1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জন্মের আগে লিঙ্গ পরিচয় গোপন রাখার উদ্যোগ

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মাতৃগর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় যাতে প্রকাশ না করা হয় সে ব্যাপারে একটি গাইডলাইন তৈরি করে হাইকোর্টে জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ হাইকোর্ট অনুমোদন দিলে বাংলাদেশে মাতৃগর্ভের শিশুর লৈঙ্গিক পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ হবে৷

শিশুর ছবি
মাতৃগর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ না করার ব্যাপারে একটি গাইডলাইন তৈরি করে হাইকোর্টে জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ছবি: Dominic Nahr/Save The Children

২০২০ সালে হাইকোর্টে এক আইনজীবীর করা রিটের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই গাইডলাইন তৈরি করেছে৷ ওই গাইডলাইন মানা হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে৷ যারা এর অন্যথা করবেন, তারা ‘প্রফেশনাল এথিকস' লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তির মুখোমুখি হবেন৷ গাইডলাইনে গর্ভের শিশুর পরিচয় প্রকাশ না করাকে প্রফেশনাল এথিকস হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল যে প্রফেশনাল এথিকসের কথা বলেছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ শুধুমাত্র চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়া আর কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা নন-মেডিকেল কারণে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না৷

গাইডলাইন উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছি: খুরশিদ

This browser does not support the audio element.

আদালতে জমা দেয়া গাইডলাইনে যা বলা হয়েছে,

১. কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ফার্টিলিটি সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ প্রকাশ করতে পারবে না৷
২. এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না৷
৩. সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও টেকনিশিয়ান কর্মীদেও গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে৷
৪. হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিকেল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণ রাখবে৷
৫. হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিকেল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে  লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন বার্তা প্রচার করবে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা আমাদের গাইডলাইন উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছি৷ আদালত আমাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ডাকবেন৷ আদালত যদি এই গাইডলাইন অনুমোদন করেন, তাহলে আমরা কার্যকর করবো৷ আমরা বাস্তবায়ন করবো৷ তখন আমরা আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারবো৷”


যেভাবে এই গাইডলাইন

সামাজিক কারণ ও ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে পারেন না: ইশরাত

This browser does not support the audio element.

নিজের সামনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় ব্যথিত হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান৷ কয়েক বছর আগে তিনি নিজে যখন অন্তসত্তা, তখন ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যান৷ সেখানেই তাকে আরেক অন্তসত্তা কান্না ভীষণ ব্যথিত করে৷ ইশরাত হাসান জানান," আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ওই নারী যখন জানতে পারেন তার গর্ভের সন্তান মেয়ে, তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন৷ আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার আরো দুইটি মেয়ে আছে৷ এবারো কন্যা সন্তান হলে তার বিপদ৷ এমনিতেই তিনি চাপের মুখে আছেন৷ এখন তাকে নির্যাতন করা হবে৷ বলছিলেন- এবার হয়তো বা আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে৷”

"গ্রামে আমার অরেকটি অভিজ্ঞতা হলো, এক নারীর কন্যা সন্তান হওয়ায় তার স্বামী হাসপাতালের বিলই দিতে আসেননি৷ আমি একজন নারী আইনজীবী হওয়ায় এরকম আরো অনেক নারী আমার কাছে তাদের এই ধরনের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা জানান৷ তারা যেহেতু নানা সামাজিক কারণ ও ভয়ে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারেন না, তাই তাদের হয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করি,” বলেন এই আইনজীবী৷

তার কথা,"গর্ভের সন্তানের আগেই পরিচয় জানা এবং তা মেয়ে হলে মায়ের ওপর  যে চাপ প্রয়োগ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে তাতে মা শিশু উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়েন৷ মাকে ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় ৷ এর অবসান হওয়া জরুরি৷ গর্ভেও সন্তানের পারিচয় প্রকাশ লিঙ্গ বৈষম্যের সৃষ্টি করে৷”

তিনি আরো জানান, "বাংলাদেশে গর্ভপাত দণ্ডনীয় অপরাধ৷ কিন্তু আইনে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি৷ এর সুযোগ নিয়ে গর্ভের সন্তান কন্যা নিশ্চিত হওয়ার পর গর্ভবতী মাকে গর্ভপাতে বাধ্য করার অভিযোগও আমি পেয়েছি৷”
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি রিট করেন এবং ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করে৷ এরপর রুলের ওপর শুনানি হয়৷ শুনানির ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ওই গাইডলাইন তৈরি করে৷ কমিটিতে চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ছিলেন৷ গাইডলাইনটি ২৯ জানুয়ারি আদালতে দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ওই নীতিমালার ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান৷ আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত বলেন, "আদালতে শুনানির পর এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে৷ এখন এটা আদালতের এখতিয়ার৷”


গাইড লাইনে আরো যা বলা হয়েছে

এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন: মইনুল

This browser does not support the audio element.

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার গাইডলাইনে বলছে, "বাংলাদেশে ছেলে সন্তানের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকায় গর্ভেই লিঙ্গ চিহ্নিত হলে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট হয়৷ এর ফলে নারী নির্যাতন বেড়ে যায়৷ গর্ভবতী মা ও গর্ভের কন্যা সন্তান অনাদর ও অবহেলার শিকার হয়৷”
"বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতসহ আরো অনেক দেশে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ৷ এটা নির্ধারণ বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকার বিরোধী৷”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, "গর্ভেই  শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে প্রেফারেন্স ঠিক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন৷ আর আমরা গবেষণায় দেখেছি, বাংলাদেশে ছেলে শিশুর প্রতি আগ্রহ বেশি৷ ফলে এভাবে হলে এক সময় নারীর সংখ্যা কমে যাবে৷ আর এখন যেহেতু ছোট পরিবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, একটি সন্তানও নেন কোনো দম্পতি৷ সেক্ষেত্রে গর্ভেই লিঙ্গ পরিচয় জেনে ছেলে সন্তান নিলে তা আরো বৈষম্য তৈরি করবে৷ আর নারী কমে গেলে নারী পাচার বাড়বে৷”
তিনি জানান , "এই গাইডলাইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের৷ আর মেডিকেল রিজনে গর্ভের সন্তানের পরিচয় জানা যাবে৷ তবে সেটা আবেদনের ভিত্তিকে জাষ্টিফাই হতে হবে৷ ফার্টিলিটি সেন্টারে সন্তান নিতে গিয়ে কোনো দম্পতি যদি ছেলে ভ্রুণ পছন্দ করেন, তাহলে তো সেটাকে মেডিকেল রিজন বলা যাবে না৷”

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ