জার্মানি থেকে আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়া এবং ইরাকে যাচ্ছে মেয়েরা৷ দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যাঁরা গেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকের বয়সই ২৫ বা তার কম৷ তাদের অভিনব পন্থায় আকৃষ্ট করছে আইএস সমর্থকরা৷
বিজ্ঞাপন
পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত জার্মানি থেকে মোট সাড়ে ছয়'শ পুরুষ ইসলামিক স্টেট বা আাইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়া বা ইরাকে গিয়েছেন৷ ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটির টানে মেয়ে অবশ্য সেই তুলনায় অনেক কম গিয়েছেন৷ এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জার্মানি থেকে একশ জনের মতো নারী সিরিয়া বা ইরাকে গিয়েছেন৷ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে দেশ ছাড়া মেয়েদের শতকরা ৪০ ভাগের বয়সই ২৫ বছর বা তারও কম৷ জার্মানির অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক কার্যালয়ের উগ্রবাদ বিশেষজ্ঞ ফ্লোরিয়ান আন্দ্রেস জানান, আইএস সমর্থকরা সুকৌশলে জার্মানিতে বসবাসরত মেয়েদের আকৃষ্ট করে৷ তারা মেয়েদের সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখায়৷ সুন্দর পারিবারিক জীবনের স্বপ্ন৷ জার্মানিতে পরিবারের বন্ধন বেশি শক্ত নয় বলে অনেকের মনে এক ধরণের হতাশা কাজ করে৷ আইএস সমর্থকরা তারই সুযোগ নেয়৷
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
ফ্লোরিয়ান আন্দ্রেস জানান, আইএস-এর হয়ে যারা লোক, বিশেষ করে নারী সংগ্রহের কাজ করছে, তারা সাধারণত ছোট কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠীর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ খুব বড় বা সুপরিচিত পরিসরে তারা খুব একটা যান না৷
একসময় সালাফিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন অনেক নারীই এখন আইএস-এর হয়ে কাজ করছে৷ তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সক্রিয়৷ তাদের সক্রিয়তার মূল উদ্দেশ্য আইএস-এর জন্য যোদ্ধা বা আইএন যোদ্ধাদের জন্য নারী সংগ্রহ করা৷
জার্মানি থেকে ইরাকে গিয়ে এক নারী নিয়মিত ব্লগ লিখছেন৷ ২০১৩ সালে জার্মানি ছাড়েন তিনি৷ ইরাকে থেকেই তিনি এখন ব্লগ লিখছেন ‘মুহাজিরা' নামে৷ মুহাজিরা শব্দের অর্থ অভিবাসী বা শরণার্থী৷ নিজের ব্লগে তিনি ইরাকে কেমন সময় কাটছে তা তো লিখে জানাচ্ছেনই, সেই সাথে অন্যদের প্রতি রাখছেন ইরাকে চলে যাওয়ার আহ্বান৷ যে কোনো বিষয়ে পরামর্শের প্রয়োজন হলে যে কেউ মুহাজিরার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ মুজাহিরাই তাদের বলে দেন কখন, কোথায়, কী করতে হবে৷ মুজাহিরা নারীদের সবসময় খোলাখুলিই বলেন, ‘‘আমি আইএস-এর হয়ে নারী সংগ্রহের চেষ্টা করি, কেননা, এখানে অনেক অবিবাহিত মুজাহিদিন আছে৷''