’ – এভাবেই বার বার, বারংবার বেজে চলছিল ত্রিতালের নানা বোল৷ আর সেই বোলে নেচে চলেছিল বাংলাদেশের ১২ জন কত্থক শিল্পী৷ হ্যাঁ, এই জার্মানিতেই৷

Tanztheaterstück Made in Bangladesh
ছবি: Wonge Bergmann

উদ্দেশ্য একটাই – বার বার একই ধরনের দেহ ভঙ্গিমা, একই বলিষ্ঠ পায়ের কাজ দিয়ে দর্শকের মস্তিষ্ক, তারপর একেবারে মন পর্যন্ত ছুঁয়ে যাওয়া৷ হয়েছিলও তাই৷ বোল শেষে, প্রতিটি ‘সম' যে ঠিকরে গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছিল আমার হৃদয়ে৷

না, এ সাধারণ কোনো ‘নৃত্যনাট্য' নয়, এ দৃশ্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকদের বিভীষিকাময় সংকটের প্রতিচ্ছবি৷ যেন তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে চলা পাশবিক শোষণের মঞ্চরূপ৷ তাই রক্ত যেমন হৃৎপিন্ডে পৌনঃপুনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালীর ভেতর দিয়ে সারা দেহে প্রবাহিত হয়, তেমনই নৃত্যশিল্পীদের সেই পৌনঃপুনিকতা পোশাকশিল্পীদের সেলাইমেশিন চালনার প্রতীক হয়ে উঠেছিল, অচিরেই৷

নৃত্যনাট্যটির নাম – ‘মেড ইন বাংলাদেশ'৷ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাধনা'-র সহযোগিতায় নৃত্যনাট্যটি প্রযোজনা করেছেন জার্মানির এক্টোপিয়া ডান্স প্রোডাকশন, নির্দেশনায় হেলেনা ভাল্ডমান৷ তিনি গত প্রায় এক বছর ধরে ‘মেড ইন বাংলাদেশ'-এর গবেষণা এবং মহড়ার কাজ করেছেন৷ কলকাতার নৃত্যপরিচালক বিক্রম আয়েঙ্গার এই নৃত্যনাট্যের সহ-পরিচালক৷ তবে ভিডিওগ্রাফার আনা সাউপের সহায়তায় নাচ ছাড়াও হেলেনা এতে ব্যবহার করেছেন রানা প্লাজা ধসের শক্তিশালী স্থির এবং ভিডিওচিত্র, যা সহজেই দর্শকদের নাড়া দিতে সাহায্য করেছে৷

ছবি: Wonge Bergmann

২৬শে নভেম্বর জার্মানির লুডভিশহাফেনে ‘মেড ইন বাংলাদেশ'-এর উদ্বোধনী শো'তে আমি যেতে পারিনি৷ গিয়েছিলাম ২৯শে নভেম্বর, ড্যুসেলডর্ফে৷ নিজেও পোশাকশিল্পে শোষণ, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছি, তাই বিষয়টা নিয়ে উৎসাহ তো ছিলই৷ কিন্তু আরো উৎসুক ছিলাম বাংলাদেশের এ সংকটের সঙ্গে নাচের ব্যবহার কীভাবে করা হয়েছে – সেটা নিয়ে৷

এক কথায় অসাধারণ! তবে নৃত্যনাট্যে পোশাকশিল্প শ্রমিকদের সংকটকে তুলনা করা হয়েছে মঞ্চশিল্পীদের সংকটের সঙ্গে৷ মানে গার্মেন্টসে যেমন চলছে শ্রমিকদের নানা সংকট, তেমনি কিছু সংকট আছে মঞ্চেও৷ এটা আমাকে প্রথমে একটু অবাক, একটু বিচলিত করলেও পরে শান্ত করেছে৷ কারণ ‘মেড ইন বাংলাদেশ' যে শুধু পোশাক শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা বলছে না, বলছে উভয় শিল্পে কায়িক শ্রমের অপব্যবহার, এবং সঠিক মূল্যায়নের অভাবের কথা৷

ছবি: Wonge Bergmann

তারপরও ড্যুসেলডর্ফের ‘টানৎসহাউস'-এ শো-এর পর সাধনার শৈল্পিক নির্দেশক নৃত্যশিল্পী লুবনা মারিয়াম-সহ নির্দেশক এবং নৃত্যশিল্পীদের আলোচনা শুনতে শুনতে মনে হলো, এই দুই শিল্পে কায়িক শ্রমের ব্যবহার কি সত্যিই তুলনার যোগ্য? নারী হিসেবে, শিল্পী হিসেবে কোথায় এই ইংরেজিভাষী নৃত্যশিল্পীরা আর কোথায় বাংলাদেশের হতভাগ্য পোশাকশ্রমিকরা!

অবশ্য মিল একটা আছে৷ এত যন্ত্রণা, লাঞ্ছনার পর নিজেদের আয়ের পরিমাপ একদিকে পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী, অন্যদিকে বড় বড় নৃত্যগোষ্ঠী বা ‘প্রোডাকশন হাউস'-গুলোর থেকে কম হলেও, দুই ধারার শ্রমিক/শিল্পীরাই কিন্তু খুশি, খুব খুশি৷ তাঁদের এ মনোভাবের মধ্যে যে মিশে আছে সৃষ্টির আনন্দ, স্বনির্ভরতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার নেশা৷

দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW/Matthias Müller

জার্মানির বিভিন্ন শহর তো বটেই, লুক্সেমবুর্গ এবং সুইজারল্যান্ডেও মঞ্চস্থ হবে নৃত্যনাট্যটি৷ তাছাড়া আগামী ২৩শে জানুয়ারি কলকাতা এবং ২৬শে জানুয়ারি ঢাকায় দেখা যাবে হেলেনা ভাল্ডমানের নতুন এই সৃষ্টি৷ আর তারপর? আবারো জার্মানিতে উড়ে আসবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ'৷ অংশ নেবে মিউনিখ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে৷

আমার আশা একটাই – ‘মেড ইন বাংলাদেশ' যেন বাংলাদেশের অসংখ্য পোশাক শ্রমিকদের কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়, পৌনঃপুনিক ছন্দে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ