মোটরগাড়ির বদলে ‘রোটর-গাড়ি' চলে বাতাসের শক্তিতে৷ জার্মানির কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগে তাই নিয়ে গবেষণা চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
তাদের ‘হাওয়াগাড়ি'-র গুণাগুণ বিশ্লেষণ করার জন্য কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী উইন্ড টানেল ব্যবহার করে থাকেন৷ সে উইন্ড টানেল আবার ঠিক জার্মানির মাঝখানে৷
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চান, কী ধরণের বাতাস থাকলে তাঁদের ‘হাওয়াগাড়ি' সবচেয়ে জোরে চলে৷ সেজন্য ‘হাওয়াগাড়ির' এক একটি যন্ত্রাংশের এয়ারোডাইনামিক্স বুঝে, অপরাপর যন্ত্রাংশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে৷ উইন্ডমিলের মতো এখানেও রোটর ব্লেডস বা পাখাগুলো কিরকম, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর ইয়ান ভাইচার্ট জানালেন, ‘‘আজ আমরা উইন্ড টানেলে রোটর ব্লেডগুলো টেস্ট করছি৷ আমরা দেখতে চাই, বাতাসের গতি কতটা হলে, গাড়ি সবচেয়ে ভালো চলে৷''
উইন্ড টানেলে প্রস্তুতি চলেছে পুরোদমে৷ বাস্তব পরিস্থিতিতে এখন দেখা যাবে, রোটর ব্লেডগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা৷ ইঞ্জিনিয়াররা নিজেরাই একক অংশগুলো ডিজাইন করেছেন৷ তাঁদের মাপজোক সব ঠিক ছিল তো? রোটরগুলোর আকার বা আকৃতি? গবেষকরা গত পাঁচ বছর ধরে এই ‘হাওয়াগাড়ি' তৈরির চেষ্টায় আছেন৷
পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ি
গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি এখন দু’টি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ প্রথমত, কত কম জ্বালানি খরচ করবে, দ্বিতীয়ত, এ গাড়ি কতটা পরিবেশবান্ধব৷ হাইব্রিড গাড়ি পরিবেশ বান্ধব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাইব্রিড গাড়ির পাশে ম্যার্কেল
দু বছর আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই গাড়ি প্রদর্শনীতে জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি ডাইমলার-এর সিইও ডিটার সেচে-র সঙ্গে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷ তাঁরা দাঁড়িয়েছেন কিন্তু মার্সিডিজের এফ ১২৫ মডেলের হাইব্রিড গাড়ির সামনে৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
বিএমডব্লিউ-র নতুন উপহার
জার্মানির আরেক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউ৷ গত মাসে হয়ে গেল ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রদর্শনীর ৬৫তম আয়োজন৷ সেখানে বিএমডব্লিউ-র হাইব্রিড গাড়ির নবতম সংযোজন ইড্রাইভ এক্সফাইভ মডেলটিও ছিল৷
ছবি: JOHANNES EISELE/AFP/Getty Images
পর্শে-র গর্বিত সিইও
ভালো কিছু উপহার দিতে পারলে কে না খুশি হয়! মাটিয়াস ম্যুলারও খুব খুশি৷ এবারের ফ্রাঙ্কফুট প্রদর্শনীর আকর্ষণ বাড়িয়েছে পর্শে ৯১৮ স্পাইডার হাইব্রিড গাড়ি৷ পর্শে কোম্পানির সিইও মাটিয়াস ম্যুলার-কে তাই দেখা গেল নতুন মডেলের পরিবেশবান্ধব গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ছবি তুলতে৷
ছবি: Reuters
ফলক্সভাগেনের হাইব্রিড
জেনেভার গাড়ি প্রদর্শনীতে নিজেদের সেরা হাইব্রিড গাড়িটি পাঠাতে চায় বলে গত মার্চে ছোট আঙ্গিকের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল জার্মানির ফলক্সভাগেন৷ সেখানে এভাবেই হাজির করা হয় এক্সএলওয়ান মডেলের হাইব্রিড গাড়িটি৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
হোটেলে হাইব্রিড গাড়ি
টোকিওর হোটেলেও দেখা গেল হাইব্রিড গাড়ি৷ নতুন গাড়ি খদ্দেরদের দেখাতে ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে হাজির করা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ জাপানের হন্ডা কোম্পানি টোকিওর এক হোটেলে এই গাড়িটি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাংহাইয়ের প্রদর্শনীতে...
দু বছর আগের শাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক গাড়ি শিল্প প্রদর্শনী৷ সেদিন ছিল ‘মিডিয়া ডে’৷ গণমাধ্যমের শত শত ক্যামেরা সামনে হাজির লেক্সাস ইএস২৪০ মডেলের হাইব্রিড গাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
সামনে থেকে যে বাতাস আসছে, তার জোরেই গাড়ি চলবে – অর্থাৎ সেই বাতাস থেকে যতটা সম্ভব শক্তি সঞ্চয় করতে হবে৷ টেস্ট চলাকালীন ধীরে ধীরে উইন্ড টারবাইনের স্পিড বাড়ানো হলে দেখা গেল, হিসেব মিলে যাচ্ছে: রোটরগুলো ক্রমেই আরো জোরে ঘুরছে আর আরো বেশি এনার্জি সৃষ্টি করছে৷ হাওয়াগাড়ি তৈরি হলে, সেই এনার্জিতে গাড়ির চাকা ঘুরবে৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর পেটার সাফারচিক গর্ব করে বললেন, ‘‘আমাদের এই ‘বালটিক থান্ডার' গাড়ি হলো বিদেশে যা ‘জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং' বলে পরিচিত, ঠিক তাই: সহজ কিন্তু পোক্ত!''
উইন্ড টানেলের টেস্ট সফল হয়েছে৷ এবার যন্ত্রাংশগুলো ঠিকমতো জোড়া দিয়ে সম্পূর্ণ গাড়িটা তৈরি করে দেখতে হবে, সেটা রাস্তায় কিরকম চলে৷ উইন্ড হুইল, ফাইবারগ্লাসের বডি আর সাইকেলের চাকা জুড়ে তৈরি এই হাওয়াগাড়ি৷ একটু ঠেলে দিলেই চারচাকার এই উইন্ডমিলটি আপনা থেকে চলতে থাকে, বাতাসের মুখে, বাতাসের জোরে৷ আবিষ্কারকরা খুশি৷ বাকি থাকল সামনের প্রতিযোগিতা৷ সেখানে কি কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিততে পারবেন?
সব সিদ্ধান্ত নেবে গাড়ি!
এমন গাড়ির কথা তো শুনেছেন যা আপনাআপনি চলে, কোনো চালক লাগেনা? সেসব গাড়িতে সব সিদ্ধান্ত কে নেয়? মানুষ, নাকি গাড়ি?
ছবি: media.daimler.com
চালক ছাড়া ৬০০ মাইল
এ বছরের শুরুর দিকে এই আউডি-৭ গাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি থেকে নিজে নিজেই পৌঁছে যায় ৬০০ মাইল দূরের লাস ভেগাসে৷ সাবধানের মার নেই- ভেবে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে একজন বসেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁকে কিছুই করতে হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Fets/Audi AG
চালকের আসনই নেই!
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কেমন হতে পারে তার একটা নমুনা মার্সিডিজ বেঞ্জের এই এফ০১৫ মডেল৷ গাড়িতে চালকের আসন নেই৷ যাত্রীদের আসনগুলোই মুখোমুখি৷ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি এ গাড়ি রাস্তায় নামলে ঘণ্টায় ১২৫ মাইল বেগে ছুটতে পারবে৷
ছবি: media.daimler.com
অস্থির লোকদের জন্য নয়
যাঁরা সবসময় শুধু দ্রুতই ছুটতে চান তাঁদের জন্য কিন্তু এই গাড়ি নয়৷ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বিপদ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে যে-কোনো মুহূর্তে গতি মন্থর করবে৷ সামনের গাড়ি বা অন্য কোনো বাহন থেকে নিরাপদ দূরত্বও বজায় রাখবে সবসময়৷
ছবি: imago/Jochen Tack
একে অন্যকে অনুসরণ করবে
মিউনিখে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুটি গাড়ি৷ প্রথমটিকে দ্বিতীয়টি সবসময় পেছন থেকে অনুসরণ করবে- এমন প্রতিযোগিতা৷ পেছনের গাড়িটি কিন্তু একবারও নিয়ম অমান্য করেনি!
ছবি: DW
দুর্ঘটনা এড়ানো
অনেক সময় চালক সামনের পথ না দেখেও যখন দ্রুত গাড়ি চালাতে যান তখনই দুর্ঘটনা ঘটে৷ কুয়াশায় ঢাকা পথ, কিংবা প্রবল বর্ষণের মধ্যে প্রায়ই এমন হয়৷ কিন্তু রোবোটিক গাড়ির বেলায় কখনো এমন হবেনা৷ এ গাড়ি নিজেকে যেমন সামনের গাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবে, তেমনি পেছনের গাড়িকেও সতর্ক করবে৷ ভবিষ্যতে এমন গাড়ি তৈরি করা হবে যে গাড়ি সামনে যে বাধা আছে সে খবর পেছনের গাড়িকেও জানিয়ে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব তথ্যের জন্য আলাদা আলাদা সেন্সর
রোবোটিক গাড়ি তার চারপাশের সবকিছু আলাদা আলাদা চোখ দিয়ে দেখে৷ চোখের কাজটা করে সেন্সর৷ গুগল কার-এ থাকে এই ধরণের লেজার সেন্সর যার মাধ্যমে চারপাশের সবকিছুর ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটে ওঠে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
লেজার স্ক্যানারের চোখে....
জার্মান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গাড়িটি কেমন দুর্গম পথ দিয়ে চলছে দেখুন! চলতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছেনা৷ লেজার স্ক্যানার চার পাশটাকে স্ক্যান করছে, কম্পিউটার ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিচ্ছে আর তা দেখে দেখে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
মেড ইন জার্মানি
ডাইমলারের গবেষকরা নিরাপদ গাড়ি তৈরির জন্য অপটিক্যাল ক্যামেরাও ব্যবহার করছেন৷ উইন্ডশিল্ডের পেছনের সেন্সরটা রাস্তায় কী ঘটছে তা দেখে৷ গাড়ি চালনার এই নিরাপদ ব্যবস্থা ২০১১ সালে জার্মানির সেরা উদ্ভাবনের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
পথচারীদের ভাবনা কম
কম্পিউটার গাড়িকে জানায় চারপাশের কোন বস্তু কোন দিকে যেতে পারে৷ গাড়ি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়৷ ছবির এই গাড়ির সামনের পথচারী ডান দিক থেকে রাস্তা পার হচ্ছেন৷ তাঁকে কমলা রংয়ে আর ডান দিকের গাড়িগুলোকে সবুজ রংয়ে দেখানো হচ্ছে, যার অর্থ, এখন কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই৷