আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁকে বিবেচনা করা হয় অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে৷ তবে বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক হতে পারেননি তিনি এখনো৷ বরং আগামী বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা অংশ নিতে পারবে কিনা তাই নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা৷
বিজ্ঞাপন
ক্লাব ফুটবলে লিওনেল মেসি যতটা সফল দেশের হয়ে ততটা নন৷ তবে চেষ্টায় কমতি নেই তাঁর৷ সর্বশেষ ম্যাচের পর তাই আর্জেন্টিনার কোচ হোর্খে সাম্পাওলি অকোপটে বললেন, ‘‘লিওনেল মেসির কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি আমরা কিছু চাইতে পারি না৷ তাঁর সুযোগ ছিল, তিনি সুযোগ তৈরি করেছিলেন৷''
তবে গোল করা হয়নি মেসির৷ ফলে বৃহস্পতিবার পেরুর বিরুদ্ধে গোল শূন্য ড্র করেছে তাঁর দল৷ তারপরও কোচ বলেন, ‘‘মেসি অনেক চেষ্টা করেছেন, ঠিক আমরা যেভাবে চেয়েছি সেভাবে৷''
বিশ্ব ফুটবলে সেরা ৮টি অঘটন
বরাবরই সবাইকে বলতে শোনা যায়, ‘‘খেলায় হার-জিত আছে’’৷ অথচ বড় বড় দল যখনই ছোট দলের কাছে হারে, তখনই সেটা হয়ে যায় ‘আপসেট’৷ বড় দলের জন্য সেটাই বিপর্যয়৷ বিশ্ব ফুটবলে তেমন কয়েকটি আপসেট বা অঘটন নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
১৯৫০-এর বিশ্বকাপের সেই অঘটন
সেবার ফুটবল পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ চুনোপুঁটির কাছে ব্রিটিশ সিংহদের পরাজয়ের খবরটি প্রথমে টেলিপ্রিন্টারে যখন ইংল্যান্ডের এক সংবাদপত্রের অফিসে পৌঁছালো, এক সাংবাদিক নাকি ছাপার ভুল ভেবে ম্যাচের ফলাফল লিখেছিলেন ইংল্যান্ড ১০ যুক্তরাষ্ট্র্র ১৷ সেই ম্যাচে একটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন গোলরক্ষক ফ্র্যাংক বোরঘি৷ এই খেলা নিয়ে মুভিও হয়েছে, নাম ‘দ্য গেম অফ আওয়ার লাইভস’৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
উত্তর কোরিয়ার ইটালি ‘বধ’
এই অঘটনের সাক্ষী ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ আসর৷ ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮-এ বিশ্বকাপ জেতা ইটালি ওই ম্যাচে পুঁচকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ড্র করলেই চলে যেতো দ্বিতীয় রাউন্ডে৷ কিন্তু প্যাক দো ইকের গোলে জয় পেয়ে যায় উত্তর কোরিয়া৷ এমন ইতিহাস গড়া গোলে জন্য সরকারের কাছ থেকে একটি গাড়ি উপহার পেয়েছিলেন প্যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa /empics
ব্রাজিলের সর্বনাশ
১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ আসরটি হয়েছিল ব্রাজিলে৷ ব্রাজিল তখন দুর্দান্ত দল৷ দুর্দান্ত খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলেছিল তারা৷ রিও ডি জানেরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে সেদিন উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র করলেই হতো৷ কিন্তু ২ লাখ ব্রাজিলীয় দর্শকের উল্লাস মাটি করে ২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল৷
ছবি: picture-alliance/ASSOCIATED PRESS
কোথায় আলবেনিয়া, কোথায় জার্মানি!
১৯৬৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব৷ আলবেনিয়ার মুখোমুখি জার্মানি (তখন পশ্চিম জার্মানি)৷ না জিতলে মূল পর্বে খেলতে পারবে না জার্মানরা৷ সত্যিই জেতা হলো না৷ আলবেনিয়ার সঙ্গে ড্র করে মূল পর্বের আগেই ছিটকে পড়ল জার্মানি৷
ছবি: AP
জার্মানির স্বপ্নভঙ্গ
১৯৯২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল৷ জার্মানির মুখোমুখি ডেনমার্ক৷ জার্মানরাই ছিল ফেবারিট৷ কিন্তু জার্মানদের ২-০ গোলে হারিয়ে ডেনিশরাই হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন৷ জার্মানির ওই দলটিই কিন্তু ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল৷
ছবি: imago/Laci Perenyi
২০০২ বিশ্বকাপ সেনেগালের চমক
সে আসরের প্রথম ম্যাচ৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপে নবাগত সেনেগাল৷ ফ্রান্স ড্র করতে পারে এমন কথাও কেউ ভাবেননি৷ কিন্তু সেনেগালের কাছে ১-০ গোলে হেরে গেল ফ্রান্স৷ ফরাসি তারকা ফুটবলার জিনেদিন জিদান অবশ্য ইনজুরির জন্য সেই ম্যাচে খেলেননি৷
ছবি: imago/Camera 4
আর্জেন্টিনার হার
১৯৯০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটায় খেলেছিল আগের বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং সে আসরের নবাগত ক্যামেরুন৷ আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মারাদোনাকে আগে নিষ্ক্রিয় করার সব চেষ্টাই করেছেন সেদিন ক্যামেরুনের খেলোয়াড়াররা এবং তাতে সাফল্যও পেয়েছেন৷ মিলানে ক্যামেরুনের কাছে ১-০ গোলের হারটা হজম করতে আর্জেন্টাইনদের খুব কষ্ট হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Carlo Fumagalli
এবং ব্রাজিলের ৭ গোল হজম
২০১৪ বিশ্বকাপের ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচটিকে অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই অঘটনের তালিকায় রাখেন না৷ তাঁরা মনে করেন, ফুটবলের দুই পরাশক্তির ম্যাচের ফলাফল ৭-১ হলে সেটাকে পরাজিত দলের জন্য বিপর্যয় বলা যায়, তবে অঘটন সেটা নয়৷ তবে বিশেষজ্ঞরা যা-ই বলুন, পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের এক ম্যাচে ৭ গোল খাওয়া নিশ্চয়ই ফুটবল ইতিহাসে লিখে রাখার মতো ঘটনা৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
সেভিয়া আর চিলির সাবেক এই কোচ মেসির কাছে আর কিছু না চাইলেও দলের অন্য খেলোয়াড়দের কাছে নিশ্চয়ই চাইতে পারেন৷ আর্জেন্টিনার তারকাখচিত দল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ১৭টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ছয়টিতে জিতেছে৷ ফলে দক্ষিণ অ্যামেরিকার বাছাইপর্বে দলটির অবস্থান এখন ষষ্ঠ৷
রাশিয়ার বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখতে চাইলে তাই আগামী মঙ্গলবার বাছাইপর্বের চূড়ান্ত ম্যাচে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে অবশ্যই জিততে হবে আর্জেন্টিনাকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে প্রথম চারটি দল সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে৷ আর পঞ্চম দলটিকে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ‘প্লেঅফ' ম্যাচ খেলতে হবে৷
তবে এখনো পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েননি আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলি বরং বিশ্বকাপে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘যে জিনিসটা আমরা পাচ্ছি না, তা হচ্ছে একটি গোল৷''
বাছাইপর্বে অংশ নেয়া দলগুলো মধ্যে শুধুমাত্র বলিভিয়া, যে দলটি ইতোমধ্যে বাদ পড়েছে, আর্জেন্টিনার চেয়ে কম গোল করেছে৷ অন্যদিকে, ১৭চি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচ জেতা ভেনেজুয়েলাও আর্জেন্টিনার চেয়ে দু'টি গোল বেশি করেছে৷ ওদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের গোলের সংখ্যা মেসির দলের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি৷
আর্জেন্টিনার হঠাৎ করে এমন গোল খরা সৃষ্টির কারণ অবশ্য বলতে পারছেন না কেউ৷ তবে গণমাধ্যম ইতোমধ্যে মেসিবিহীন বিশ্বকাপের শঙ্কার কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ ক্লারিন নামের একটি সংবাদপত্র শিরোনাম করেছে, ‘‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় ছাড়াই কি এবার বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে?'' আর লা নাথিওন পত্রিকা মনে করছে, শেষ অবধি অলৌকিক কোনো ঘটনা না ঘটলে রাশিয়ার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দেখার সম্ভাবনা নেই৷
লিওনেল মেসির বিয়ে
এই তো ক’দিন আগে ছোটবেলার প্রেম, ওদের দুই সন্তানের মা আন্তোনেলা রোকুৎসোকে আর্জেন্টিনায় নিজের শহর রোজারিও-য় বিয়ে করলেন লিওনেল মেসি৷ অতিথির মধ্যে ছিলেন বার্সেলোনার টিমমেট নেইমার, সুয়ারেজ ও পিকে – ও পিকের স্ত্রী শাকিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. R. Caivano
বিয়ের কনে
আন্তোনেলা যাঁর ডিজাইন করা সাদা বিয়ের গাউনটি পরেছিলেন, এভা লঙ্গোরিয়া বা স্পেনের রানি লেতিৎসিয়া সেই রোজা ক্লারা নামের স্প্যানিশ ফ্যাশন ডিজাইনারের ডিজাইন করা ড্রেস পরে থাকেন৷ বিয়ে হচ্ছিল রোজারিও-র সিটি সেন্টার ক্যাসিনোয়৷ শ’দেড়েক ফটোগ্রাফার আর সাংবাদিক শুধুমাত্র লাল গালিচা পর্যন্ত যাবার অনুমতি পেয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. R. Caivano
ছেলেবেলার প্রেম
৩০ বছর বয়সি লিও আর ২৯ বছর বয়সি আন্তোনেলা নাকি পরস্পরকে চেনেন পাঁচ বছর বয়স থেকে৷ মেসি যখন ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় চলে যান, তখনও তাদের ছেলেবেলার সেই অনুরাগ অটুট থাকে৷ তবে রোম্যান্সের শুরু নাকি ২০১০-এর কাছাকাছি৷ উভয়ের দুই সন্তান টিয়াগো আর মাটেও-র বয়স চার ও এক৷ আন্তোনেলা বর্তমানে বার্সেলোনাতেই থাকেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
ঝগড়া মিটে গেছে
শাকিরা আর আন্তোনেলার মধ্যে ঝগড়ার খবর বাজারে বহুদিনের৷ এমনকি জেরার পিকে ও তাঁর কলম্বিয়ান পপ তারকা সহধর্মিনিকে মেসির বিয়েতে আমন্ত্রণ করা হবে কিনা, তা নিয়েই নাকি সন্দেহ ছিল৷ ৩০শে জুন, শুক্রবার কিন্তু দেখা গেল পিকে ও শাকিরা ঠিকই প্লেন থেকে নামছেন রোজারিও বিমানবন্দরে; অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/telam
খেলার মাঠ ছেড়ে বিয়েবাড়িতে
নিমন্ত্রণ খেতে এসেছেন – ডান থেকে বাঁয়ে – কার্লেস পুইয়ল ও তাঁর স্ত্রী ভ্যানেসা লোরেনৎসো; চেস্ক ফাব্রেগাস ও তাঁর স্ত্রী ডানিয়েলা সেমান; হাভিয়ের হার্নান্দেজ ও তাঁর স্ত্রী নুরিয়া কুনিলেরা৷ যেন সব হলিউডের ফিল্মস্টার...
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
সেই লুইস সুয়ারেজ...
এখানে স্ত্রী সোফিয়া বালবি-র সঙ্গে...
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
সের্জিও রোমেরো...
ম্যানচেস্টারের গোলকিপার এসেছেন স্ত্রীকে সাথে নিয়ে...
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
জর্দি আলবা...
বার্সেলোনার প্লেয়ার, ইনিও সস্ত্রীক...
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
থামস আপ...
...সাইন দিলেন লিওনেল মেসি – সব কিছু ঠিকঠাক চলেছে বোধহয়৷ এবার আর্জেন্টিনার হয়ে একটা বড় খেতাব জিতলেই তাঁর কাজ শেষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
8 ছবি1 | 8
কোচের মতো গণমাধ্যমও অবশ্য আর্জেন্টিনার এই করুণ দশার দায় মেসির উপরে চাপাচ্ছে না৷ বরং তাদের আক্ষেপ, বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুই তারকার একজন ছাড়াই হয়ত আগামী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে৷ এমন আশঙ্কা থেকেই মেসি হয়ত গতবছর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ তাহলে এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসে কি ভুল করলেন তিনি?