বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য নারীদের দায়ী করা হয়৷ কেননা সন্তানটির জন্মদ্রাত্রী তিনি৷ কিন্তু আসলেই কি নারী ইচ্ছে করেই কাজটি করেন, নাকি বাধ্য হন করতে?
বিজ্ঞাপন
দু'টি ঘটনার কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হয়৷ একটি ঘটনা ২০০৭ সালের রাজধানীর অদূরে বালুর মাঠে এক নবজাতককে কে বা কারা ফেলে রেখে যায়৷ কাকগুলো শিশুর কোমল দেহ থেকে মাংস তুলে নেয়ার চেষ্টা করছিল আর তাকে রক্ষায় মরিয়া ছিল একটি কুকুর৷ এ দৃশ্য পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নজরে আসে স্থানীয় এক রিকশাওয়ালার৷ তিনি তৎক্ষণাত নবজাতকটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ খবর পড়ে সে ঘটনা নজরে আসে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর৷ বর্তমানে সেই শিশুটি তার কাছেই সযত্নে মানুষ হচ্ছে৷
দ্বিতীয় ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷ রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়ার পুরাতন বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল নবজাতকটিকে৷ কয়েকটি শিশু প্রথমে দেখতে পায় এই শিশুকে৷ কুকুরের মুখে ঝুলছিলো নবজাতকটি৷ খবর পেয়ে স্থানীয় লন্ড্রি দোকানদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম সেখানে পৌঁছান এবং কুকুর তাড়িয়ে নবজাতককে রক্ষা করেন৷ চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় পরিচয়হীন নবজাতক পেয়েছে নতুন জীবন৷ ফাইজা নামে শিশুটি এখন আছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আজিমপুরের ছোটমণি নিবাস কেন্দ্রে৷
গর্ভপাত৷ অনাকাঙ্খিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রুণ হত্যা৷ আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তারপরও গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আর কোনোদিন মা হতে পারছেন না৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
10 ছবি1 | 10
এই দু'টি ঘটনা থেকেই বোঝা যায় এই সন্তান দু'টি তার বাবা বা মায়ের কাঙ্ক্ষিত ছিলো না৷ আর যদি সেই মা হয়ে থাকেন অবিবাহিতা বা এই সন্তান তার কাঙ্ক্ষিত ছিল না, তাহলে এই সন্তানকে পৃথিবীতে আনার চেয়ে গর্ভপাতই কি ভালো ছিল না? যদি কেউ লক্ষ্য না করতো এই শিশুদের কুকুরের খাদ্য হতে হতো৷ তাদের ভাগ্য ভালো ছিলো যে তারা রক্ষা পেয়েছে৷ কিন্তু এমন কত খবরই জানা যায় না যেখানে এই শিশুরা প্রাণ হারায়৷
আপনার দৃষ্টিতে কোনটা সমর্থনযোগ্য-অপ্রত্যাশিত সন্তান, নাকি তার পৃথিবীতে না আসা? গর্ভপাতের জন্য কিন্তু কেবল নারীটিকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয় এ কেমন মা যে তার নিজের সন্তানকে ফেলে গেল! কিন্তু কি করবে সেই মেয়েটি? কী করার আছে তাঁর? এ সমাজ সব দায় তো মেয়েদের উপর চাপিয়েই খালাস৷ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করবে নারী, কেননা পুরুষের কনডোম ব্যবহার পছন্দ নয়৷ না এটা কেবল অশিক্ষিত পরিবারের পুরুষদের কথাই বলছি না৷ শিক্ষিত পরিবারের অনেক পুরুষও এটা পছন্দ করে না৷ ফলে এই দায় কেবল নারীদের উপর বর্তায়৷
ভাবুন তো বিয়ের আগে কোনো নারী যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, সমাজ কি তাকে গ্রহণ করবে? পুরুষ যেন ধোঁয়া তুলসী পাতা, সে তো তার সব আনন্দ নিয়ে তার কৌমার্যের খোলস গায়ে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে প্রেমিকটি মেয়েটিকে যদি সেই মুহূর্তে বিয়ে না করে বা ঐ সন্তানের দায়িত্ব না নেয় তাহলে মেয়েটির গর্ভপাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে কি?
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
গর্ভপাত বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ বিভিন্ন ধর্মেও গর্ভপাত সম্পর্কে মতামত দেয়া হয়েছে৷ ছবিঘরে শুধু ইসলাম ধর্মের কথা থাকছে৷
ছবি: Gent Shkullaku/AFP/Getty Images
কোরানে উল্লেখ নেই, তবে...
কোরান শরিফে স্পষ্টভাবে গর্ভপাতের বিষয়ে কিছু বলা নেই৷ তবে কিছু নির্দেশনা আছে যেগুলো গর্ভপাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে ইসলামি বিষয়ে পণ্ডিতরা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
ভ্রুণই জীবন
সূরা আল-মায়দাহের ৩০তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘যে বা যারা একটি আত্মার জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে, সে বা তারা যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে৷ যে বা যারা একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে বা তারা যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে৷’’ আর অধিকাংশ মুসলিম পণ্ডিত মনে করেন, গর্ভে থাকা ভ্রুণকেই ইসলাম জীবন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের জীবন রক্ষা
যদি মায়ের প্রাণ হুমকির মুখে থাকে তাহলে গর্ভপাত সমর্থন করে ইসলাম৷ মুসলিম আইন ‘দু’টি মন্দ জিনিসের মধ্যে যেটি কম মন্দ তাকে’ বেছে নেয়ার প্রতি সমর্থন জানায়৷ এক্ষেত্রে গর্ভপাতকেই ‘কম মন্দ’ মনে করা হয়৷ এর পক্ষে কয়েকটি যুক্তি হচ্ছে মা-ই ভ্রুণের ‘জন্মদাতা’, মায়ের জীবন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত, মায়ের অন্যান্য দায়িত্ব আছে, মা একটি পরিবারের অংশ এবং মাকে মরতে দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রুণও মরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Biba
দারিদ্র্যতার ভয়ে গর্ভপাত
কেউ যদি মনে করেন আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে না এবং সেই ভয়ে ভ্রুণকে মেরে ফেলেন, তাহলে সেটি মহাপাপ বলে বিবেচিত হবে৷ সুরা আর ইসরার ৩২ আয়াত বলছে, ‘‘তোমরা তোমাদের সন্তানকে দারিদ্রতার ভয়ে হত্যা করো না৷ আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি৷ তাই তাদের হত্যা করে সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ৷’’
ছবি: Fotolia/Mikael Damkier
ত্রুটি ধরা পড়লে
গর্ভধারণের চার মাসের মধ্যে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভ্রুণ ত্রুটি নিয়ে বাড়ছে এবং এর সমাধান সম্ভব নয়, এবং এই সমস্যা পরবর্তীতে শিশুর জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত সমর্থন করেন অনেক পণ্ডিত৷ এক্ষেত্রে অন্তত দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে৷ অবশ্য এক্ষেত্রেও গর্ভপাতের পক্ষে নন এমন পণ্ডিতও আছেন৷
ছবি: AP
চার মাস পর...
গর্ভধারণের সময় ১২০ দিন পেরিয়ে গেলে গর্ভপাত সমর্থন না করার পক্ষে মোটামুটি পণ্ডিতদের মধ্যে মিল রয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে যদি ভ্রুণের ত্রুটি মায়ের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয় তাহলে অন্য কথা৷
ছবি: Sven Bähren/Fotolia
মুসলিম দেশের জরিপে বাংলাদেশ শীর্ষে
২০১৩ সালে প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ শতাংশ মুসলিম নাগরিক নৈতিক বিবেচনায় গর্ভপাত সমর্থন করেন৷ অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন বাংলাদেশি মুসলমানের মধ্যে একজন গর্ভপাতের পক্ষে৷ ৩৭টি দেশের মসুলমানদের উপর পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশেই গর্ভপাতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাওয়া গেছে৷ আরও জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/ Md. M. Hasan
ভ্রুণ কি ব্যথা পায়?
২০০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রুণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে ব্যথা, এমনকি তার আশেপাশে কী ঘটছে, তা বোঝার মতো নার্ভাস সিস্টেম গড়ে ওঠে না৷ আরেক গবেষণা বলছে, ব্যথা পাওয়ার জন্য যে ‘নিউরো-অ্যানাটোমিকাল অ্যাপারেটাস’ প্রয়োজন তা গড়ে ওঠার কাজ গর্ভধারণের ২৬ সপ্তাহ আগে সম্পূর্ণ হয় না৷ অবশ্য এই বিষয়ে বিতর্ক এখনও থেমে নেই৷ দু’টি গবেষণা সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Fotolia/ ingenium-design.de
8 ছবি1 | 8
এছাড়া যদি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে৷ বোঝা যাচ্ছে এই সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে যাচ্ছে এবং স্ত্রী যদি অন্তঃসত্ত্বা হন৷ সেক্ষেত্রে তিনি কোন পথ বেছে নেবেন বলে আপনার ধারণা?
আমাদের সমাজ এখনো এত উদার হয়নি যে অবিবাহিত মাকে মেনে নেবে৷ তাহলে সমাজের কটাক্ষের শিকার কেন হতে চাইবে মেয়েরা, আপনারাই বলুন?
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা পর্যন্ত গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন ও সাজার কথা বলা হয়েছে৷ এরমধ্যে ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারী গর্ভপাত ঘটালে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিন বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি পেতে পারে৷
কিন্তু কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে যদি অন্তঃসত্ত্বা হন, সেক্ষেত্রেও কেন তার জন্য গর্ভপাত আইনত নিষিদ্ধ হবে? কেন সে অনিচ্ছাকৃত ঘটে যাওয়া ঘটনার মাশুল সারাজীবন বয়ে বেড়াবে?
সবশেষে পরিচিত এক মানুষের কথা দিয়ে শেষ করবো৷ সেই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সুন্দর পরিবার৷ কিন্তু স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন৷ সেসময় চিকিৎসকই পরামর্শ দেন গর্ভপাত করানোর৷ কেননা চিকিৎসকের আশঙ্কা ছিল এ অবস্থায় বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে৷ তাই স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ একটি শিশুর জীবন নষ্ট করার চেয়ে একটি ভ্রুণ হত্যা করা অনেক ক্ষেত্রে সমর্থনযোগ্য যদি না সেটা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে৷ যেমন ভারতের অনেক জায়গায় মেয়ে সন্তান যাতে না হয় সেজন্য কন্যা ভ্রুণ হত্যা করা হয়৷ অর্থাৎ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে লিঙ্গ নির্ধারণ করে মেয়ে হলে গর্ভপাত করা হয়৷ আমি একেবারেই এ ধরনের গর্ভপাতের পক্ষে নই৷ তবে নারীরা যেন তার শারীরিক এবং মানসিক সব সুবিধার কথা চিন্তা করে একটি সন্তানের জন্ম দেন আমি তার পক্ষে৷ কেননা এতে সন্তানটি সুন্দর ভাবে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের জন্য৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷