বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ না করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, এমন পরিবর্তন বাল্যবিবাহের হার আরো বাড়িয়ে দিতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
১৯২৯ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বেআইনি৷ বিয়ের স্বাভাবিক বয়সও নির্ধারণ করা আছে৷ বাংলাদেশে কোনো পুরুষের বয়স ২১ এবং কোনো মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার আগে বিয়ে করলে সেই বিয়ে বাল্যবিবাহ এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভাষণে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ করার সম্ভাবনার কথা বললে মানবাধিকার সংস্থাগুলো শঙ্কিত হয়ে পড়ে৷ মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স না কমানোর দাবি উঠছে তখন থেকেই৷
দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্য বিবাহের হিড়িক
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ না করার আবেদন জানিয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্য বিবাহের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি, এবং সেই তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স
গত ৯ই জুন প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এইচআরডাব্লিউ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি বাল্য বিবাহের এই নতুন ‘মহামারীর’ মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার বিরোধী৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
পনেরো বছর হবার আগেই
বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ মেয়ের ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়, বলছে ‘বাড়ি বন্যার জলে ভেসে যাওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেলো’, এই শীর্ষকের একটি রিপোর্ট৷ এইচআরডাব্লিউ সংগঠনের রিপোর্টটি বাংলাদেশে শত শত বালিকা বধূর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে৷ বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ, কিন্তু কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে সহজেই ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট বার করে নেওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
একটি কারণ: দারিদ্র্য
ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাংলাদেশের বহু মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ ফলে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বেড়েছে, কেননা দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ পরিবারে কন্যাসন্তান একটি দায় বা বোঝা৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর প্রতিশ্রুতি দেন যে, ১৫ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হবে৷ কিন্তু সরকার সে প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য বিশেষ কিছু করেননি, বলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
দাম্পত্য জীবনে মারধোর ও ধর্ষণ
বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা গেছে, মেয়েদের পড়াশুনা করতে না দিলে তারা দারিদ্র্যের শৃঙ্খলেই আবদ্ধ থাকে, পরনির্ভর হয়ে থাকে, এমনকি তাদের স্বাস্থ্যেরও হানি ঘটতে পারে৷ বালিকা বধূদের জন্য আরো রয়েছে পতির হাতে মারধোর, এমনকি ধর্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/M. Asad
গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা
সমস্যাটা যে শুধু বাংলাদেশের, এমন নয়৷ জোর করে কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রথা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে পাওয়া যাবে – খানিকটা সেখানকার বিভিন্ন দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতির কারণে৷ জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী দশ বছরে ১৪ কোটির বেশি মেয়ের ১৮ বছর হবার আগেই বিয়ে হয়ে যাবে৷ তাদের অর্ধেকই হবে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়ে৷
ছবি: DW/P.M.Tewari
সংস্কার বনাম সরকার
ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল কিংবা শ্রীলঙ্কায় বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ, কিন্তু তা সত্ত্বেও সামাজিক প্রথাটি ভালোভাবেই বেঁচে রয়েছে৷ জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়: ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি মহিলা, যাদের বয়স ২০ থেকে ২৪-এর মধ্যে, তাদের সকলেরই কিন্তু বিয়ে হয়েছিল ১৮বছর বয়স হবার আগে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Hatvalne
মনোভাব বদলাতে হবে
ইউনিসেফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক উপ-পরিচালক স্টিফেন অ্যাডকিনসন ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, বাল্য বিবাহ, আঁতুড়ে মায়ের মৃত্যু, মেয়ে হলে গর্ভপাত ইত্যাদি বিষয়ে মানুষজনের মনোভাব বদলানোর জন্য সর্বাগ্রে সংলাপ চালু করতে হবে, পৌঁছাতে হবে এই ‘মাইন্ডসেট’ বা কুসংস্কারের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা রাজনৈতিক মূলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ ‘ঘর ভেসে যাওয়ার আগে বিয়ে কর: বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ' শিরোনামের প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে এক হাজারেরও বেশি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে৷ শুধু বাল্যবিবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে৷ ১০ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ের সঙ্গেও কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থাকতেই যেখানে ১০ বছর বয়সেও বিয়ে দেয়া হয়, সেখানে ন্যূনতম বয়স ১৬ করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আশঙ্কা৷ এ কারণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে মেয়েদের বিয়ের বয়স না কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ইউনিসেফ-এর এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি৷ বাংলাদেশে শতকরা ২৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫-র কম বয়সে৷ শতকরা ১১ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১১ বছরেরও কম বয়সে!