মেয়েরা কেবল রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর, কর্মক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও অনিরাপদ, প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ মিলছে৷ ব্ল্যাকমেইল আর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী নারীদের৷ তাই সচেতন হওয়াটা জরুরি৷
বিজ্ঞাপন
কিছুদিন আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘‘আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছি নাকি ওগুলো আমাদের ব্যবহার করছে?'' এই প্রশ্ন আমার মনে হয় কম-বেশি সবার মাথাতেই আজ ঘুরছে৷ কেবল যে পরিবার বা বন্ধু বান্ধবের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে তা তো নয়৷ অনেকেই সংবাদের জন্যও আজ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উপরই নির্ভর করছে৷ তাই কোন খবরটি সত্য, কোনটি মিথ্যা সে বিবেচনাবোধটাও হারিয়ে যাচ্ছে৷ ‘ভাইরাল' হলে মিথ্যা ঘটনাও হয়ে যাচ্ছে সত্যি৷ কিন্তু সত্য-মিথ্যা খুঁটিয়ে দেখার সময় কোথায়! কেননা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে বা হচ্ছে না, কারা লেখাটা লিখেছে সেটা না দেখে শিরোনাম আর ছবি দেখেই সবাই লাইক, শেয়ার মন্তব্য লেখা শুরু করে৷ অনেক সময় ব্যক্তি যাকে পছন্দ করেন বা যার অনুসারী তারা কোনো খবর দিলেই বা শেয়ার করলেই লাইক দেয়া বা শেয়ার করেন অনেকে, সেই সঙ্গে সেটা বিশ্বাসও করেন৷
সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ সম্প্রচারের ৮ ঘটনা
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আজকাল অনেক অপরাধী তাদের অপরাধের ভিডিও আপলোড করছে৷ এর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার সরাসরিও সম্প্রচারিত হচ্ছে৷
ছবি: imago/Schöning
‘ফেসবুক লাইভ’- এ নির্যাতন
নতুন বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণের উপর নির্যাতন চালায় চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণী৷ পুরো ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গ ঐ তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল৷ পেটানোর পাশাপাশি তার চুল কেটে দেয়া হয়৷ অপরাধ করার সময় নির্যাতনকারীরা ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিল৷ পুলিশ ঐ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ফেসবুক ভিডিওটি মুছে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chicago Police Department
টুইটারে ধর্ষণের ভিডিও
২০১৬ সালের মে মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোতে এক তরুণীকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ধর্ষণ করে৷ তরুণীটি তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে তাকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়৷ তারপর একে একে তার উপর হামলে পড়ে সবাই৷ অপরাধীদের কেউ কেউ টুইটারে ভিডিও আপলোড করেছিল৷ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশের টনক নড়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
লাইভ-এ আত্মহত্যা!
ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই ঘটনা সে পেরিস্কোপ অ্যাপের সাহায্য সরাসরি প্রচার করেছিল৷ ঘটনাটি ২০১৬ সালের মে মাসের৷
ছবি: periscope.tv
নির্যাতিতার সঙ্গে সেলফি
২০১৪ সালে দুই ইংলিশ তরুণী ৩৯ বছরের অ্যাঞ্জেলা রাইটসনের উপর প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায়৷ এই সময় আহতের সঙ্গে সেলফি তুলে ঐ দুই তরুণী সেই ছবি স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করেছিল৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যান রাইটসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
সেলফির কারণে ধরা পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ম্যাক্সওয়েল ম্যারিয়ন মর্টন নামের এক টিনএজার আরেক টিনএজারকে হত্যা করে তার সঙ্গে সেলফি তুলে স্ন্যাপচ্যাটে আপলোড করেছিল৷ সেই ছবির সূত্র ধরে মর্টনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বান্ধবীকে ধর্ষণ সরাসরি সম্প্রচার!
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে সম্প্রতি এই অভিযোগে নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে মারিনা লোনিনা (ছবি) নামের ঐ তরুণী তার বান্ধবীর সঙ্গে রেমন্ড গেটসের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল৷ সেখানে পান করার পর এক পর্যায়ে গেটস লোরিনার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে শুরু করলে পেরিস্কোপ অ্যাপের মাধ্যমে ঐ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন লোরিনা৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর লোরিনা বলেছিল, অপরাধের প্রমাণ রাখতে তিনি ভিডিও করেছিলেন!
ছবি: picture alliance/AP Photo/Franklin County Sheriff's Office
ধর্ষণ সম্প্রচারের আরেক ঘটনা
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেরিস্কোপে ‘লাইভ সেক্স’ শিরোনাম দিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়৷ ভিডিওটি যারা দেখেছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ‘বাজফিড’ জানিয়েছে, ভিডিওতে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটে তিন তরুণকে এক তরুণীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে৷ তবে এটি যে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ছিল, সেটি বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে বাজফিডকে জানান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Bonaventure
সরাসরি ‘আত্মহত্যা’
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে তার আত্মহত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেছে৷ কেটলিন নিকোল ডেভিস নামের তরুণীটি গত ৩০ ডিসেম্বর গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার সময় সে বলে, এক আত্মীয়ের কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সে আত্মহত্যা করছে৷
ছবি: Fotolia/DW
8 ছবি1 | 8
আর এই বিশ্বাসটাই মেয়েদের জন্য বড় একটা সমস্যা৷ আমাদের সমাজে এখনো বেশিরভাগ মানুষ মেয়েদের হেয় করতে পারলেই শান্তি পায়৷ আর সে সুযোগটা যদি আপনিই করে দেন তাহলেতো কথাই নেই৷ কীভাবে আপনি সে সুযোগ করে দিচ্ছেন? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর সাহায্যে৷ হ্যাঁ ঠিকই বলছি৷ মেয়েরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনিরাপত্তার শিকার৷
যেমন ফেসবুকে অনেক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু ঠিক কত মেয়ে সেই নিরাপত্তার ব্যাপারে জানে? অর্থাৎ আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো, একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোর কে বা কারা দেখতে পায় আপনি কি খেয়াল রাখেন? ফেসবুকে কিন্তু কে আপনার ছবি দেখতে পাবে, কারা আপনার সম্পর্কে জানতে পারবে এসব নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়৷ যারা আপনার বন্ধু তালিকায় নেই তারা আপনার প্রোফাইল কতটা দেখতে পারবে সেটাও আপনি ঠিক করে দিতে পারেন৷ যারা পুরো প্রোফাইল ‘পাবলিক' করে দেন, তাদের তথ্য যে কেউ দেখতে পারে৷ তাই সেসব তথ্যকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে ভুল তথ্য পরিবেশনও করতে পারে৷ আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হয় ছবি ও ভিডিও নিয়ে৷ যাদের প্রোফাইল পাবলিক, তাদের ছবি ও ভিডিও যে কেউ দেখতে ও ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারে৷ তাই এ সব ছবি দিয়ে একাধিক ক্লোন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তা দিয়ে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনাও প্রতিনিয়তই ঘটছে৷ যারা পাবলিক ফিগার, অর্থাৎ তারকা তাদের কথা ভিন্ন৷ কারণ তাদের নাটক, গান, সিনেমা প্রচারণার একটা বিষয় থেকে তারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন৷
কিন্তু অন্য মেয়েদের সাবধান না হয়ে উপায় নেই৷ ফটোশপের এই যুগে আপনার পোশাক পরা ছবিটা হয়ে যেতে পারে নগ্ন ছবি৷ আর সেটা ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র৷ তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবি দেয়ার আগে সতর্ক হোন৷ আপনার কোন ছবি কেবল পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা দেখতে পারবে সেটা ঠিক করে দিতে পারেন৷ অথবা যদি কেবল প্রেমিক বা স্বামীকে পাঠানোর জন্য কোনো ছবি তোলেন, দয়া করে তা সেভ করবেন না৷ ফোনে বা ল্যাপটপে যেখানেই সেভ করুন না কেন, সেটা মুছে ফেললেও কিন্তু কোথাও না কোথাও থেকে যায়৷ আর সেসব একান্ত ছবি বা ভিডিও যদি পাবলিক হয়ে যায় তাহলে তা কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সেটা বুঝতেই পারছেন৷ স্ন্যাপ চ্যাট, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটারে এখন তরুণ তরুণীদের অবাধ বিচরণ৷ তাই সাবধান হওয়াটা জরুরি৷ একটু সময় নিয়ে ভেবে-চিন্তে ছবি আপলোড করুন৷
ফেসবুকে জনপ্রিয় যাঁরা
বাস্তব জীবনে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো সেরা ফুটবলার কিনা – তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে৷ তবে ফেসবুকে তিনি অন্যতম সেরা৷ ভক্তের সংখ্যা দশ কোটির বেশি৷ ফেসবুক এবং টুইটারে জনপ্রিয় এরকম আরো কয়েক তারকাকে নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
সবার সেরা রোনাল্ডো
ফেসবুকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ হচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা এই পর্তুগিজ তারকার ফেসবুক ভক্তের সংখ্যা দশ কোটির বেশি৷ টুইটারে তাঁর অনুসারী তিন কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টুইটার মেসির বিষয় নয়
আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি গত বছর ফিফার বিশ্বসেরা খেতাবটি জিততে পারেননি৷ সেটা নিয়েছেন রোনাল্ডো৷ ফেসবুকেও মেসি তাঁর পেছনে রয়েছেন৷ ভক্তের সংখ্যা সাড়ে সাত কোটির মতো৷ তবে টুইটারে মেসির ভক্ত মাত্র ২০ লাখ৷
ছবি: Reuters
এগিয়ে যাচ্ছেন নেইমার
রোনাল্ডো বা মেসির পর্যায়ে না পৌঁছালেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন নেইমার৷ ২২ বছর বয়সি এই ব্রাজিলীয় ফুটবল তারকার ভক্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি৷ টুইটারে চতুর্থ জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ghement
অনলাইনে জনপ্রিয় কাকা
ফুটবল ক্যারিয়ারের ভালো সময়গুলো সম্ভবত ইতোমধ্যে পার করে ফেলেছেন কাকা (ছবিতে স্ত্রী ক্যারোলিনের সঙ্গে কাকা)৷ ৩২ বছর বয়সি এই তারকার টুইটার অনুসারীর সংখ্যা দুই কোটির বেশি৷ মাইক্রো ব্লগিং সাইটটিতে দ্বিতীয় জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ তিনি৷ আর ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রায় চার কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যতিক্রমী কিং জেমস
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়দের তালিকায় শুরুর দিকে অধিকাংশই ফুটবলার৷ ব্যতিক্রম শুধু এনবিএ সুপারস্টার লিব্রন৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা সোয়া দুই কোটির মতো, আর টুইটারে দেড় কোটির বেশি৷
ছবি: Getty Images
ও্যাজিলও কম যান না
প্রথমে খারাপ ছিল ফর্ম, এখন ইনজুরির কবলে৷ বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান দলের তারকা মেসুত ও্যজিল বর্তমানে সম্ভবত কঠিন সময় পার করছেন৷ তবে সময়টা তিনি দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন অনলাইন ভক্তদের সঙ্গে৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি, টুইটারে প্রায় ১ কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনলাইনে মন্থর বোল্ট
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম মানব ইউসেইন বোল্ট অনলাইন জগতে বেশ পিছিয়ে আছেন৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা মাত্র ১৬ মিলিয়ন! আর টুইটারে সাড়ে তিন মিলিয়নের মতো৷
ছবি: Getty Images
বেকহাম এখনো জনপ্রিয়
ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়ের বেশে এখন আর দেখা যাচ্ছে না ডেভিড বেকহামকে৷ তবে তাই বলে ইংল্যান্ড দলের সাবেক এই অধিনায়কের ফেসবুক জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি৷ ফেসবুকে পাঁচ কোটি ভক্ত রয়েছে তাঁর৷