জার্মানির রাস্তায় সবাই ঠিকভাবে নিয়ম মেনে চলছে কিনা শুধু তা দেখতেই কাজে নেমেছিলেন ১১ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা৷ দারুণ কাজ হয়েছে তাতে৷ এক দিনেই সতর্ক করা হয়েছে ৫১ হাজার জনকে, মোবাইল হাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ৩,১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hollemann
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সড়কে শৃঙ্খলা তদারক করতে দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযানে নেমেছিল জার্মান পুলিশ৷১১ হাজার কর্মকর্তা একযোগে শুরু করেছিলেন অভিযান৷ পথচারী নিয়ম মেনে চলছেন কিনা, গাড়ি, মোটরবাইক বা বাইসাইকেল চালকরা কোথাও নিয়ম ভঙ্গ করছেন কিনা– এসব দেখাই ছিল মূল লক্ষ্য৷ একদিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ধরে চালানো এ অভিযানের ফলাফল দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়৷ শুধু মনযোগ দিয়ে গাড়ি না চালানোর কারণেই সতর্ক করা হয়েছে ৫১ হাজার জনকে৷ অনেকেই গাড়ি চালানো বা হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময় সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে পড়েছেন পুলিশের খপ্পরে৷ চলেছে জেরা৷ মামলা, জরিমানাও হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে৷
জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করলে যে শাস্তি
জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করা শুধু অপরাধই নয়, এতে চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত হারাতে পারেন৷ সাইকেল চালাকদের ক্ষেত্রেও তথৈবচ৷ সম্প্রতি এর জন্য জরিমানার পরিমাণ আরো বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/M
জরিমানা আরো বেড়েছে...
আগে গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জরিমানা ছিল ৬০ ইউরো৷ কিন্তু বর্তমানে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ ইউরো, অর্থাৎ আনুমানিক বাংলাদেশি দশ হাজার টাকা৷ এছাড়াও এমনটা ধরা পড়লে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে চালক পান ‘দুই পয়েন্ট’, যা কিনা দু’শ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷ এমনকি সাময়িকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সও হারাতে পারেন চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ
একই নিয়ম গাড়িতে ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও৷ অর্থাৎ গাড়ি চালানোর সময় শুধু স্মার্টফোন নয়, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহারেও একই আইন প্রযোজ্য
ছবি: picture-alliance/empics/Y. Mok
জার্মানির ট্রাফিক আইন-কানুন খুবই কড়া
জরিমানার পরিমাণ অবশ্য নির্ভর করে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ঘটা অ্যাক্সিডেন্টটি কত বড় তার ওপর৷ যত বড় দুর্ঘটনা বা ক্ষতি হয়, সে অনুযায়ী হয় জরিমানার পরিমাণ৷
ছবি: Imago/kamera24
সাইকেল চালক
অনেক সাইকেল চালককেই মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়৷ এ অবস্থায় ধরা পড়লে নতুন আইন অনুযায়ী তাঁকে জরিমানা হিসেবে দিতে হয় ৫৫ ইউরো৷ যদিও এর আগে ঐ একই অপরাধে জরিমানার পরিমাণ ছিল ২৫ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/C. Anzenberger-Fink
বোরকা পরে বা মুখ ঢেকে গাড়ি চলানো নিষেধ
পুরো মুখ ঢেকে বা বোরকা পরে গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জার্মানিতে৷ কেউ মুখ ঢেকে গাড়ি চালালে তাঁকে গুণে গুণে দিতে হবে ৬০ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
উদ্ধারকারী গাড়ি বাধা পেলে
কারো ভুল পার্কিংয়ের কারণে উদ্ধারকারী গাড়ি, অর্থাৎ অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কর্মী বা অন্য কোনো ‘ইমারজেন্সি’ গাড়ির চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে, নতুন আইনে তাকে গুণতে হবে ২০০ ইউরো৷ আর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বা গাড়ি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে চালক পাবে দুই পয়েন্ট, অর্থাৎ দু’শ ইউরো৷ অথচ এ ধরনের অপরাধে আগে মাত্র ২০ ইউরো জরিমানা দিয়েই পার পাওয়া যেত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আরো নিয়মকানুন
এছাড়াও গাড়ি চালকদের বিভিন্ন অপরাধের জন্য জার্মানিতে রয়েছে নানা রকম আইনকানুন৷ অপরাধের মাত্রা বুঝে অপরাধীকে জেল পর্যন্ত খাটতে হতে পারে৷ তাই কিন্ডারগার্টেন, স্কুল বা আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালককে ভীষণভাবে সতর্ক থাকতে হয়৷ এ সব জায়গায় ‘স্পিড লিমিটের’ সামান্য হেরফের হলেই জরিমানা! সেকারণেই হয়ত গাড়ি চালকরা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ‘ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ইন্সটিটিউট’ সম্পর্কে সচেতন৷
ছবি: Imago/Norbert Schmidt
7 ছবি1 | 7
মন দিয়ে গাড়ি না চালানোর কারণে একদিনে মামলা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০টি৷ এর মধ্যে স্মার্টফোনের কারণে জরিমানা গুনতে হয়েছে ৩ হাজার ১০০ জনের৷ তাঁদের কেউ গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলছিলেন, কেউবা লিখছিলেন টেক্সট মেসেজ৷ জার্মানিতে মদ পান করে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় ধরা পড়লে জরিমানা অবধারিত৷ মোবাইল হাতে নিয়ে গাড়ি চালানো তার চেয়েও বড় অপরাধ৷ যে মাত্রার মদ্যপান চালকদের জন্য বৈধ, তার দ্বিগুন মদ্যপান করার সমতুল্য মনে করা হয় মোবাইল হাতে গাড়ি চালানোকে৷ তবে জরিমানা এবং শাস্তি অবশ্য সমান৷ তাই মদ্যপ চালকদের মতো স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে গাড়ি চালানো ওই ৩ হাজার ১০০ জনেরও হয়েছে ৬০ ইউরো জরিমানা৷ এর পাশাপাশি প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্সে জমা হয়েছে একটি করে নেতিবাচক পয়েন্ট৷ এমন পয়েন্ট যত জমবে, ততই বিপদ৷ এক পর্যায়ে লাইসেন্সও কেড়ে নেয়া হয় অনেকের৷
এলিজাবেথ শুমাখার/জেডএইচ
জার্মানদের প্রিয় হবি কী জানেন?
অবসর সময়ে জার্মানরা কী করতে ভালোবাসে? বই পড়া, গাড়ি চালানো – না সেক্স? না, তাদের সম্পর্কে বাকি বিশ্বের ধারণা যাই থাক না কেন, বাস্তবে তাদের আগ্রহ কিন্তু অন্য দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শরীরের পরিচর্যা
২০১৬ সালে প্রায় ৩,০০০ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে চলতি বছরে তাদের প্রিয় শখের কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ সেই তালিকায় ১০ নম্বর স্থানে রয়েছে বেশ সময় নিয়ে নিজের শরীরের পরিচর্যা করা৷ বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত ও তরুণরা এ জন্য অনেক সময় ব্যয় করেন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
দেরি করে ওঠা
অ্যালার্ম বন্ধ, কোনো তাড়া নেই৷ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ লম্বা ঘুম দিয়ে দেরি করে উঠতে পছন্দ করেন৷ তাতে আখেরে ভালোই হয়, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ ঘুম কম হলে কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, চট করে মনে বিরক্তি আসে৷ রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রাও বিঘ্নিত হতে পারে৷
ছবি: Colourbox
প্রিয় মানুষের জন্য সময়
কোনো দম্পতি ও পরিবারের কাছে সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানো অত্যন্ত জরুরি৷ কিন্তু সঙ্গী না থাকলে তার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রশ্ন ওঠার কথা নয়৷ তা সত্ত্বেও সঙ্গী নেই, এমন ৩১ শতাংশ মানুষও সমীক্ষায় একই উত্তর দিয়েছেন৷ তবে সেটা কী ভাবে সম্ভব, তা বলা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
কোন বিষয় জরুরি?
পছন্দের ফুটবল ক্লাব কি লিগ জিতবে? ইউরোপে শরণার্থীদের সঙ্গে কী করা উচিত? ইউটিউবের কোন তারকা আজকাল বেশি নজর কাড়ছে? এই সব ‘জরুরি’ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসে জার্মানির মানুষ৷ বিশেষ করে দম্পতি ও পরিবারগুলির মধ্যে এই প্রবণতা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
তরুণ জার্মানরা পড়েন কম
সমীক্ষা অনুযায়ী তিন-চতুর্থাংশ মানুষ কমপক্ষে সপ্তাহে একবার সংবাদপত্র অথবা পত্রিকা পড়েন৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়ার মতো৷ তরুণদের মধ্যে অর্ধেকও পড়তে চান না৷ অন্যদিকে ৬৫ বছর বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়মিত পড়েন৷
ছবি: imago/Ralph Peters
স্বপ্নের জগতে বিচরণ
চোখ বন্ধ করে কল্পনার রাশ ছেড়ে দেবার মতো আনন্দ আর কীসে পাওয়া যায়! প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই এমনটা করতে পছন্দ করেন৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও অবসরপ্রাপ্তদের প্রিয় কাজ এটি৷ তবে একা মানুষ ও ছোট শিশুসহ পরিবার স্বপ্নের জগতে নিজেদের ভাসিয়ে দিতে তেমন আগ্রহী নয়৷
ছবি: Monkey Business - Fotolia.com
ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অচল
প্রায় সব কিশোর ও তরুণ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে৷ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যয় এড়িয়ে বাড়িতে সার্ফ করার অনেক সুবিধা আছে৷ পাঁচ বছর আগের তুলনায় জার্মানির মানুষ অনেক বেশি ইন্টারনেট সার্ফ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Felber
টেলিফোন বাজছে!
জার্মানির শহরগুলিতে এই দৃশ্য মোটেই বিরল নয়৷ মানুষ হাঁটছে, কানে মোবাইল৷ প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই কমপক্ষে সপ্তাহে একবার পথেই টেলিফোনে কথা বলেন৷ নিজের বাড়িতে বসেও টেলিফোনে কথা বলতে ভালোবাসে অনেকে৷ এক-তৃতীয়াংশ মানুষই প্রতিদিন একবার করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷
ছবি: Imago/Westend61
রেডিও এখনো মরেনি
বার বার মৃত্যুর ঘোষণা সত্ত্বেও জার্মানদের হাতে রেডিও কিন্তু বহাল তবিয়তেই আছে৷ সমীক্ষায় ৯০ শতাংশ বলেছেন, সপ্তাহে কমপক্ষে একবার তারা রেডিও শোনেন৷ গান হোক বা খবর, জার্মানির অর্ধেক মানুষ প্রতিদিন রেডিও শোনেন৷
ছবি: picture-alliance/Klaus Ohlenschläger
টেলিভিশন বড় প্রিয়
জার্মানির মানুষ টিভি দেখতে বড় ভালোবাসেন৷ সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসেন৷ সব বয়সের সব মানুষের কাছেই অবসর সময়ে টিভি দেখা সবচেয়ে প্রিয় কাজ৷ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন টিভি দেখেন৷