পুরো বিশ্ব এখন বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে৷ আর এই উত্তাপের ছোঁয়া বাঙালিদের মধ্যে যেন একটু বেশি করেই লেগেছে৷ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না থাকলেও, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বন্দ্ব উঠেছে তুঙ্গে৷ ব্লগওয়াচ তাই এ সব নিয়েই৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাত ১০টায় আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের৷ এই ম্যাচকে ঘিরে আবারো দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুই দলের সমর্থকরা৷ বাংলাদেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকদের আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পাতা রয়েছে৷ সেই পাতায় লেখা হয়েছে, ‘‘আমাদের চার গোল করতে ফ্যান্টাস্টিক ফোর লাগে না৷ ফ্যান্টাস্টিক ফোর নিয়ে ৯২ মিনিটে গোল দিয়ে জিতিনা আমরা৷ আমরা ব্রাজিল, টিম নিয়ে খেলি৷ আমাদের লাগেনা ভল্কান গ্রহের প্লেয়ার৷ নেইমার যথেষ্ট, ভল্কান গ্রহের প্লেয়ার মেসি ৩ বিশ্বকাপ খেলে গোল মাত্র ৪টা, বস নেইমার অভিষেক বিশ্বকাপে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে গোল ৪টা৷ আর লাগে? এগিয়ে যাও ব্রাজিল, এগিয়ে যাও নেইমার, আমরা কোটি ভক্ত আছি তোমাদের সাথে, হেক্সা ইজ কামিং৷’’
রাশিয়া বিশ্বকাপেও সবাই তাঁদের দিকে তাকিয়ে৷ মেসি আর নেইমার৷ চলুন ২০১৪ বিশ্বকাপে তাদের কয়েকটি ম্যাজিক দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: Pedro Ugarte/AFP/Getty Images
শুরুতেই নেইমার
২০১৪ বিশ্বকাপে তারকার দ্যুতি কিন্তু প্রথমে নেইমারই দেখিয়েছেন৷ আসর শুরু হয়েছিল ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দিয়ে৷ আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও পরে নেইমারের গোলেই ম্যাচে ফিরেছিল ব্রাজিল৷ গোল করার পর নেইমারের উল্লাস৷
ছবি: Reuters
আবার নেইমার
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেদিন শুধু ব্রাজিলকে ম্যাচে ফেরাননি, আরেক গোল করে জয়ের দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার৷ গোলটি হয়েছিল পেনাল্টি থেকে৷ ছবিতে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক স্টিপে প্লেটিকোসাকে নেইমারের শট রোখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
মেসির শুরু
বিশ্বকাপ ২০১০ শুধু হতাশাই দিয়েছিল লিওনেল মেসিকে৷ সে আসরে আর্জেন্টিনা তো প্রত্যাশা মতো খেলতে পারেইনি, মেসিও পাননি বলার মতো কোনো সাফল্য৷ মেসির মতো খেলোয়াড় সেবার একটা গোলও পাননি, ভাবা যায়! ২০১৪-তে কিন্তু গোলখরা কাটাতে বেশি সময় নেননি৷ রিও ডি জেনেরোয় নিজেদের প্রথম ম্যাচে বসনিয়াকে ২-১ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা৷ দু’গোলের মধ্যে একটি ছিল মেসির৷
ছবি: Reuters
ত্রাণকর্তা মেসি
দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইরান৷ সহজ জয়ই ছিল প্রত্যাশিত৷ কিন্তু ইরান কোমর বেঁধে নামে গোল না খাওয়ার লড়াইয়ে৷ মেসি ছিলেন বলে রক্ষা৷ তাঁর একমাত্র গোলেই সেদিন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা৷ মেসির শট থেকে বল যাচ্ছে জালে, আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করতে করতে পারলেন না গোলরক্ষক আলী রেজা হাঘিঘি, শেষ রক্ষা হলো না ইরানের৷
ছবি: Reuters
নেইমার-নির্ভর ব্রাজিল
মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা প্রায় অচল – এটা এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত সত্য৷ ব্রাজিল দলে নেইমারের গুরুত্বও এখন এরকম৷ মেক্সিকোর বিপক্ষে নেইমার গোল পাননি৷ ব্রাজিলকে সেই ম্যাচ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে৷ গ্রুপ পর্বে পাঁচ বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের শেষ ম্যাচটি ছিল ক্যামেরুনের বিপক্ষে৷ এ ম্যাচেও নেইমারের গোলেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Reuters
আবার জোড়া গোল
ক্রোয়েশিয়ার মতো ক্যামেরুনের বিপক্ষেও এক গোল করে সন্তুষ্ট থাকেননি নেইমার৷ এ ম্যাচেও জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা৷ কোচ স্কলারি অবশ্য নকআউট পর্বের কথা ভেবে দলের সেরা তারকাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেননি৷ দু’গোল করার পরই তুলে নেন নেইমারকে৷
ছবি: AFP/Getty Images
মেসি মানেই গোল
‘এফ’ গ্রুপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে মেসির গোলেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা৷ তারপরও থামেননি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেসি-ম্যাজিক
আর্জেন্টিনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল নাইজেরিয়া৷ ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরের মিনিটেই মুসার গোলে সমতা ফেরায় তারা৷ তারপর আবার মেসি-ম্যাজিক৷ ফ্রি-কিক থেকে গোল করে আবার আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন এই ফুটবলার৷ ছবিতে মেসির ফ্রি কিক নেয়ার দৃশ্য, বাঁক খেয়ে বল যাচ্ছে গোল পোস্টের দিকে৷
ছবি: Pedro Ugarte/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
‘‘আর্জেন্টিনার খেলা দেখেন আজ
গুছিয়ে রাখেন হাতের যত কাজ৷
একটুখানি কষ্ট করে
হাতটা রাখেন খালি
কারণ, মেসির গোলের সঙ্গে সঙ্গে
দিতে হবে তালি৷
ভক্তরা কই ব্রাজিল দলের
শক্ত হয়ে বসেন
মেসির খেলা দেখেই আজ
কাপ-এর হিসাব কষেন৷’’
আর্জেন্টিনার ভক্ত সাংবাদিক ওবায়দুল গনি চন্দন৷ তিনি তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক হলেও চিলির সাথে ব্রাজিল হারলে ওয়ার্ল্ডকাপের মজা, গ্ল্যামার বা অন্যান্য আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যেত সেটা হাড়ে হাড়েই টের পাই৷ কথা হচ্ছে টাইব্রেকারে নেইমারের পেনাল্টি কিক নিয়ে৷ ব্রাজিলের কোনো দশ নাম্বার প্লেয়ারের পেনাল্টি কিকে ‘খিরকিজ’ মেরে, মানে কিকের আগেই পা ঘুরানি দিয়ে যে কিক করলো এমন নজির পাইনি৷ এই রকম পেনাল্টি কিক করে কোন সভ্য প্লেয়ার?''
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন নেইমারের অ্যাটিচ্যুড নিয়ে৷ লিখেছেন, ‘‘তার চুল দেখছেন, হাঁটা চলাফেরা, চালচলন? পুরাই মনে হয় বাসাবোর ওহাব কলোনীর বস্তিতে বড় হয়েছে৷ বস্তির পোলাপানের শিশুকালে ছয়টা টিকার সবগুলো বোধ হয় পড়ে না৷ নেইমারেরও কিছু একটা আছে, আর সেটা ছয়টি টিকার একটি দুটি না দেয়ার কারণেই৷
চুমু খাওয়ার মজাই আলাদা
ফুটবল মানে বাঁধভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস দুঃখ, হতাশা বা কান্না৷ গত বিশ্বকাপের সময় আবেগ, অনুভূতি প্রকাশে রাখঢাক রাখেননি অনেকেই৷ এমনকি প্রকাশ্যে চুমু খেতেও আপত্তি ছিল না তাঁদের৷ ফুটবল ভক্তদের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: Behrouz Mehri/AFP/Getty Images
প্রেমিক যুগল
১৭ই জুন ২০১৪৷ ব্রাজিলের সালভাদোরে খেলা হচ্ছিলো ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোর৷ খেলা দেখার সময় ব্রাজিল দলের ভক্ত যুগল এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন৷
ছবি: Getty Images
জার্মান দলের ভক্ত
২০১০ সালের ৭ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছিল৷ জার্মানি বনাম স্পেনের সেমি ফাইনাল খেলা৷ বার্লিনের ‘ফ্যান মাইল পাবলিক ভিউয়িং’-এ খেলা দেখার সময় জার্মান জাতীয় দলের দুই ভক্তের চুম্বনের দৃশ্য এটি৷
ছবি: AFP/Getty Images
ব্রাজিল দলের ভক্ত যুগল
খেলা হচ্ছে ব্রাজিল দলের সাথে মেক্সিকো দলের৷ দেশের মাটিতে প্রিয় দলের খেলা হচ্ছে, কাজেই আনন্দ কিছুটা বেশিই! অন্যান্যদের মাঝে বসে নিজেরা চুম্বনে ব্যস্ত৷
ছবি: Dimitar Dilkoff/AFP/Getty Images
ফ্রেঞ্চ কিস!
এ বছর ১৫ই জুন, পর্তো আলেগ্রের বাইরা – রিও স্টেডিয়ামে ই-গ্রুপের প্রাথমিক খেলা৷ খেলছিল ফ্রান্স বনাম হন্ডুরাস৷ খেলা চলাকালে এই বিশেষ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন এক আলোকচিত্রী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিলির ভক্তদের চুম্বন
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪, চিলির সাথে স্পেনের বি-রাউন্ডের প্রাথমিক খেলা৷ চিলির ভক্তরা ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে দেখতে চুমু খাচ্ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুই ‘অন্ধ ভক্তের’ কাণ্ড
স্প্যানিশ দলের দুই ‘অন্ধ ভক্ত’ চুম্বন করছেন স্পেন বনাম হল্যান্ডের খেলা দেখার সময়৷ খেলাটি হয় গত ১৩ই জুন সালভাদোরের অ্যারেনা ফন্টে নোভা স্টেডিয়ামে৷
ছবি: Getty Images
কলোম্বিয়া বনাম গ্রিসের খেলা
১৪ই জুন ২০১৪, কলোম্বিয়া বনাম গ্রিসের খেলা৷ খেলাটি হয় ব্রাজিলের বেলো হরিসন্ট-এর মিনাইরাও অ্যারেনাতে৷ কলোম্বিয়া দলের ভক্তদের এই চুম্বনটি খেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তোলা৷
ছবি: AFP/Getty Images
মাঠের শত্রু যখন বন্ধু
মানাউসের অ্যামাজন অ্যারেনা স্টেডিয়ামে ১৪ই জুন ইংল্যান্ডের সাথে ইটালির গ্রুপ ‘ডি’-এর ফুটবল ম্যাচ৷ ইটালি দলের ভক্ত চুম্বন করেছেন ইংল্যান্ড দলের ভক্তকে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
উরুগুয়ের ভক্তদের চুমু
উরুগুয়ের ভক্ত একে অপরকে চুমু দিচ্ছে৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ালিফাই খেলার সময়৷ খেলাটি ছিল কোস্টারিকা বনাম মন্টেভিডিও৷
ছবি: AP
স্পেনের সমর্থক যুগল
স্পেনিশ দলের সাপোর্টার দু’জন এভাবেই চুমু খাচ্ছেন রিও ডি জানেরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে, যখন চিলির জাতীয় দলের সাথে স্পেনের জাতীয় দলের খেলা চলছিল ১৮ই জুন ২০১৪ সালে৷
ছবি: LLUIS GENE/AFP/Getty Images
ইরানি যুগল
১৬ই জুন ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ইরান বনাম নাইজেরিয়ার খেলা৷ খেলা শুরুর ঠিক আগে ইরানের ভক্ত প্রেমিক-প্রেমিকার চুমুর দৃশ্য এটি৷ রক্ষণশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত ইরানের নাগরিকদের এ রকম প্রকাশ্য চুমুর ছবি সত্যিই বিরল৷
ছবি: Behrouz Mehri/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়েছি ম্যারাডোনার কারণেই৷ তবে ম্যারাডোনাও কিন্তু বস্তিরই আচরণ করেছেন৷ আপনি চিন্তা করেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হাতে গোল দিয়ে নেইমার যদি ওয়ার্ল্ডকাপ জেতে তাকে জীবনে মাফ করতে পারবেন? ম্যারাডোনা গোল দিয়েছেন হাতে৷ ইংল্যান্ডের মানুষ সারাজীবন ওই দুঃখ বইবে আর ওকে গাল আর অভিশাপ দেবে৷ হাতের গোল? সেটা চেপে যাওয়া উচিৎ ছিলো৷ সে স্টান্টবাজি ভালোই বোঝে৷ বললো ঈশ্বরের গোল৷ ভক্তরা কিছু না বললেও ইতিহাসের ক্ষমা না করাই উচিৎ৷’’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘ম্যারাডোনার আরো বদনাম আছে, চেপে গেলাম৷ দুনিয়াতে বদমায়েশদের ভক্ত বেশি, ভালোদের কম৷ একমাত্র ব্যতিক্রম শুধু লিওনেল মেসি৷’’
ফেসবুক পাতায় আর্জেন্টিনার সমর্থক শওকত মঞ্জুর শান্ত লিখেছেন, ‘‘বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের খেলায় যা দেখছি, তাতে বড় বড় সব দলের ছাল-বাকলা সব উঠে যাচ্ছে৷ ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি সবারই একই অবস্থা৷ আর্জেন্টনিারও যে আজকে খবর আছে এটা বলাই যায়৷
আর্জেন্টিনার যে দুর্বল ডিফেন্স, তাতে হাফ হালি খাইয়া ফেলা খুবই স্বাভাবিক হবে৷ তবে মেসির কাছেই প্রত্যাশা, আর্জেন্টিনাকে যেন এগিয়ে রাখতে পারে৷’’