৮৩ ভোটে কনজারভেটিভ পার্টির অনাস্থার চ্যালেঞ্জ জিতে নিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷ তবে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলছেই৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংসদে রক্ষণশীলদের একটি অংশ মঙ্গলবার টেরেসা মে'র নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করায় বুধবার কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই ভোটাভুটি হয়৷ ভোটে দেখা যায়, দলটির ৩১৭ জন সংসদ সদস্যের ২০০ জন টেরেসা মে'র প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে৷ ১১৭ জন রায় দেন বিপক্ষে৷
আস্থা ভোটে হেরে গেলে টেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতেন৷ শেষ পর্যন্ত মে-বিরোধী শিবিরের আশায় গুঁড়েবালি৷
‘‘এখন আমাদের কাজ হলো, ব্রিটেনের জনগণের জন্য ব্রেক্সিট ও একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেয়া,'' ফল ঘোষণার পর বলেন মে৷
তিনি আরো বলেন, চুক্তিতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত খোলা রাখার বিষয়টির যেমন উল্লেখ আছে, তেমনিভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ইউরোপের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে আইনি ও রাজনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাসের বিষয়টি নিশ্চিত করারও চেষ্টা করবেন তিনি৷
তাঁর দলে চুক্তির কড়া সমালোচকরা সবসময়ই বলে আসছেন যে, এই চুক্তির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ'র নিয়মনীতি মেনে চলতে বাধ্য হবে ব্রিটেন৷ সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবারের ব্রাসেলস সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই৷
এদিকে, ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন টেরেসা মে৷ তবে তিনি এ যাত্রা অনাস্থা থেকে বেঁচে গেছেন, আগামী বছর ২৯ মার্চ এই চুক্তির ওপর পুরো সংসদের ভোটাভুটি তাঁর পক্ষে যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷
এদিকে, ব্রিটিশ সংসদের এই ভোটাভুটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ইউরোপের শেয়ারবাজারে৷ লন্ডনের এফটিএসই, ফ্রাঙ্কফুর্টের ডাক্স ও প্যারিসের সিএসি ৪০ সবগুলোতেই লেনদেন বেড়েছে৷ পাউন্ডেরও দাম বেড়েছে৷
ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার মূল বিষয়গুলো
২০১৭ সালের ১৯শে জুন ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা শুরু হবে৷ শেষ হবার কথা আগামী বছর৷ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরকারিভাবে বিদায় নেওয়ার কথা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে৷ দু’ পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে কী কী নিয়ে?
ছবি: Getty Images/AFP/O. Scarff
ইইউ’র মার্কেটে প্রবেশাধিকার
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৮ই জুনের সংসদীয় নির্বাচনের আগেই আভাস দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একীকৃত মুক্ত বাণিজ্য এলাকা ছেড়ে যাবে৷ কিন্তু নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর টোরি সরকারকে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে৷ অপরদিকে ব্রাসেলসের মনোভাব স্পষ্ট: ব্রিটেনের সিঙ্গল মার্কেটে প্রবেশাধিকার বজায় থাকার শর্ত হলো, ইইউ’র বাকি ২৭টি দেশ থেকে আগত কর্মসন্ধানীদের যুক্তরাজ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে৷
ছবি: Picture alliance/empics/A. Matthews
ব্রিটেনে ইইউ নাগরিকদের অধিকার
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের অধিকার ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাবে৷ ইইউ-এর মুখ্য মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ের বলেছেন, ইইউ’র সকল সদস্যদেশ তাদের নাগরিকদের প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘সঠিক ও মানবিক’ আচরণ করা হবে – এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে না৷ প্রায় ৩০ লাখ ইইউ নাগরিক যুক্তরাজ্যে বাস করেন৷ অপরদিকে ১১ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ’র অধিবাসী৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Ratcliffe
অভিবাসন
টেরেসা মে ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ থেকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু অভিবাসন মাত্রাধিকভাবে কমে গেলে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য, সামাজিক পরিচর্যা ও নির্মাণকার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিতে কর্মীর অভাব দেখা দিতে পারে বলে একাধিক ব্রিটিশ বিধায়কের আশঙ্কা৷ অন্যদিকে ব্রাসেলসের কাছে ব্রিটেনের ইইউ সিঙ্গল মার্কেটে প্রবেশাধিকারের পূর্বশর্ত হলো ইইউ নাগরিকদের ব্রিটেনে কাজ করার অধিকার৷
ছবি: picture alliance/PA Wire /S. Parsons
নিরাপত্তা
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চালু নিরাপত্তা সহযোগিতা দু’ পক্ষেরই স্বার্থে৷ জুনের সূচনায় লন্ডনে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর উভয় পক্ষই এই নিরাপত্তা সহযোগিতার গুরুত্ব উল্লেখ করেছে৷ কিন্তু ইউরোপোল বা ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মতো প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ইইউ’র আইন বলবৎ থাকা প্রয়োজন৷ টেরেসা মে তাঁর ‘গ্রেট রিপিল বিল’-এর মাধ্যমে ইইউ আইনসমূহকে ব্রিটিশ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে চান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/o. Hoslet
‘বিবাহবিচ্ছেদের মাসোহারা’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন, সেই সঙ্গে ইইউ প্রদত্ত বিভিন্ন ঋণ ও অন্যান্য প্রকল্পে ব্রিটেন যে অর্থদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাসেলস দাবি করছে যে, যুক্তরাজ্যকে ইইউ’র বাজেটে তার প্রদেয় অনুদান দিয়ে যেতে হবে৷ অন্যদিকে ব্রিটেনে ব্রেক্সিট সমর্থকদের বলা হয়েছিল যে, যুক্তরাজ্য ব্রাসেলসে অর্থদান বন্ধ করবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Martinez
ইউরোপের আইনকানুন
টেরেসা মে ব্রিটেনে ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ারের অন্ত ঘটানোর সংকল্প করেছেন৷ অবশ্য সে-যাবৎ ব্রিটিশ সরকারকে অবস্থান কিছুটা নরম হতে দেখা গেছে৷ ‘গ্রেট রিপিল বিল’-এর একটি অর্থ হলো এই যে, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি তাদের ইইউ সহযোগীদের আইনকানুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে৷ অপরদিকে ব্রাসেলসের কামনা, ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস (ইসিজে) ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের প্রতি সদয় আচরণের গ্যারান্টি দেবে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আইরিশ সীমান্ত
আসন্ন আলোচনায় আয়ারল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত একটি কণ্টকিত বিষয় হয়ে উঠতে পারে৷ আইরিশ প্রজাতন্ত্র আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিভাজনরেখা আবার একটি ‘কঠিন সীমান্তে’ পরিণত হোক, তা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়৷ কিন্তু টেরেসা মে আপাতত উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি-র সঙ্গে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা করেছেন৷ তবে দক্ষিণের আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ডিইউপি’র সম্পর্ক কোনোকালেই ভালো ছিল না৷