মেয়েদের মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে দিলে ধর্ষণ বাড়বে৷ কারণ, মন্দিরে গেলে তাদের ওপর নাকি শনি দেবের কুনজর পড়বে৷ হ্যাঁ, এমনটা দাবি করেই তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন হিন্দুদের ধর্মীয়গুরু শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ সরস্বতী৷
বিজ্ঞাপন
মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গনাপুর মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশের খবরে যারা উচ্ছ্বসিত, তাদের আনন্দে এবার জল ঢাললেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এক ধর্মীয় নেতা স্বরূপানন্দ শঙ্করাচার্য৷ তাঁর দাবি, শনির মন্দিরে প্রবেশের কারণে মহিলাদের প্রতি অপরাধ, ধর্ষণের সংখ্যা বাড়বে৷ হরিদ্বার সফররত এই নেতা সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন এ কথা৷
হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, মেয়েরা শনি দেবতার মন্দিরে ঢুকলে শনি বিগ্রহের বেদী থেকে এক অশুভ কম্পন ওঠে, যা সংসার ও সমাজের ক্ষতি ডেকে আনে৷ কারণ শাস্ত্র মতে শনি দেবতা অশুভ শক্তির প্রতীক, এমনটাই নাকি সংস্কার৷
তবে ধর্মীয় এই সংস্কার আদালতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে না৷ বরং মুম্বইয়ের হাইকোর্ট নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পক্ষে মত দিয়েছেন৷ এরপর মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গনাপুর মন্দিরের ভেতরে শনিবার মেয়েরা প্রবেশের সুযোগও পায়৷ অবসান ঘটে চার’শ বছরের নিষেধাজ্ঞার৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে৷
তাই শঙ্করাচার্য যাই বলুক না কেন, মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকারকে আমলে নিয়েছে আরো একটি মন্দির৷ সোমবার কোলাপুর মহালক্ষ্মী মন্দিরেও কয়েক নারীকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়৷ যদিও তার পর পরই মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায় যে, নারীদের প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধই থাকবে৷
ভারতের নারীবাদীরা অবশ্য থেমে নেই৷ বুধবার নাকি সেই মন্দিরে ঢোকার জন্য কোমর বেঁধেছেন প্রায় দু’শ নারী অ্যাক্টিভিস্ট, এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমে৷
মন্দিরে ঢুকলে মেয়েরা ধর্ষিত হবেন – এ কথা কি মানেন? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷