পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে করেন যে ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী বেশি সুবিধাজনক৷ তাই, দেশটিতে বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনে মোদীর বিজেপি দল পুনরায় জিতলে অসন্তুষ্ট হবেন না তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ইমরান খান জানিয়েছেন যে ভারতের পরবর্তী সরকারের নেতৃত্বে যদি বর্তমান বিরোধী দল কংগ্রেস আসে তাহলে তা দেশটির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ইতিবাচক ফল নাও আনতে পারে৷ তিনি মনে করেন, বিতর্কিত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে দলটি ভয় পেতে পারে, কেননা তখন ডানপন্থিরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷
বিদেশি সাংবাদিকদের এক ছোট্ট দলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ডানপন্থি দল বিজেপি যদি নির্বাচনে জেতে তাহলে হয়ত কাশ্মীর ইস্যুতে একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে৷''
গত আগস্টে পাকিস্তানের দায়িত্ব গ্রহণ করা খান মনে করেন, বর্তমানে কাশ্মীরে বসবাসরত মুসলমানরাসহ সামগ্রিকভাবে গোটা ভারতে মুসলমানরা যে বিপুল উন্মত্ততার শিকার হচ্ছেন তাসত্ত্বেও মোদী পুনরায় ক্ষমতায় আসলে একটি সমাধানে হয়ত পৌঁছানো যাবে৷
তিনি বলেন, ‘‘ভারতে এই মুহূর্তে যা ঘটছে তা আমি কখনও দেখার আশা করিনি৷ মুসলমানিত্ব হামলার শিকার হচ্ছে৷''
খান জানান একসময় যে মুসলমানরা ভারতে সন্তুষ্ট ছিলেন এখন তারাও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷
ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন যে ট্রেন
ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের গল্প কে না জানে৷ কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াও যে এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সে সম্পর্কে জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
সমঝোতা না বন্ধুত্ব?
শিমলা চুক্তির পর ১৯৭৬ সালে শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে অমৃতসর ও লাহোরের মধ্যে চালু হয় এই ট্রেন৷ ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটি ২০০৬ সালে ‘থর এক্সপ্রেস’ চালু হবার আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র ট্রেন ছিল৷ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ও পাকিস্তান রেলওয়ের যৌথ প্রকল্পের ফল এই ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
দিল্লি দূরে নয়
দুই দেশের মধ্যে মাত্র ৫২ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেয় এই ট্রেনটি৷ লাহোর থেকে দিল্লি ছাড়া এই ট্রেনটি থামে পাকিস্তানের মুঘলপুরা ও জাল্লো’তে৷ ওয়াগাহ-আটারি সীমান্তে সম্পন্ন হয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ৷ এরপর, ট্রেনটি ভারতে প্রবেশ করলে থামে খাসা, ছেহেরতা ও অমৃতসর স্টেশনে৷
ছবি: Imago/Xinhua
সময়সূচি
যখন প্রথম চালু হয় এই ট্রেন, তখন প্রতিদিন চলত এটি৷ কিন্তু বর্তমানে সপ্তাহে দুইবার, বুধবার ও রবিবারে দিল্লি ও লাহোর থেকে ছাড়ে এই ট্রেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
কত দীর্ঘ এই ‘সমঝোতা’?
সাধারণত, চার থেকে আট কামরার হয় গাঢ় সবুজ ও নীল রঙের এই ট্রেনটি৷ বিশেষ উৎসবের মরসুমের সময় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন, কত দীর্ঘ হবে ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
বন্ধুত্বে ব্যাঘাত
এখন পর্যন্ত, মোট তিনবার বন্ধ রাখা হয়েছে সমঝোতা এক্সপ্রেস৷ প্রথমবার ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদভবনে হামলার পর বন্ধ করা হয় এই ট্রেন চলাচল৷ এরপর ২০০৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নিহত হবার পর বন্ধ হয় সমঝোতা৷ এরপর ফেব্রুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ফলে বন্ধ করা হলেও এখন আবার চালু হয়েছে এই পরিষেবা৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
সমঝোতায় সন্ত্রাসী হামলা
২০০৭ সালে পানিপতের কাছে এই ট্রেনে বোমা হামলার হয়৷ এতে ৭০ জন পাকিস্তানি নাগরিকসহ মারা যান কয়েকজন ভারতীয় সৈনিক৷ আহত হন শতাধিক মানুষ৷ ২০০৯ সালে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলার সাথে জড়িত বলে জানায় অ্যামেরিকা৷ কিন্তু ২০১০ সালের ভারতের জাতীয় সুরক্ষা এজেন্সির অনুসন্ধানকারী দল জানায় যে, এর মূল প্রণেতা হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য স্বামী অসীমানন্দ৷ এই দায় পরে স্বীকার করেন তিনি৷
ছবি: AP
বিপাকে সমঝোতা
২০১২ সালের ৮ অক্টোবর এই ট্রেন থেকে একশ কিলো হেরোইন ও পাঁচশ রাউন্ডেরও বেশি বুলেট উদ্ধার করে পাকিস্তানের পুলিশ৷ দিল্লিগামী এই ট্রেন থেকে পাওয়া হেরোইনের দাম ছিল প্রায় ৫০৫ কোটি ভারতীয় রুপি৷
ছবি: AP
টালবাহানার সমঝোতা
এখনও চলছে ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলার তদন্ত৷ আসলেই কে দোষী, তা স্পষ্ট নয়৷ অনেকেই ইঙ্গিত করেন, রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়েছে এই রেলসংযোগকে৷ তবুও, ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে আসা-যাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এই বিশেষ ট্রেনটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sharma
8 ছবি1 | 8
তিনি মনে করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো মোদীও ‘ভয় এবং জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে' পুঁজি করে ভোটারদের কাছে টানতে চাইছেন৷
এক্ষেত্রে জম্মু এবং কাশ্মীরের মানুষদের একটি বিশেষ অধিকার কেড়ে নিতে চলতি সপ্তাহে ভারত সরকারের প্রস্তাবিত একটি বিলের কথাও উল্লেখ করেন খান৷ গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীর অঞ্চলে সেখানকার বাসিন্দা নন এমন কারো জমি কেনার অধিকার ছিল না৷ এখন সেই নিয়মে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে মোদী সরকার৷ তবে, এটি নির্বাচনের আগে ভোটারদের মন জয়ের একটা ফন্দি হতে পারে বলেও মনে করেন খান৷
ভারতকে শান্তির বার্তা দিতে সুনির্দিষ্ট এক ঘোষণাও দিয়েছেন ইমরান খান৷ তিনি জানিয়েছেন যে পাকিস্তানভিত্তিক সব বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে নিবৃত্ত করতে বদ্ধপরিকর ইসলামাবাদ৷ আর এই কাজে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীও সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন যোগাচ্ছে৷ কাশ্মীরে যেসব গ্রুপ সক্রিয় আছে তাদেরও একইভাবে শেষ করে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদে রূপ নেয়া এই প্রধানমন্ত্রী৷