বিশ্বের যেসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি, আর্জেন্টিনা তার মধ্যে একটি৷ গত কয়েক দশক ধরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট বা দুই অংকের ঘরে থাকছে৷ তবে বিশ্বকাপের কারণে কষ্ট কিছুটা ভুলে থাকছেন আর্জেন্টিনার নাগরিকেরা৷
বিজ্ঞাপন
কারখানায় কাজ করা শ্রমিক অ্যাকস্টা বলছেন, ‘‘ফুটবল আমাদের প্রতিদিনের সমস্যা কিছুটা ভুলে থাকতে সহায়তা করছে৷ আর্জেন্টিনা যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে আমাদের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না, কিন্তু অন্তত আমরা খুশি হব৷''
বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে বাড়ি হোক কিংবা বার, সব জায়গায় সমর্থকেরা টিভির সামনে ভিড় করেছেন৷ রাজধানী বুয়েনস আইরেসে ফ্যান জোনও তৈরি করা হয়েছে৷ ফাইনালে জিতে ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচানোর অপেক্ষায় থাকবেন সমর্থকরা৷ ‘‘অনেকে জয়টা চাইছেন৷ যদিও তারা জানেন, এটা শুধুই একটি খেলা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা সম্পর্কে তারা ভালোই অবগত আছেন,'' এএফপিকে বলেন ৩৮ বছর বয়সি হাসপাতালকর্মী লুক্রেসিয়া প্রেসডিগার৷
আর ডিজাইনার টনি মলফেস বলছেন, আর্জেন্টিনা জিতলে সেটা মানুষকে ‘কিছুটা মুক্তি দিবে, মানুষ কিছুক্ষণ মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারবে, ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দ পাবে - যা আমাদের পাওনা৷''
আর্জেন্টিনার শ্রমমন্ত্রী কেলি অলমোস বলেন, ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা যখন প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল তখন দেশে স্বৈরতন্ত্র ছিল৷ ‘‘আমরা জানতাম না কাল কী হবে, কিন্তু যখন আর্জেন্টিনা জিতে গেল তখন আমরা সব ভুলে রাস্তায় উৎসবে মেতে উঠেছিলাম,'' বলেন তিনি৷ ‘‘এরপর আবার সবাই বাস্তবে ফিরে গিয়েছিল,'' যোগ করেন শ্রমমন্ত্রী৷
নভেম্বরে প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, তিন-চতুর্থাংশের বেশি আর্জেন্টাইন মনে করেন, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলার ফল মানুষের মনোবলের উপর প্রভাব ফেলবে৷ ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা এও মনে করছেন, প্রায় ১০ মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপরও বিশ্বকাপের ফলের একটা প্রভাব থাকবে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
মেসি বনাম এমবাপ্পে: ড্রিবলিং বনাম স্পিড
গতিতে সেরা ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে৷ আর আর্জেন্টাইন প্লেমেকার লিওনেল মেসি হলেন ড্রিবলিংয়ে অনবদ্য৷ ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি একই ক্লাব পিএসজিতে খেলা দুই মহাতারকা৷ কে কোথায় এগিয়ে? চলুন দেখা যাক৷
ছবি: Frank Hoermann/SVEN SIMON/IMAGO
গোল স্কোরিং
অভিজ্ঞতায় মেসি এগিয়ে৷ সর্বকালের সেরাদের একজনের তকমা লেগেছে গায়ে আগেই৷ খেলেছেন পাঁচটি বিশ্বকাপ৷ গোল করেছেন ১১টি৷ সে হিসেবে এমবাপ্পে এগিয়ে, দুই বিশ্বকাপেই তার গোল ৯টি৷ তবে ২০২২ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত মেসি আর এমবাপ্পের গোলসংখ্যা সমান ৫টি করে৷
ছবি: Stefan Matzke/sampics/picture alliance
গতি
মেসি আর এমবাপ্পেকে ১০০ মিটার দৌঁড়ে নামিয়ে দিলে কে জিতবেন? উত্তর জানা৷ গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনার হারের অন্যতম কারণ ছিল এমবাপ্পের গতি৷ তবে মেসির সৃজনশীলতা ও চিন্তার গতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ড্রিবলিং
ফু্টবলের ব্যক্তিগত স্কিল বলতে ড্রিবলিংয়ে কে সেরা সেটিই অন্যতম বিবেচ্য৷ ১০০ মিটার দৌঁড়ে যদি অনেক বাধা বসিয়ে দেয়া হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে মেসিই জয়ী হবেন৷
ছবি: Ariel Schalit/AP/picture alliance
পাসিং
নেদারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে মলিনাকে দেয়া মেসির পাসটির কথা খেয়াল আছে? এমন পাস দেয়া তো দূরের কথা, বেশিরভাগ খেলোয়াড় সেটি দেখবেনই না৷ এমবাপ্পেও একাধিক অ্যাসিস্ট করে দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন৷ তবে পাস ও অ্যাসিস্টে বিশ্লেষকরা মেসিকে এগিয়ে রাখবেন৷
ছবি: Pascal Guyot/AFP/dpa/picture alliance
দূরত্ব
মাঠে কে কতটা দৌঁড়ান? মেসিকে বেশিরভাগ সময়ই হাঁটতে বা জগিং করতে দেখা যায়৷ যেমন রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে এক ম্যাচে তিনি ম্যাচের ৮৩ ভাগ সময় শুধু হেঁটেছেন৷ অথচ একটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন৷ এমবাপ্পেকেও অন্য খেলোয়াড়দের পেছনে খুব একটা দৌঁড়াতে দেখা যায় না৷
ছবি: REUTERS
নেতৃত্ব
এই বিশ্বকাপে এক ভিন্ন মেসিকে দেখছে সবাই৷ কতকটা আগ্রাসী, কতকটা আবেগপ্রবণ৷ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জয়ের পর উদযাপন বা লুই ফন গালের সঙ্গে বিতণ্ডা এক ভিন্ন মেসিকে চিনিয়েছে৷ তিনি যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ সে তুলনায় এমবাপ্পের বয়স মাত্র ২৩৷ তবে মাঠের অগ্রভাগে তার ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷