মহানবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে শিশু যৌন নিপীড়নকারী আখ্যায়িত করা বাক স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না বলে অভিমত দিয়েছে ইউরোপিয়ান কোর্ট ফর হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর)৷
বিজ্ঞাপন
হযরত মোহাম্মদকে শিশু নিপীড়নকারী বলায় এক অস্ট্রিয়ান নারীকে সে দেশের আদালতের সাজা প্রদানে তার বাক স্বাধীনতারলঙ্ঘন হয়নি বলে বৃহস্পতিবার আদেশে বলেছে এই আদালত৷
স্ট্রাসবুর্গভিত্তিক ইসিএইচআর বলেছে, ওই নারীকে দণ্ড প্রদানকারী অস্ট্রিয়ার আদালত খুব সাবধানতার সঙ্গে তার ‘‘বাক স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতির সুরক্ষার অধিকারের সমন্বয় করেছে এবং অস্ট্রিয়ায় ধর্মীয় শান্তি বজায় রাখার কাঙ্খিত লক্ষ্যের জন্য কাজ করেছে৷’’
ওই নারী ২০০৯ সালে ‘ইসলামের মৌলিক তথ্য’ শিরোনামে দুটি সেমিনারের আয়োজন করেন, সেখানে মোহাম্মদের ছয় বছরের শিশু আয়েশাকে বিয়ে করার বিষয়টি শিশু যৌন নিপীড়নের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷
বাক স্বাধীনতার সীমা
হযরত মোহাম্মদের বয়স যখন ৫০-এর কাছাকাছি সে সময় ইসলামিক রীতি অনুসারে নয় বছরের আয়েশাকে বিয়ে করেন তিনি৷ হযরত মোহাম্মদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রথম খলিফা আবু বকরের মেয়ে ছিলেন আয়েশা৷
সেমিনারে অস্ট্রিয়ার ওই নারী বলেছিলেন যে, মোহাম্মদ ‘শিশুদের সঙ্গে এটা করতে পছন্দ করতেন’ এবং ‘...একজন ৫৬ বছরের মানুষ আর ছয় বছরের একজন?...আমরা একে কী বলতে পারি যদি তা শিশু যৌন নিপীড়ন না হয়?’’
এই বক্তব্যের জন্য ওই নারীকে ধর্ম অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৪৮০ ইউরো জরিমানা করে অস্ট্রিয়ার একটি আদালত৷ পরে দেশের অন্যান্য আদালতে গিয়ে ওই রায় পরিবর্তনে বিফল হন৷ পরে তিনি ইউরোপিয়ান কোর্ট ফর হিউম্যান রাইটসে যান৷
বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ওই বক্তব্য তার বাক স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে এবং ধর্মীয় গ্রুপগুলোর সমালোচনা মেনে নেওয়া উচিত৷
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে হেয় করা নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের মধ্য দিয়ে শিশুদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশে ওই কথা বলেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি৷
চেজ ভিন্টার/এএইচ
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
আপনার দেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি কেমন? ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেছিলেন সদ্য সমাপ্ত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে আগত বিভিন্ন দেশের ব্লগার, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
শাম্মী হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ
‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেন না৷ সেখানে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ একজন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার হিসেবে আমি ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি, যা ইসলামিস্টরা পছন্দ করেনা৷ তারা ইতোমধ্যে ছয় ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ ফলে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভেনেজুয়েলা
‘‘বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক ধারণা যার অস্তিত্ব আমার দেশে নেই৷ সাংবাদিকরা জরিমানা আর নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সমালোচনা করতে চায়না৷ সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন৷ দেশটির আশি শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক সরকার, তাই সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রোমান দবরোখটভ এবং একাতেরিনা কুজনেটসোভা, সাংবাদিক, রাশিয়া
রোমান: ‘‘রাশিয়ায় সরকার আপনাকে সেন্সর করবে৷ আমাদের ওয়েবসাইটটি ছোট এবং লাটভিয়ায় নিবন্ধিত৷ ফলে আমি সেন্সরশিপ এড়াতে পারছি৷ তা সত্ত্বেও সরকার মাঝে মাঝে আমাদের সার্ভারে হামলা চালায়৷’’ একাতেরিনা: ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ইউরোপের মানুষ রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীন৷ আমি আশা করছি, রাশিয়ার পরিস্থিতিও বদলে যাবে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিরিয়া
‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এমনকি আসাদের শাসনামল সম্পর্কে অনুমতি ছাড়া মতামতও প্রকাশ করা যায়না৷ এটা নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে খুন হতে পারে৷ আমি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক কিছু লিখি, তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবো না৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
আয়েশা হাসান, সাংবাদিক, পাকিস্তান
‘‘পাকিস্তানে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শব্দ দু’টি খুবই বিপজ্জনক৷ এগুলোর ব্যবহার আপনার ক্যারিয়ার বা জীবন শেষ করে দিতে পারে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রাবা বেন দউখান, রেডিও সাংবাদিক, টিউনিশিয়া
‘‘আমাদের অভ্যুত্থানের একমাত্র ফল হচ্ছে বাকস্বাধীনতা৷ আমরা এখন আমাদের সরকারের সমালোচনা করার ব্যাপারে স্বাধীন৷ এবং আমি যখন আমাদের অঞ্চলের অন্য দেশের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করি, তখন একটা বড় ব্যবধান দেখতে পাই৷ আমাদের দেশে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা আছে সত্যি, তবে বাকস্বাধীনতা কোনো সমস্যা নয়৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
খুসাল আসেফি, রেডিও ম্যানেজার, আফগানিস্তান
‘‘বাকস্বাধীনতা আফগানিস্তানে একটি ‘সফট গান৷’ এটা হচ্ছে মানুষের মতামত, যা সম্পর্কে সরকার ভীত৷ এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
সেলিম সেলিম, সাংবাদিক, ফিলিস্তিন
‘‘ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের খুব বেশি স্বাধীনতা নেই৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে না৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে৷ তারা যদি ফেসবুকে তাদের মতামত জানায়, তাহলেও সরকার গ্রেপ্তার করে৷ তবে সিরিয়া বা ইরাকের চেয়ে অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
অনন্য আজাদ, লেখক, বাংলাদেশ
‘‘আমাদের দেশে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই৷ আপনি ইসলাম বা সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না৷ ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যদি ইসলামের সমালোচনা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে৷ আমি একজন সাংবাদিক এবং গত বছর আমাকে ইসলামিস্ট জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ ফলে আমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে৷’’