রবিবার আইএসমুক্ত মোসুল শহরে পা রাখলেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী৷ তবে ইরাক থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি৷ ইরাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় ৯ মাসের সংগ্রামের পর ইরাকি বাহিনী মোসুল শহরকে আইএসমুক্ত করতে পেরেছে বলে তাদের অভিনন্দন জানালেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি৷ তিনি পায়ে হেঁটে শহরের কিছু অংশ পরিদর্শন করেন৷ টেলিভিশনে তাঁর সঙ্গে কিছু স্থানীয় বাসিন্দাকেও দেখা গেছে৷
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শহরকে পুরোপুরি মুক্ত ঘোষণা করেননি৷ রবিবার শহরের পুরানো অংশে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে৷ তাঁর মুখপাত্র স্বীকার করেছেন যে, শহরে এখনো কিছু আইএস জঙ্গি রয়ে গেছে৷ তাদের না সরিয়ে চূড়ান্ত জয়ের ঘোষণা করা হবে না৷
শহরটি প্রায় ৩ বছর ধরে আইএস-এর কবজায় ছিল৷ সেখানেই আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি খিলাফত ঘোষণা করেছিলেন৷ তবে এখনো ইরাকের কিছু বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আইএস-এর৷ মোসুল শহর ধরে রাখতে তারা মরিয়া হয়ে নিরীহ মানুষের মাঝে নারী আত্মঘাতী হামলাকারী পাঠাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন ইরাকি বাহিনীর এক মুখপাত্র৷
মোসুল শহরের প্রায় সর্বত্র ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে৷ কিছু এলাকা প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে৷ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে৷ শহরের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইরাকের সরকারের হাতে চলে গেলেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের মতে, শহরের মৌলিক অবকাঠামোর পুনর্গঠনের জন্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি প্রয়োজন পড়বে৷
মোসুল শহরের মুক্তির পেছনে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন বাহিনীরও অবদান রয়েছে৷ আকাশপথে তারা ইরাকি বাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ তাই এই শহরের মুক্তির জন্য ফ্রান্সসহ সব দেশের বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ও সে দেশের সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তাদের এই সাফল্যে সন্তুষ্ট৷ কয়েক বছর আগেও ইরাকি বাহিনীর দুর্বলতা ও মনোবলের অভাব নিয়ে তুমুল সমালোচনা শোনা যেত৷ মসুল শহর উদ্ধারে তাদের অভিযান অনেক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে৷
দাড়ি-গোঁফ কেটে পালাচ্ছে আইএস
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর দখল থেকে মসুল মুক্ত হয়েছে আগেই৷ এখন চলছে তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার অভিযান৷ তবে এখন দাড়ি-গোঁফ কেটে মানুষের সাথে মিশে পালাচ্ছে তারা৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও পড়তে হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর সন্দেহে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
মোসুল ঘেরাও
প্রতিদিনই মুক্ত হচ্ছে মোসুলের নতুন নতুন এলাকা৷ মুক্ত হচ্ছেন শহরটিতে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাধারণ ইরাকিরাও৷ কমান্ডাররা বলছেন, এখন হাতে গোনা দু-তিনশ’ আইএস জঙ্গি বিভিন্ন গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিয়ে আছে৷ তারা যাতে পার্শ্ববর্তী সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য শহর ঘেরাও করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
জঙ্গি খুঁজতে ড্রোন
আগের মতো আইএসে প্রকাশ্য কোনো আস্তানা মসুলে আর নেই৷ আজ এ বাড়িতে তো কাল ঐ ভবনে, এমন করেই যুদ্ধ চালাচ্ছে অবশিষ্ট জঙ্গিরা৷ ফলে নির্দিষ্ট করে হামলা চালানো বেশ কষ্টকরই হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর জন্য৷ এই কাজ সহজ করতে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ ড্রোন ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের অবস্থান৷ তারপর আক্রমণ৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
কারা জঙ্গি?
চারপাশ থেকে ঘেরাও হওয়ায় প্রাণে বাঁচতে আইএস জঙ্গিরাও আশ্রয় নিচ্ছে নতুন কৌশলের৷ ইসলামি কায়দা অনুযায়ী দাড়ি-গোঁফ রাখলেও, এখন সবাই ‘ক্লিন শেভড’৷ যতক্ষণ পারছে যুদ্ধ, হেরে যাওয়ার শঙ্কা দেখলে পোশাক পালটে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/A. Saad
নতুন বিপদ আত্মঘাতি নারী
অগ্রসর হতে থাকা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে আরেক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে আইএস জঙ্গিরা৷ নারী জঙ্গিরা বোমা বেঁধে সাধারণ নারীদের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ চেষ্টা চালাচ্ছে ইরাকি বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে হামলা চালানোর৷ গেল এক সপ্তাহে এমন বেশকটি হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সাধারণের বিপদ
দীর্ঘদিন আইএসের নির্যাতনে জরাজীর্ণ অবস্থা, তা থেকে মুক্তির পরও কমছে না সাধারণ মানুষের ঝামেলা৷ সেই কারণটাও আইএস৷ লুকিয়ে থাকা জঙ্গি খুঁজতে গিয়ে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে ইরাকি বাহিনী৷ না থেমে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে তাদের৷ একাধিকবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয়৷ মাঝে মধ্যেই করা হচ্ছে শরীর তল্লাশি৷ রেহাই পাচ্ছেন না শিশু-বুড়োরাও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
শিশুদের জন্য সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ৷ জরুরি ওষুধ তো দূরের কথা, একেবারেই সাধারণ ঠান্ডার ওষুধও মসুলবাসীর কাছে ছিলো আকাশের চাঁদ৷ তবে দ্রুতই পালটাচ্ছে এই অবস্থা৷ মুক্ত অঞ্চল এবং জঙ্গি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা পাচ্ছে বিভিন্ন রোগের টিকা৷ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা থেকে মিলছে জরুরি ত্রাণও৷