মেয়েরা যাতে সহবাস উপভোগ করতে না পারে, যাতে যৌনসুখ না পায়, আবার কখনও নারীর সতীত্ব রক্ষার নামে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ এ প্রথা বন্ধে বিশ্বব্যাপী একটি ‘ক্যাম্পেইন' শুরু করেছে জাতিসংঘ৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বৃহস্পতিবার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে এই ‘ক্যাম্পেইন' বা প্রচারের উদ্বোধন করেন৷ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই প্রজন্মেই এই ধারা বা রীতি বন্ধ করতে হবে এবং এই অভ্যাসের যেন এখানেই সমাপ্তি হয়৷ কেননা এর ফলে নারীদের জীবনে নরকের অশান্তি নেমে আসে৷
তিনি বলেন, ‘‘সতীত্বের প্রমাণ হিসেবে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ রোধ করতে পুরুষদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে এবং যাঁরা বন্ধ করবেন বা করতে সাহায্য করবেন, তাঁদের প্রশংসা করতে হবে৷''
সাধারণত ৪ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের ওপর ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন’ এফজিএম বা যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়ে থাকে৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়স আরো কম হতে পারে৷ বিয়ের আগে বা প্রথম সন্তান জন্মের ঠিক আগেও কখনো কখনো মেয়েদের ওপর এফজিএম প্রয়োগ করা হয়৷ বেশিরভাগ সময়ই চেতনানাশক ব্যবহার করা হয় না৷ নারীদের ভগাঙ্কুর বা যৌনাঙ্গের অনেকটাই কেটে ফেলা হয়, যার ফলে প্রচণ্ড ব্যথা এবং অনেক রক্তপাত হয়৷ অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশের সাড়ে ১২ কোটি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷ সেই প্রতিবেদনে এই রীতিকে নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানানো হয়েছে৷
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
7 ছবি1 | 7
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার এক নারী জানান, ‘‘এটা কোনো সংস্কৃতি নয়, এটা মানুষের অধিকার হরণ৷ এর ফলে নারীদের স্বপ্ন, আশা, জীবন – সব তছনছ হয়ে যায়৷'' আর এক নারী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘‘যেভাবে যৌনাঙ্গ কাটা হয়, তাতে ভয়াবহ ব্যথা লাগে৷ আমি চাই না আমার মতো অন্য মেয়েরা এত কষ্ট পাক৷'' কেবল নাইরোবি না, ইথিওপিয়া, সোমালিয়াতেও এই ‘ক্যাম্পেইন' নিয়ে সফর করবেন বান কি-মুন৷ বলা বাহুল্য, এ সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷
ইউনিসেফ-এর মতে, মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে তাদের শরীরে তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি নানান সমস্যা দেখা দেয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অমানবিক কাজটি করানো হয় অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা৷ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর উপায়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খর্ব করা হচ্ছে মানবাধিকার৷ লঙ্ঘিত হচ্ছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার৷ যে কোনো ধরনের এফজিএম করলেই শারীরের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং একবার তা হলে শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব৷ এর ফলে মেয়েটি বিভিন্ন ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে৷ আর শারীরিকভাবে যে ক্ষতি হয়, তা চূড়ান্ত রূপ নেয় গর্ভাবস্থায়৷