ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরবিরোধী বিক্ষোভে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের গুলিতে চারজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং রবিবার সারাদেশে পূর্ণদিবস হরতাল আহ্বান করেছে বলে জানান হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী৷
‘হাটহাজারীতে নিহত চারজনের লাশ পাওয়া গেছে’: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
হেফাজতে ইসলাম নিহতদের পাঁচজনকেই তাদের কর্মী বলে দাবি করেছে৷ হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি দাবি করেন, তারা সবাই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন৷
হাটহাজারীতে নিহত চারজনের লাশ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী৷ আরো এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি জানান৷ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যাল বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি৷ হাটহাজারী থানার ডিউটি অফিসার প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘কতজন মারা গেছে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ জুমার নামাজের পর মোদীবিরোধী হেফাজতের লোকজন বেলা আড়াইটার দিকে থানায় হামলা করে৷ তখন হতাহতের ঘটনা ঘটে৷''
তবে মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার পর থানায় হামলা করা হয়৷ তার আগে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হয়েছে৷ তখন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি৷ আর ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে পুলিশি হামলার প্রদিবাদে তারা মিছিল বের করেছিল৷
‘কতজন মারা গেছে সেই তথ্য আমাদের কাছে নাই’: প্রদীপ দাস
এদিকে হাটহাজারীতে চারজনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মাদ্রাসা ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে৷ সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী জানান, তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে৷ এরপর সদর পুলিশ ফাঁড়ির কাছে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন৷ নিহত ব্যক্তি একটি ওয়ার্কশপের কর্মী৷ তবে মাওলানা নোমান ফয়েজী দাবি করেন, ছাত্ররা বিক্ষোভ করার সময় তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়৷
ঢাকায় জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় হেফাজতের কর্মীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ পুলিশের সাথে লাঠি নিয়ে বহিরাহতরাও অংশ নেয়৷ সন্ধ্যার পর যাত্রাবড়িতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে মাদ্রাসা ছাত্র ও হেফাজত কর্মীরা৷ সেখানেও পুলিশ গুলি করেছে বলে দাবি করেন মাওলনা আজিজুল হক ইসলামাবাদী৷
বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িকতা ও একজন মোদী
দিল্লির ঘটনার পর আবারো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করছেন অনেকে৷ সেই মোদীই আসছেন মুজিববর্ষের অন্যতম অতিথি হিসেবে৷ অথচ বঙ্গবন্ধু পরিচিত ছিলেন তাঁর অসাম্প্রদায়িক নীতির জন্য৷
ছবি: bdnews24
জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনা
অনেকেই বলেন, মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবার থেকে এলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচিতিকে (ভাষা ও ঐতিহ্য) বড় করে দেখেছেন৷ ‘বাঙালি’ শব্দটিই ছিল জাতীয়তাবাদের একটি অসাম্প্রদায়িক পরিচয়৷ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর যে বিষয়টি আমাকে অনুপ্রাণিত করে তা হলো, কেমন করে মুসলিম লীগের ছাত্রনেতা থেকে তিনি বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের নেতা বনে গেলেন৷’’
ভারতের সাংবাদিক পিকে বালাচন্দ্রন তাঁর একটি লেখায় লিখেছেন, ‘‘মুজিবের অসাম্প্রদায়িক চেতনা কিন্তু ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়৷ তাঁর কাছে অসাম্প্রদায়িকতা ছিল সব ধর্মের মানুষের মাঝে একতা৷’’ তিনি আরো লিখেছেন, একইভাবে মহাত্মা গান্ধীও ভাবতেন৷ গান্ধী হিন্দু ধর্ম পালন করলেও সব ধর্মের মানুষের নেতা ছিলেন৷
ছবি: Journey/M. Alam
ভিন্নতায় মিল
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেছেন, ‘‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) ভিন্নতার মাঝে মিল তৈরি করেছেন এবং জাতীয়তাবাদ ও ধর্মকে এক করেছেন৷’’
ছবি: bdnews24
অসাম্প্রদায়িক জয় বাংলা শ্লোগান
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘‘অনেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘বুর্জোয়া নেতা’ বলতে চাইলেও তিনি কিন্তু এলিট শ্রেণির বিরুদ্ধে ও শোষিতের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, তিনি ধর্মীয় রাজনীতিকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে পরিণত করেছেন এবং অসাম্প্রদায়িক শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ তৈরি করেছেন, যা আমাদের মুক্ত দেশের প্রথম দিককার শব্দ৷’’
ছবি: Journey/M. Alam
নরেন্দ্র মোদীর ‘সাম্প্রদায়িকতা’
২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাঁধে৷ সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর হিন্দু উগ্রবাদীদের হামলায় শত শত মুসলিম নিহত হন৷ অনেক হিন্দুও তাতে মারা যান৷ অভিযোগ আছে, রাজ্য সরকারের মদদে এই হামলা চালানো হয়৷ তখন বিজেপি ক্ষমতায় এবং নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ তখন থেকেই মোদী সাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে একেবারে খোলাখুলি অভিযুক্ত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP
‘ফ্যাসিস্ট’
ঘটনা চলাকালীন বিখ্যাত লেখক অরুন্ধতী রায় বলেন, ‘‘এটা মানতেই হবে, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের মদতে পুষ্ট জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়া জনতাই প্রথম হামলা চালিয়েছিল৷ পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে বা অনেক ক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগে সাহায্য করেছে৷ মারধর করেছে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবকদের৷ আমরা জানি সেই যুবকদের মধ্যে একজন মারা গেছেন৷ হিংসায় নিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু-মুসলিম সবাই ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের শিকার৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দ্বিচারিতা?
ভারতীয় গীতিকার জাভেদ আখতার বার বার মোদীর সমালোচনা করেছেন সিএএ-এনআরসি নিয়ে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি বলছে তাঁরা প্রতিবেশী দেশের খ্রিস্টানদের নাগরিক করবে৷ আর বেঙ্গালুরুতেই যিশুর মূর্তি গড়তে বাধা দিচ্ছে তাঁরা৷ অসাধারণ! গোটা বিষয়টাই অর্থহীন৷’’
ছবি: Reuters/A. Dave
‘বরং হিংসা ছাড়ুন’: রাহুল
গেল রোববার নরেন্দ্র মোদী টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব থেকে বেরিয়ে যাবার চিন্তা করছেন৷ এর জবাবে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আপনি সামাজিক গণমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নয়, বরং হিংসা ছাড়ুন৷’’