আগামী জুন মাসে রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে যাচ্ছে৷ তার আগে মে মাসে রাশিয়াতেই শুরু হচ্ছে পথশিশুদের বিশ্বকাপ৷ ২৪টি দেশের দু'শোর বেশি শিশু এতে অংশ নেবে৷
বিজ্ঞাপন
এবার তৃতীয়বারের মতো এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ এর আগে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিলে এই বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছিল৷
প্রথম বিশ্বকাপের দলগুলো ছেলে আর মেয়েদের একসঙ্গে করে তৈরি করা হয়েছিল৷ পরের বিশ্বকাপে ছেলে আর মেয়েদের আলাদা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ সেবার ছেলেদের বিভাগে বুরুন্ডিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঞ্জানিয়া৷ আর মেয়েদের গ্রুপে সেরা হয়েছিল ব্রাজিল৷ তারা ১-০ গোলে ফিলিপাইন্সকে হারিয়েছিল৷
পথশিশুদের অধিকার সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন করতে এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড’৷ খেলার পাশাপাশি ঐ সময়ে শিশুদের অধিকার নিয়ে সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে৷
মেক্সিকো দলের আফগান প্রশিক্ষক
এবারের পথশিশু বিশ্বকাপে ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ ২৪টি দেশ অংশ নিচ্ছে৷ মেক্সিকোর নারী দলের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন খালিদা পপাল৷ একসময় তিনি আফগানিস্তানের নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন৷ সেসময় নারী ও মেয়েদের মধ্যে ফুটবল প্রসারে কাজও করেছেন৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে পুরুষদের বাধার মুখে পড়েছিলেন৷ পুরুষরা বলতেন, ফুটবল মেয়েদের খেলা নয়, মেয়েদের উচিত রান্নাঘরে থাকা আর বাসনকোসন ধোয়া৷ এরপর একসময় তালেবানের হুমকি পেয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন পপাল৷ এখন বাস করছেন ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে৷ সেখানে ‘গার্ল পাওয়ার অর্গানাইজেশন’ নামে একটি সংগঠন চালু করেছেন৷ এই সংস্থা ফুটবল ও খেলাধুলার মাধ্যমে অভিবাসী, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষসহ সংখ্যালঘুদের সমাজে ভালোভাবে ‘ইন্টিগ্রেটেড’ হতে সহায়তা করে৷ এছাড়া পথশিশুদের বিশ্বকাপের আয়োজক স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড-এর দূত হিসেবেও কাজ করছেন পপাল৷
তাঁর এখনকার জীবনযাপনের সঙ্গে পথশিশুদের জীবনের মিল খুঁজে পান পপাল৷ ‘‘পরিবার, পরিচয়, নেটওয়ার্ক ছাড়া বাস করার মানে আমি জানি,’’ বলেন তিনি৷ প্রশিক্ষণ নেয়া মেয়েদের জন্যও পপালের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে৷ ১৫ বছরের জাজমিন বলছে, ‘‘তাঁর (পপাল) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেকটা আমাদের মতো৷ খুবই কঠিন৷ কিন্তু তারপরও তিনি এগিয়ে গেছেন, এবং আমার মতো, ফুটবলার হতে চেয়েছেন৷’’
জাজমিনসহ প্রায় একশোর বেশি শিশুকে সহায়তা দিয়ে থাকে মেক্সিকোর বেসরকারি সংস্থা ‘কাসা আলিয়াঞ্জা’৷ এদের অনেকেই সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও পাচারের শিকার হয়েছে৷ বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া নারী দলের সদস্যরা এই সংস্থা থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে৷
জাতিসংঘের হিসেবে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় দেড়শ মিলিয়ন শিশু রাস্তায় বাস করছে৷
জেডএইচ/ডিজি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
মারাদোনার খেলা দেখে পানির উপর মাঠ তৈরি!
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পানির উপর ভাসমান ফুটবল মাঠ তৈরি করেছিল একদল থাই কিশোর৷ পরের ইতিহাস জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
জেলেদের গ্রাম
ছবিতে চারদিক পানি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম দেখতে পাচ্ছেন৷ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পানইয়ে দ্বীপের এই গ্রামের বাসিন্দাদের আয়ের উৎস একসময় ছিল মাছ ধরা৷ এখন তাতে যোগ হয়েছে পর্যটন৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
পানির উপর মাঠ!
পানইয়ে দ্বীপে পর্যটকদের আগমনের পেছনে আছে দারুণ এক কাহিনি৷ ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে দ্বীপের একদল কিশোরের মনে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে৷ কিন্তু কোথায় খেলবে? তাদের আশেপাশে শুধু পানি আর পানি৷ অবশেষে সেই পানির উপরই মাঠ তৈরির পরিকল্পনা করে তারা৷
ছবি: Youtube/TMBbrand
বয়স্করা পাত্তা দেননি
ঐ কিশোররা যখন পানির উপর মাঠ বানানোর পরিকল্পনার কথা বড়দের জানায়, তখন শুরুতে সেটি অলীক কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তাতে দমে যায়নি অল্পবয়সি ঐ তরুণেরা৷ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পুরনো কাঠ আর পেরেক জোগাড় করে নিজেরাই একটি মাঠ তৈরি করেছিল ঐ কিশোররা৷ ছবিতে ঐ মাঠ তৈরিতে ব্যবহৃত আসল কাঠ, পেরেক আর হাতুড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FIFA Museum
মাঠের সমস্যা
কিশোরদের তৈরি করা ঐ মাঠের বিভিন্ন জায়গায় পেরেক থাকায় সাবধানে দৌঁড়াতে হতো৷ তবে সবচেয়ে বেশি সাবধানে থাকতে হতো বল নিয়ে, খুব নজর রাখতে হতো যেন বল পানিতে না পড়ে৷ কিন্তু তা কী আর হয়৷ চারদিকে পানি থাকায় প্রায়ই বল সেখানে চলে যেতো৷ ফলে বারবার পানি থেকে বল উঠিয়ে এনে খেলা শুরু করতে হতো৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ
একদিন ঐ কিশোরদের একজন স্থানীয় এক ফুটবল প্রতিযোগিতার খবর নিয়ে আসে৷ তারা সেখানে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই খবরে গ্রামের বয়স্করা তাদের উৎসাহ দিতে এগিয়ে আসে৷ তাদের জন্য জার্সি আর অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
সাফল্য
একদিনের ঐ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠেছিল পানইয়ে দ্বীপের কিশোররা৷ কর্দমাক্ত মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে গিয়েছিল তারা৷ পরে হাফটাইমের পর বুট ছাড়াই মাঠে নামে তারা৷ ঐ অবস্থায় খেলে দুই গোল শোধও করেছিল কিশোররা৷ কিন্তু শেষ মিনিটের গোলে হেরে যায়৷ তবে সেমিফাইনালে ওঠায় ঐ কিশোররা তো বটেই, পানইয়ে গ্রামের সব মানুষই খুব খুশি হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
ফুটবল ক্লাব
প্রতিযোগিতায় সাফল্যের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷ গ্রামবাসীর সহায়তা নিয়ে সেখানে আরেকটি মাঠ গড়ে তোলা হয়েছিল৷ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ঐ মাঠটি ছিল মসৃণ৷ বর্তমানে পানইয়ে ক্লাব দক্ষিণ থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা একটি ক্লাব৷ দলের কয়েকজন খেলোয়াড় প্রফেশনাল ফুটবলারও হয়ে উঠেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা
টিএমবি নামে থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংক তার কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক একটি গল্প খুঁজছিল৷ সেই সময় তারা পানইয়ে ক্লাবের সন্ধান পায়৷ পরে সেই গল্প নিয়ে একটি শর্টফিল্মও নির্মাণ করে টিএমবি ব্যাংক৷ এটি বিভিন্ন জায়গায় পুরস্কারও পায়৷ এই শর্টফিল্মের কারণে পানইয়ে দ্বীপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে৷ পর্যটকরা এখন সেখানে যাচ্ছেন৷ শর্টফিল্মটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Archambault
ফিফার নজর
পানইয়ে ক্লাবের গল্প ফিফা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে৷ তাইতো সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত ফিফা জাদুঘরে (ছবি) দর্শণার্থীদের সেই গল্প শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷