মোদীকে হারাতে বিরোধী জোটের প্রয়াস শুরু হয়েছে। সেখানে মমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে মত যশবন্ত সিনহার।
বিজ্ঞাপন
কাজটা এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সব বিরোধীদের একজোট করার কাজ। সেই কাজে অন্য অনেকের মতো আছেন সাবেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। ডয়চে ভেলেকে যশবন্ত জানিয়েছেন, ''২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা বড় ভূমিকা পালন করবেন।''
যশবন্তের দাবি, কেন্দ্রীয় স্তরে তার মতো বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা সক্রিয়। আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে সমস্যা নেই। অন্যতম প্রবীণ বিরোধী নেতা শরদ পাওয়ার এবং শিবসেনা নেতা ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এখন মমতার সঙ্গে আছেন। অখিলেশের সঙ্গেও মমতার ভালো সম্পর্ক। যশবন্ত বলেছেন, ''বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির একজোট হতে কোনো অসুবিধা হবে না। প্রশ্নটা কংগ্রেসকে নিয়ে। কংগ্রেসকেও বোঝানোর কাজ চলছে।''
যশবন্ত জানিয়েছেন, ''বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেস একমাত্র জাতীয় দল। বাকিরা সকলেই মূলত আঞ্চলিক দল। ফলে কংগ্রেস কীভাবে এই জোটে আসবে, কী শর্তে আসবে, সেসব তাদের ঠিক করতে হবে।'' যশবন্তের দবি ''মমতার সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক খুবই ভালো। সোনিয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে খুবই স্নেহ করেন। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলার কাজটা মমতাও করতে পারেন।''
যশবন্ত মনে করেন, ''বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির প্রায় সাড়ে তিনশ লোকসভা আসনে প্রভাব রয়েছে। তাই কংগ্রেস আঞ্চলিক দলের জোটকে উপেক্ষা করতে পারবে না। আর তাদের যে অবস্থা, তাতে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটে যেতে হবে।''
সরকার বিরোধী জোরদার আন্দোলনের চেষ্টায় কংগ্রেস
করোনা রুখতে প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ অভিযোগ করে আন্দোলনে কংগ্রেস। অন্য বিরোধীদেরও সঙ্গে নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কংগ্রেসের অভিযোগ
সম্প্রতি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সেখানে করোনা রুখতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সোচ্চার হয় কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলের দাবি, সরকার চিকিৎসা দিতে পারছে না, ভ্যাকসিন দিতে পারছে না, মৃতদের সম্মান দিতে পারছে না। উল্টে ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে।
ছবি: picture-alliance/dpa
বিরোধীদের চিঠি
গত ১২ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন ১২টি বিরোধী দলের নেতা। চিঠিতে সই করেছেন সোনিয়া গান্ধী, দেবগৌড়া, শরদ পাওয়ার, মমতা বন্দগ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, এম কে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেন, ফারুক আবদুল্লা, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, ডি রাজা ও সীতারাম ইয়েচুরি। চিঠিতে বেকারদের ভাতা, সকলকে বিনা পয়সায় টিকা সহ আটটি সুপারিশ করা হয়েছে। উপরের ছবিটি ২০১৯ সালে বিরোধী নেতাদের বৈঠকের।
ছবি: Ians
অধীরের চিঠি
সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি(পিএসি)-র প্রধান হলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, কমিটি ভ্যাকসিন নীতি নিয়ে আলোচনা করতে চায়। স্পিকার যেন এই বিষয় নিয়ে সংসদ ভবনে পিএসি-র বৈঠক ডাকার অনুমতি দেন অথবা ভার্চুয়াল বৈঠক করার বিষয়ে সায় দেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সোচ্চার প্রিয়ঙ্কা
উত্তর প্রদেশের বালিয়া ও গাজিপুরে গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহ, উন্নাওতে বালিতে পুতে রাখা লাশ নিয়ে সোচ্চার হলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তার প্রশ্ন, উত্তর প্রদেশে এসব কী হচ্ছে! অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন তিনি।
ছবি: Getty Images/AFP
অমিত শাহের বিরুদ্ধে
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে নিখোঁজ ডায়েরি করেছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই। এই ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাগেশ কারিয়াপ্পার বক্তব্য, ''এই সংকটের সময়ে রাজনীতিকদের উচিত নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া। পালিয়ে যাওয়া নয়।'' তার অভিযোগ, করোনাকালে অমিত শাহকে কোথাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
ছবি: DW/M. Kumar
রাহুলের অভিযোগ
কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী সম্প্রতি টুইট করে বলেছেন, ''ভ্যাকসিন, অক্সিজেন এবং ওষুধের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও উধাও হয়ে গেছেন। আছে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্প, ওষুধের উপর জিএসটি এবং এখানে ওখানে প্রধানমন্ত্রীর ছবি।'' কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্প হলো, নতুন সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ও বিভিন্ন মন্ত্রক মিলিয়ে বিশাল একটি প্রকল্প, যা করোনাকালেও চালু আছে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
নাড্ডার জবাব
কংগ্রেসকে জবাব দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। তিনি সোনিয়া গান্ধীকে চার পাতার চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তার অভিযোগ, কংগ্রেস ও তার মুখ্যমন্ত্রীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কংগ্রেস বলছে, টিকা নিয়ে মোদী দায়িত্ব এড়াচ্ছেন। কিন্তু কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাই চেয়েছিলেন, টিকার বিষয়টা রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিতে।
ছবি: IANS
7 ছবি1 | 7
অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে সাবেক আইএফএস অফিসার যশবন্তের প্রভাব ছিল খুবই বেশি। কিন্তু মোদী-শাহের আমলে তিনি শুধু বিদ্রোহী নন, এখন তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যশবন্ত চান, বিজেপি-র বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী দাঁড় করানো হোক। তাহলেই বিজেপি-কে হারানো সহজ হবে। তার কাছে, প্রথম পরীক্ষা হলো উত্তর প্রদেশে।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ উত্তর প্রদেশে বিধানসভার নির্বাচন। যশবন্তরা চাইছেন, সেখানে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিরোধী জোট প্রার্থী দিক। সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বে বিরোধীরা একজোট হোক। যদি বিএসপি না আসে, তা হলে বাকিরা একজোট হোক।
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ছোট দলগুলিকে নিয়ে জোট করতে আগ্রহী। মায়াবতীর দলের সঙ্গে তিনি হাত মেলাতে চান না। যশবন্তরা চাইছেন, কংগ্রেস সহ বাকি দলগুলিকে নিয়ে চলুন অখিলেশ। সে ব্যাপারে কথাও হচ্ছে।
তবে এখনই বিরোধী জোটের নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না যশবন্ত। তিনি শুধু বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জোটে বড় ভূমিকা থাকবে। তাঁর কথায়, ''তৃণমূল এখনো সর্বভারতীয় পার্টি নয়। তবে কংগ্রেস, শিবসেনা সহ অনেক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে মমতার খুবই ভাল সম্পর্ক আছে।''