ধীরে হলেও মেয়েদের প্রতি উদার নীতি অবলম্বনের পথে হাঁটছে সৌদি আরব৷ বাক স্বাধীনতা ও নারী অধিকার প্রশ্নে সদা সমালোচিত দেশটি শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিতে চলেছে৷ সে দেশে এ বছরই চালু হতে চলেছে মেয়েদের শারীরিক শিক্ষা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সৌদি আরবের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ বিবৃতিতে জানানো হয়, শরিয়া আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের জন্য শারীরিক শিক্ষা চালু করা হবে৷ আরো জানানো হয়, শুরুতেই পুরোদমে চালু করা সম্ভব নয় বলে পর্যায়ক্রমে দেশের সব ছাত্রীকে শারীরিক শিক্ষার আওতায় নেয়া হবে৷ তবে ‘শারীরিক শিক্ষা' বিষয়টি পাঠক্রমের বাইরে ‘ঐচ্ছিক' হিসেবে থাকবে, নাকি বাধ্যতামূলক হবে – বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করা হয়নি৷
সৌদি আরবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক শিক্ষা চালুর প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৪ সালে৷ কিন্তু শুরা কাউন্সিলের অনুমোদন দেয়ার পরই ধর্মগুরুরা এই উদ্যোগকে ‘পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণ' বলে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন৷ ফলে তখন আর তা কার্যকর করা যায়নি৷
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশের পর কট্টর ইসলামপন্থিদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও নারীদের পক্ষ থেকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন৷
লিনা আল-মাঈনা সৌদি আরবে সুপরিচিত নাম৷ শুরা কাউন্সিলের সদস্য তিনি৷ এছাড়া দেশে প্রথম নারীদের ক্রীড়া সংগঠন (জেদ্দাহ ইউনাইটেড বাস্কেটবল ক্লাব)-এরও প্রতিষ্ঠাতা৷ মেয়েদের শারীরিক শিক্ষা প্রদান বিষয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে তিনি বলেন, ‘‘এ এক ঐতিহাসিক ঘোষণা৷ খেলাধুলার অপর নামই তো ক্ষমতায়ন৷''
সৌদি আরবে নারীদের এখনো গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই৷ বিদেশ ভ্রমণ বা পাসপোর্ট করানোর আগে পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক৷ সৌদি নারীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও দীর্ঘদিন অংশ গ্রহণ করেননি৷ ২০১২ সালে দেশের প্রথম নারী প্রতিযোগী হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নেন দু'জন ক্রীড়াবিদ৷ এরপর ২০১৬ সালের অলিম্পিকে চারজন নারীকে অলিম্পিকে অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়৷
সৌদি নারীদের পাঁচটি ‘নিষিদ্ধ’ কাজ
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়৷ সেখানে নারীদের অধিকার এখনো খুবই সীমিত৷ সৌদি নারীদের এমন কিছু কাজও করতে দেওয়া হয় না, যে’সবের ক্ষেত্রে আইন কোনো বাধা নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
গাড়ি চালানো মানা
নারী গাড়ি চালাতে পারবে না – এমন কোনো আইন নেই সৌদি আরবে৷ তবু সেখানে নারীরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ গোঁড়ামির কারণে সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, নারী গাড়ি চালানো শুরু করলে সমাজের সব বিধিনিষেধ অমান্য করবে৷ অনেক মুসলিম দেশের নারীও যখন বৈমানিক হচ্ছে সৌদি নারীরা তখন গাড়ি চালানোর সুযোগও পাচ্ছে না৷ ২০১১ সালে একটি নারী সংগঠন ‘উইমেন ড্রাইভিং’ নামের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল৷ সফল হতে পারেননি৷
ছবি: Jürgen Fälchle/Fotolia
একা চলাফেরা করা নিষেধ
সৌদি আরবের মেয়েরা একা কোথাও যেতে পারেন না৷ স্বামী, বাবা-মা, ভাই বা পরিবারের অন্য কোনো পুরুষ ঘরে না থাকলে মেয়েদের জন্য তখন পুরুষ দারোয়ান থাকে৷ অতি রক্ষনশীল সৌদি সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, নারীকে একা থাকতে দিলে সে পাপের পথে পা বাড়াবে৷ এ কারণে কেনাকাটার জন্য বাইরে গেলেও সৌদি নারীর সঙ্গে পরিবারের কোনো-না-কোনো পুরুষ সদস্য থাকে৷ ইদানীং অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
আধুনিক পোশাক এবং চড়া প্রসাধন নয়
সৌদি আরবে পর্দাপ্রথা খুব কঠিনভাবে মানা হয়৷ তাই সব নারীই বোরকা পরেন৷ সবার মুখ অবশ্য ঢাকা থাকেনা৷ তবে মুখ দেখা গেলেও নারীদের প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজেকে খুব আকর্ষণীয় করে তোলার সুযোগ খুবই সীমিত৷ আধুনিক পোষাক পরা যায় না, একটু বেশি প্রসাধনী ব্যবহার সৌদি আরবের নারীদের জন্য এখনো স্বপ্নের মতো৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
নারী সব জায়গায় আলাদা
রক্তের সম্পর্কের পুরুষ ছাড়া নারী অন্য পুরুষের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না৷ বেশির ভাগ ভবনে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ রয়েছে৷ দ্য টেলিগ্রাফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবে এখনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, পার্ক, সমুদ্র সৈকতের মতো জায়গাগুলোতেও নারী আর পুরুষের জন্য আলাদা স্থান রাখা আছে৷ অনুমতি ছাড়া নারী-পুরুষ একসঙ্গে চলাফেরা করলে নারীরই বেশি কঠোট শাস্তি হয়৷
ছবি: Fotolia/Minerva Studio
নারী খেলাধুলা করলেও অপবাদ
নারীর খেলাধুলা করার অধিকারও খুব সীমিত৷ আন্তর্জাতিক সব প্রতিযোগিতায় এতদিন সৌদি আরব শুধু পুরষ ক্রীড়াবিদই পাঠাতো৷ লন্ডন অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো নারী প্রতিযোগী পাঠিয়েছিল সৌদি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়৷ ধর্মীয় নেতারা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি৷ অনেক ধর্মীয় নেতার চোখেই অলিম্পিকে অংশ নেয়া নারীরা পতিতার মতো৷