মেসি-রোনাল্ডো বিহীন বিশ্বকাপ
৩০ জুন ২০১৮বিশ্বসেরা ফুটবলার কে? লিওনেল মেসি, নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো৷ এ নিয়ে বিভিক্ত পুরো বিশ্ব৷ পাল্লা দিয়ে বছর বছর বেড়েছে দুজনের ব্যক্তিগত অর্জন৷ বিশ্লেষকরা বলছিলেন, এবারের বিশ্বকাপেই হবে চূড়ান্ত লড়াই৷
প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে সে পথে এগিয়েও গিয়েছিলেন রোনাল্ডো৷ পরের ম্যাচেও করেছিলেন এক গোল৷ সে তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দারুণ গোল করে জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত ঠিকই দিচ্ছিলেন৷
কিন্তু মাঝপথেই থেমে গেলো দুই সেরার লড়াই৷ নকআউট পর্বের ম্যাচেনিজেদের খেলায় দুজনেই ছিলেন বেশ নিষ্প্রভ৷ পায়ের জাদুতে কেউই পৌঁছাতে পারেননি নিজেদের উচ্চতায়৷
বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে, মেসি এ নিয়ে নকআউট পর্বের ৮টি ম্যাচ খেলেছেন যার একটিতেও তিনি গোল করতে পারেননি৷ একই অবস্থা রোনাল্ডোরও৷ তিনি গোলশূন্য থেকেছেন নকআউট পর্বে খেলা ৬ ম্যাচেই৷
ফলে আপাতত অমীমাংসীতই থাকছে কে সেরা, সে প্রশ্ন৷ তবে মেসি-রোনাল্ডো ভক্তদের জন্য বিশ্বকাপ যে অনেকটাই পানসে হয়ে গেল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?
কাভানি-সুয়ারেজে কোনঠাসা পর্তুগাল
বলতে গেলে একা কাভানিই কাঁপালেন পুরো ডিবক্স৷ সাথে যোগ্য সারথি হিসেবে বলের জোগান দিয়ে গেছেন লুইজ সুয়ারেজ৷
ম্যাচ শুরুর ৭ মিনিটেই সুয়ারেজের উঁচু করে বাড়ানো বলে হেড করতে যান কাভানি৷ বলে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি৷ কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকায় তাতে কোন সমস্যা হয়নি৷ কাঁধে লেগে বল ঠিকই খুঁজে নেয় গোলপোস্ট৷
ম্যাচের পুরোটা সময় মাঠ দাপিয়ে বেড়ান রোনাল্ডো-পেপে৷ ম্যাচের ৬৩ শতাংশ সময়ে বল ছিলো পর্তুগিজদের দখলেই৷ কিন্তু কেন জানি প্রতিপক্ষের ডিবক্সে ঢুকে ফিনিশিংটা ভালো হচ্ছিলো না৷ বেশ কয়েকটি আক্রমণ নিয়ে গোলপোস্টের মুখে গেলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি পর্তুগালের স্ট্রাইকাররা৷
ফলে প্রথমার্ধে পর্তুগালকে থাকতে হয় গোলশূন্য৷
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৫৫ মিনিটে গুরেইরোর কর্নার থেকে বল আসে ডিবক্সে৷ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এসে লাফিয়ে বলে মাথা ছুঁইয়ে সমতা ফেরান পেপে৷ এই বিশ্বকাপে এটিই উরুগুয়ের জালে প্রথম গোল৷
৬২ মিনিটে আবার কাভানি৷ এবার ডিবক্সের ঠিক দাগের ওপর থেকে ডান পায়ের বুলেট গতির শট৷ গোলকিপারের কিছুই করার ছিলো না৷ ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বলে হাতও ছোঁয়াতে পারেননি পেট্রিসিয়ো৷ বার ঘেঁষে বল ঢুকে যায় জালে৷
কাভানির দ্বিতীয় গোলে বিদায় নিশ্চিত হয় রোনাল্ডোদের৷
তবে ইনজুরি টাইমে সমতা ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে পর্তুগাল৷ ৯৩ মিনিটে কারেসমা মাটিতে পড়ে গেলে ফ্রি কিকের দাবি জানান পর্তুগালের খেলোয়াড়েরা৷ কিন্তু রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান রোনাল্ডো৷ এক পর্যায়ে রোনাল্ডোকে এজন্য হলুদ কার্ড দেখতে হয়৷
শেষ মিনিটে অলআউট আক্রমণে যায় পর্তুগাল৷ কর্নার থেকে শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে নিজের পোস্ট ছেড়ে পর্তুগিজ গোলকিপার পেট্রিসিয়োও চলে আসেন উরুগুয়ের ডিবক্সে৷ কিন্তু তাতে খেলার ফলে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি পর্তুগাল৷
নকআউটের প্রথম বলি ছন্নছাড়া আর্জেন্টিনা
পুরো ম্যাচের ৬১ শতাংশ বল দখলে রেখেও আক্রমণ ও রক্ষণ, দুই বিভাগের দুর্বলতায় পরাজয় মানতে হলো দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের৷
ম্যাচের ১৩ মিনিটেই বিপজ্জনক গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপেকে থামাতে ফাউল করে বসেন মার্কোস রোহো৷ পেনাল্টি পায় ফ্রান্স৷ স্পটকিকে কোনো ভুল করেননি আন্তোনি গ্রিজমান৷ গোলকিপার ডানে ঝাঁপিয়ে পড়লে, তাকে বোকা বানিয়ে সোজা শটে বল জড়ান জালে৷
গোল পরিশোধে রীতিমতো মারমুখি হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা৷ বলের দখল নিতে মরিয়া হয়ে হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার তিনজন খেলোয়াড়৷
অবশেষে ৪১ মিনিটে চমক লাগানো এক গোলে সমতা ফেরান ডি মারিয়া৷ বানেগার কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে ৩৫ গজ দূর থেকে জোরালো বাঁকানো শটে বল বার ঘেঁষে ঢুকে যায় পোস্টে৷
১-১ গোলে শেষ হওয়া প্রথমার্ধই আভাস দিচ্ছিল দ্বিতীয়ার্ধের উত্তেজনার৷
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার গোল৷ ৪৮ মিনিটে এবার দলকে এগিয়ে নেন গ্যাব্রিয়েল মারকাডো৷ মধ্যমাঠ থেকে বানেগার ক্রস নিয়ে ফরাসি রক্ষণভাগের মধ্য দিয়ে জায়গা বের করে নিয়েছিলেন মেসি৷ ফরাসি গোলকিপার সেদিকে ঝাঁপও দিয়েছিলেন৷
কিন্তু মেসির শট সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা মারকাডোর পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে গোলকিপারের অপর পাশ দিয়ে জালে ঢুকে যায়৷ ১-২ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা৷
তবে এরপর ফ্রান্স যা দেখালো, তার সামনে আর টিকে থাকতে পারেননি মেসিরা৷
৫৭ মিনিটে ২-২ এ সমতা ফেরান বাঁজামাঁ পাভার্ড৷ ডি-বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া বলে এক ভলিতে ফ্রান্সকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে৷
অলআউট অ্যাটাকে যাওয়া রক্ষণভাগে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এমবাপের জোড়া আঘাত ম্যাচকে নিয়ে যায় আর্জেন্টিনার নাগালের বাইরে৷ ৬৪ এবং ৬৮ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে ছোট ছোট পাসে করা দুই গোলে স্কোর পরিণত হয় ৪-২ এ৷
এরপর অতিরিক্ত সময়ে ৯৩ মিনিটে আগুয়েরো একটি গোল পরিশোধ করতে পারলেও, ম্যাচে আর ফিরে আসতে পারেনি আর্জেন্টিনা৷