আবারও আলোচনায় ছাত্রলীগ। গত কয়েক বছর ধরে নেতিবাচক কাজে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে ছাত্রলীগের নাম।
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বিরোধে মারামারি আর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার অডিও ফাঁসের পর চরম বিতর্কের মুখে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটি। কেন ছাত্রলীগ বারবার বিতর্কের মুখে? গলদটা কোথায়? নেতাকর্মীরা বলছেন, কেন্দ্রেই গলদ। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কোন ইউনিটকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ব্যর্থ হয়েছেন।
রোববার রাতে নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। তাদের বিরুদ্ধে কমিটির বড় একটা অংশ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষ করে সিট বাণিজ্য ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের আয়ের উৎস। হঠাৎ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর রিভা আর রাজিয়া সিট বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। এতদিন এই বাণিজ্যে যারা করেছেন তারাও সহজে নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে চাননি। সেই থেকে সংকটের সূত্রপাত। ফলে নতুন কমিটি হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই নেতাকর্মীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে হামলার শিকার হয়ে পুলিশ পাহাড়ায় কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে রিভা আর রাজিয়াকে।
‘ইডেনে দুই মাস আগে কমিটি দেওয়া হয়েছে’
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে। বহিস্কার করেছে ১৬ জন নেতাকর্মীকে। বহিস্কৃতদের একজন সহ-সভাপতি সোনালী আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তো মিডিয়াতেই এসেছে। অথচ কেন্দ্র থেকে তাদের বহিস্কার না করে আমাদেরই বহিষ্কার করা হল। আমরা আজ আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়েছিলাম অনশন করতে। কিন্তু বড় ভাইয়েরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাই আমরা ফিরে এসেছি।”
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অনেকদিন ধরেই মিডিয়া এড়িয়ে চলছেন। সোমবার ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে সহ-সভাপতি সোহান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এতদিন ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ছিল সম্মেলন করেই সবার উপস্থিতিতে কমিটি ঘোষণা করা। অথচ ইডেনে চার বছর আগে সম্মেলন হয়েছে। এখন দুই মাস আগে কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটি ঘোষণার দিনই সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সেখানের সংকট সমাধানের কোন চেষ্টাই করেননি। কমিটির সবাইকে পাশ কাটিয়ে দুই নেতাই নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি করছেন। অন্য নেতাদের কোনভাবেই মূল্যায়ন করেন না। ফলে বিভিন্ন ইউনিটে সংকট লেগেই আছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুরো ব্যর্থ হয়েছেন।”
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি প্রায় এক যুগ ধরে অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা ৩৫ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছিল। এতে নয়টির মতো পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা গত মাসে একটি অনলাইনে মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, "পরিষ্কার বোঝা যায় ছাত্রলীগের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা আর শৃঙ্খলা অনেক আলগা হয়ে গেছে। ‘পদ পেতেই হবে' বা ‘পদ ছাড়া যাবে না'- এই মনোভাব রাজনীতি নয়, ক্ষমতার মোহ। দল যেহেতু এখন ক্ষমতায় তাই পদ চাই যেকোনো মূল্যে।”
ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক নৃশংসতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক নৃশংস ঘটনার জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ৷ বিশ্বজিৎ থেকে আবরার পর্যন্ত তাদের নির্যাতনে মারা গেছে বেশ কয়েকজন৷ কেউ হারিয়েছেন দৃষ্টি, কারো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে শরীরের হাড়৷ বিচার হয়নি অনেক ঘটনারই৷
ছবি: bdnews24.com
দখলবাজির শিকার আবু বকর
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর৷ ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী শক্ত ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে আবু বকরের মাথা থেঁতলে দেয়া হয়৷ এই হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়৷ ২০১৭ সালে আদালতের রায়ে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত ১০ নেতা-কর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পায়৷ (ছবি: সাম্প্রতিক)
ছবি: bdnews24.com
খাবার নিয়ে বিরোধে হত্যা
২০১০ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ইফতারের টোকেন সংঘর্ষ বাধে রাজশাহী ছাত্রলীগের মধ্যে৷ তার জের ধরে দলটির কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে পিটিয়ে শাহ মখদুম হলের দ্বিতীয় তলা থেকে ফেলে দেয়া হয়৷ ১০ দিন হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়৷ এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ১০ জন, যাদের সবাই এখন জামিনে৷
ছবি: DW/A. Khanom
জুবায়েরকে কুপিয়ে হত্যা
২০১২ সালে জানুয়ারিতে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের৷ তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তারই সংগঠনের প্রতিপক্ষরা৷ এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ গত বছরের জানুয়ারিতে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন বহাল রাখে হাইকোর্ট৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চারজনই পলাতক৷
ছবি: bdnews24.com
দুর্ভাগা বিশ্বজিৎ
বিশ্বজিৎ দাস ছিলেন পুরান ঢাকার একজন দর্জি৷ ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নৃশংস হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়৷ সেসময় ১৮ দলের অবরোধ চলছিল৷ বিশ্বজিৎ শিবির কর্মী এমন ধারণা করে তাঁকে চাপাতি, কিরিচ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কোপায় ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ আলোচিত এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে আট আসামির মৃত্যুদণ্ড হলেও চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন, দুইজনকে খালাস আর পলাতক দুইজনের রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট৷
ছবি: bdnews24.com
বাদ যায়নি শিশুও
২০১৩ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় মারা যায় ১২ বছরের শিশু রাব্বি৷
ছবি: bdnews24.com
আধিপত্য বিস্তারের বলি তাপস
২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার৷ ২০১৬ সালে এই ঘটনায় ২৯ নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ৷ মূল আসামী আশরাফুজ্জামানসহ গ্রেপ্তারকৃত ১৫ জনই জামিনে পান৷ (ছবি: প্রতীকী)
ছবি: Fotolia/Scanrail
খাদিজার মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবরের ঘটনা৷ এমসি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পরই খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)-র ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম৷ নার্গিসকে মৃত ভেবে পালিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীরা বদরুলকে আটক কোরে পুলিশে দেয়৷ আলোচিত এই ঘটনায় বদরুলের যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছে আদালত৷
ছবি: bdnews24.com
হেলমেট বাহিনীর হামলা
গত বছর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র কিছু যুবক ধানমন্ডি, জিগাতলা এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে৷ হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে পরিচয় সহ খবর বের হয়৷ কিন্তু এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, কারও বিচারও হয়নি৷
ছবি: Bdnews24.com
হাতুড়ি মামুনদের বিচার হয়নি
দেশব্যাপী কোটা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ ওঠে৷ তেমনই একটি ঘটনা ঘটে গত বছরের ২ জুলাই৷ তরিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় পেটায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী৷ তাকে হাতুড়ি পেটা করে দলটির সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷
ছবি: bdnews24.com
চোখ হারানো এহসান
গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলে এহসান নামের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷ নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাইলে এই হামলা চালায় তারা৷ এসময় তাকে শিবির কর্মী বলেও অপবাদ দেয়া হয়৷ হামলায় এহসানের চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়৷ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৭ নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার হলেও তারা হলে থাকতেন বলে খবর বের হয়৷ অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়ে এহসান৷
ছবি: bdnews24.com
আহ্ আবরার!
সবশেষ ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের নৃশংসতার শিকার হল বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ রাত ২টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে৷ আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন, যার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১০ জন ৷
ছবি: bdnews24
১০ বছরে ২৪ হত্যা
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত ১০ বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ যার প্রায় সবগুলোর সাথেই ছাত্রলীগ জড়িত রয়েছে৷ এর মধ্যে ১৭ টিই ঘটেছে নিজেদের অন্তর্কোন্দলে৷ সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ গত ১০ বছরে সেখানে ৮ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: bdnews24
ইচ্ছে হলেই মারধর, হামলা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচীতে ইচ্ছে হলেই হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ কোটা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন সময় মারধর করেছে সংগঠনটির নেতা কর্মীরা৷ গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনেও ছাত্রলীগের হামলা এবং ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে৷ একাধিকবার তাদের হামলার শিকার হয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর৷
ছবি: bdnews24.com
13 ছবি1 | 13
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা ধরনের অপকর্মের অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে সভাপতি পদের লোভ দেখিয়ে এক নেত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। সেই অডিও ভাইরাল হয়। কেন্দ্র থেকে এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি তদন্ত করতে রাজশাহী গিয়ে অভিযুক্তদের টাকায় ‘প্রমোদ ভ্রমণ' করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনাও শুরু হয়।
তদন্ত করতে রাজশাহী গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারেই অসত্য। আমি নিজে হোটেলের বিল দিয়েছি। আমরা নির্মোহভাবে তদন্ত করেছি। শিগগিরই কেন্দ্র থেকে আমাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।”
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে কেন্দ্র থেকে রাজশাহীর দুই নেতাকে অব্যহতি দেওয়া হতে পারে। সাকিবুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে সংগঠনের ক্ষমতা ব্যবহার করে নারীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও মাদক সেবনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। এরপরই কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন এই দুই নেতা।
ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম. মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ছাত্রদের সঙ্গে এখন ছাত্র নেতাদের এক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে এই সব সংকট তৈরী হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে। প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনেই এখন ছাত্রদের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। আগে সম্মেলনে নেতা ঠিক করা হতো। এখন প্রেসরিলিজে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সঠিক সময়ে সম্মেলন করা গেলে বিচ্ছিন্ন যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো আর হবে না।”