মেলামিন মিশ্রিত দুধ ইস্যুতে তিন ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড
২২ জানুয়ারি ২০০৯গত বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালের শেষার্ধে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে গুঁড়ো দুধ খেয়ে একের পর এক শিশু অসুস্থ হতে থাকে৷ সে সময় মারা যায় অন্তত ৬জন শিশু৷ কি কারণে এরা মারা যাচ্ছে তা উদঘাটন করতে গিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ দেখতে পান- মূলত শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধে মানব দেহের জন্য মারাত্নক মেলামিন মেশানো হয়েছে৷ আর ঐ বিষাক্ত মেলামিনযুক্ত দুধ খেয়েই শিশুরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এদের কয়েকজন মারা যায়৷
চীন সরকারের হিসেব অনুসারে, দেশটির গুঁড়ো দুধ উত্পাদনকারী ২২টি প্রতিষ্ঠানের ৬৯টি আইটেমেই বিষাক্ত উপাদন মেলামিন পাওয়া গিয়েছিল৷ মূলত: দুধে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি দেখানোর জন্য মেশানো হয় এই রাসায়নিক পদার্থ৷ এমনকি দুধ ছাড়াও আইস ক্রিম আর চকলটেও পাওয়া যায় মেলামিন৷
সরকারী হিসাবে দেখা যায়, মেলামিন মিশ্রিত এই দুধ খেয়ে কম করে হলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে ৩ লাখ শিশু৷ যাদের সকলে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়৷ তখন সরকার জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করে৷ এর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সে সময় গ্রেফতার করা হয় অন্তত ৫০ জনকে৷
বৃহস্পতিবার চীনের আদালত এই মামলায় তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ৷ এছাড়া আরও অনেকের বিরুদ্ধে বিচারকাজ এখনো চলছে৷ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জনই গুঁড়ো দুধ কেলেংকারী কোম্পানি সানলুর কর্মকর্তা৷ আরও বেশ কয়েকজনকে ৫ থেকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া একজনের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করার পরও তা দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ঝাং ইয়ুজুন ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে মেলামিন মিশ্রিত ৬০০ টন গুঁড়ো দুধ উৎপাদন এবং বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ অন্যদিকে, সানলুর ফার্মের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার তিয়ান ওয়েনহুয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জনগণ৷ গত সেপ্টেম্বরে মেলামিন কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর জানা যায়, সানলু ফার্ম মেলামিন মিশ্রিত দুধ বিক্রির কথা জানতো এবং তারা এধরনের প্রায় ৯০০ টন দুধ বিক্রির জন্য বাজারে ছেড়েছিল বলে৷ অবশ্য এই কোম্পানিকে ইতিমধ্যে দেওলিয়া বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷
দুধে মেলামিন কেলেঙ্কারির কারণে দেশে-বিদেশে চীনের তৈরি খাবারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চীন থেকে বিশেষ করে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতও রয়েছে৷
চীনে খাদ্রপণ্যে বিষাক্ত উপাদান মেশানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷ এর আগেও সামুদ্রিক মাছ, শূকরের মাংশ এবং ডিমের তৈরি বিভিন্ন খাদ্যেও মেশানো হয়েছে এবিষাক্ত উপাদান৷ ২০০৪ সালে কোন রকম পুষ্টি ছাড়াই উত্পাদিত গুঁড়ো দুধ খেয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর আনহুই-তে মৃত্যু হয় ১৩ শিশুর৷